শেয়ার বাজারে অনেক সময় গুজব ছড়ায় কেন

শেয়ার বাজারে অনেক সময় গুজব ছড়ায় কেন

শেয়ার বাজারে অনেক সময় গুজব ছড়ায় কেন

শেয়ার বাজারে অনেক সময় গুজব ছড়ায় কেন

চাঁদ, ইমেয়েন, গাম্বিয়া, ভাটিকান সিটি সহ ৭/৮টা দেশে শেয়ার বাজার নেই। এছাড়া বিশ্বের সকল দেশে শেয়ার বাজার আছে। মূলত “শেয়ার বাজার” এই শব্দ আমাদের দেশে প্রচলিত হয়ে আসছে, এর আসল নাম হবে পুঁজিবাজার বা স্টক মার্কেট।

যাই হোক পুঁজিবাজার বা শেয়ার বাজার যেই নামেই ডাকি না কেন এর মূল কার্যক্রম ৩টি। শেয়ার কেনা, দাম বাড়ার জন্য অপেক্ষা করা এবং বিক্রি করা। তবে ৩টি কার্যক্রম এর মধ্যে গুজব বা rumor একটি অংশ।

শুধু আমাদের দেশ না, বিশ্বের সকল দেশেই শেয়ার বাজারে নানা রকম rumor থাকে। তবে এই rumor কখনই ভালো কিছু বহন করে না। বর্তমান সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন গুজব বন্ধের জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহন করেছে এবং আগের থেকে অনেকটাই কমেছে।

গুজব সকল দেশে কম বেশি থাকলেও আমাদের দেশে এর প্রভাব কিছুটা বেশি, এর পিছনে অন্যতম কারন বিনিয়োগ শিক্ষার অভাব। যখন বিনিয়োগ শিক্ষা না থাকবে তখন একজন বিনিয়োগকারী খুব সহজেই গুজবের  ফাদে পা দিয়ে টাকা লস করে।

ছোট একটা উদাহরন দেই। আমাদের দেশের শেয়ার বাজারে বর্তমানে জেড ক্যাটাগরির ৩৩টা কোম্পানি আছে।

আপনারা জানেন, যে সব কোম্পানি লং টাইম ধরে উৎপাদন নেই বা এজিম করে না, কোনো বোনাস দেয় না এরা এই জেড ক্যাটাগরির শেয়ার। এই ৩৩টা কোম্পানি একই রকম খারাপ না।

কিছু কোম্পানি সামনে ভালো করার সুযোগ আছে, আবার কিছু কোম্পানি আরোও খারাপ করতে পারে।

এখন এই অবস্তায় যদি কোনো একটা কোম্পানিকে শেয়ার বাজার থেকে ডিলিস্ট করে দেয়, তবে এর প্রভাব অন্য কোম্পানির মধ্যে পরবে। তখন বাজারে গুজব হয় যে, অন্য কোম্পানিও ডিলিস্ট করে দিবে।

এখানে আমরা যেই ভুল করি তা হলো সেই গুজবে কান দিয়ে আমার হাতে থাকা সম্ভাবনাময় শেয়ারটি বিক্রি করে দেই।

যেই জেড ক্যাটাগরির কোম্পানি ডিলিস্ট হয়েছে এর কারনে গুজবে পরে অন্য শেয়ার সেল করে দিলে তা নিজেরই ক্ষতি। হত্যা মামলার আসামির সাথে ডাব চুরির আসামীকে মিলালে হবে না।

এখন কথা হচ্ছে, নানা রকম গুজব কারা ছড়ায়?

এর সহজ উত্তর, যাদের স্বার্থের সাথে জড়িত তারাই ছড়ায়। গুজব দুই ধরনের হয়, এক শেয়ারের দাম বাড়ানোর জন্য, অন্যটি কমানোর জন্য।

অনেকের ধারনা এই রকম যে, যা কিছু রটে তার কিছুটা হলেও তো সত্য। তবে শেয়ার বাজারে এই রকম অনেক গুজব আসে যার সাথে সত্যিকারের কোনো মিল নেই।

কিছু সাধারন সিস্টেম অনুসরন করে আপনি এই গুজব থেকে মুক্তি পেরে পারেন। প্রথমত মার্কেট বোঝার চেষ্টা করতে হবে।

এটি একদিনেই হয় না, মার্কেট এর সাথে লেগে থাকতে হবে। আপনি যেই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে চান তাদের সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব বিস্তারিত জানার চেষ্টা করতে হবে।

মূলত যখন একটা শেয়ারের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যায় তখন ভালো কিছু গুজব বাজারে আসে।

ধরুন, একটা কোম্পানি দাম ১ মাস আগে ছিল ২০ টাকা এবং এখন ৩৫ টাকা, তখনই কিছু মানুষ গুজব ছড়ায় এই শেয়ারের দাম ৫০ টাকা হয়ে যাবে।

সামনে ভালো ডিভিডেন্ট দিবে, এই কোম্পানি অন্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করবে, বড় বিনিয়োগকারী এই শেয়ার কিনতেছে, EPS অনেক ভালো আসবে ইত্যাদি নানা বিষয়।

যখন একটা শেয়ারের দাম হুট করেই অনেক বেড়ে যায় এবং সুনির্দিষ্ট কারন ছাড়াই তখন আমাদের উচিৎ হবে সেই কোম্পানি এড়িয়ে চলা।

আরো পড়ুন – ২০২১ সালে Mutual Fund এ বিনিয়োগে কেমন ছিল

অনেকে চলন্ত ট্রেনে উঠতে চায়। ধরুন আপনার বাসা থেকে রেল স্টেশন এর দুরুত্ব ৫ কিলোমিটার কিন্তু রেল লাইন আপনার বাসার সামনে দিয়েই গেছে, এই অবস্থায় আপনি চিন্তা করলেন শুধু শুধু রেল স্টেশন যাওয়ার দরকার কি, বাসার সামনে দিয়ে যখন ট্রেন যাবে তখন লাফ দিয়ে উঠে পরবেন।

স্বাভাবিক ভাবেই এতে অনেক ঝুঁকি থাকে। ঠিক তেমনি কিছু বিনিয়োগকারী অতিমুল্যায়িত শেয়ার এই বিবেচনায় কিনে যে, ২০ টাকার শেয়ার এখন ৩৫ টাকা তাহলে ৫০ টাকাও হতে পারে। আর সেই সুযোগ নেয় কিছু অসাধু বিনিয়োগকারী।

আবার যখন একটা ভালো শেয়ার যুক্তিযুক্ত কারনেই দাম বাড়ে তখন সেই শেয়ারের দাম কমানোর জন্য নানা রকম নেতিবাচক কথা বাজারে ছড়িয়ে দেয়।

মনে রাখবেন আপনি যখন বিনিয়োগ করবেন এর ঝুঁকি আপনাকেই নিতে হবে। তাই গুজবে কান না দিয়ে নিজের মেধা ও বুদ্ধি খাটিয়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করুন।

যেই শেয়ার নিয়ে কম মানুষ কথা বলে, ১ বছরের সর্বনিন্ম দামে পরে আছে, ফান্ডামেন্টালী ভালো সেই শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারলে লাভ কম আসতে পারে, একই সাথে ঝুঁকিও অনেক কম থাকে। শেয়ার বাজার লাভ করার জায়গা, লোভ করার স্থান না।