শেয়ার বাজারে তথ্যের বিকল্প নেই

শেয়ার বাজারে তথ্যের বিকল্প নেই

পুঁজিবাজার যাকে আমরা শেয়ার বাজার নামেই চিনি, এই পুঁজিবাজার হল বাজার বা পুঁজিবাদী অর্থনীতির আসল ভিত্তি। এ বাজার বাদ দিয়ে একটা বাজার অর্থনীতির অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। আমাদের অর্থনীতিকে পুঁজিবাজারমুখী করতে অনেক সময় লস করে ফেলেছি। পুঁজির জন্য ব্যাংকগুলোর ওপর অতি নির্ভরতা আমাদেরকে বিপদের অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছে।

ইদানিং কালে পাকিস্থানের পুঁজিবাজারের সাথে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের তুলনা করা হচ্ছে। এর কারন হলো করাচী স্টক এক্সচেঞ্জের ইনডেস্ক প্রায় ৫৩০০০+ আর আমাদের ৬০০০ ঘরে বসে আছে।

যদিও পাকিস্তানের অর্থনীতির আকার বাংলাদেশের অর্থনীতির আকারের চেয়ে ছোট। কিন্তু ওদের করাচি স্টক এক্সচেঞ্জ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে সমৃদ্ধ। এর মূল কারণ হল, করাচি স্টক এক্সচেঞ্জে বেশ কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি তালিকাভুক্ত আছে, যেগুলো ঢাকার শেয়ারবাজারে নেই।

উদাহরণস্বরূপ- ইউনিলিভার, নেসলে, সিমেন্স, পালমোলিভ, সানোফি-অ্যাভেনটিস ইত্যাদি। অথচ এসব কোম্পানি আমাদের অর্থনীতিতেও ভালো ব্যবসা করছে, শুধু তারা আমাদের শেয়ারবাজারে নেই।

সরকার এসব ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এমনিতেই ঘুরে দাঁড়াতো। শেয়ার বাজারে ভালো কোম্পানির গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। কিছু খারাপ কোম্পানি তালিকাভুক্ত থাকার কারনে আমাদের পুঁজিবাজারে দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পিছিয়ে আছে।

এছাড়া আমাদের বিনিয়োগকারীগন অন্যদেশের থেকেও নানা দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে। বিনিয়োগ করা মানে রিস্ক নেওয়া, বর্তমান সময়কে কাজে লাগিয়ে সামনের দিনগুলোতে ভালো কিছু আশা করা। মার্কেট যখন ভালোর দিকে যায় তখন সব বিনিয়োগকারী বাজারে হুমড়ি খেয়ে পরে, আর যখন মার্কেট ডাউন থাকে তখন মুখ ফিরিয়ে নেয়। প্রকৃত পক্ষে হওয়া উচিৎ এর উলটো, যারা এই উলটো বা বিপরীত পথে চলতে পারে তারাই ভালো করে।

একজন বিনিয়োগকারী হিসাবে আপনার টাকা আছে, আপনি শেয়ারে বিনিয়োগ করতেই পারেন। ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিন, অল্প-বিস্তর টেকনিক্যাল এনালাইসিস করলেন কিন্তু সঠিক তথ্যের অভাবে আপনি ক্ষতির মধ্যেও পড়তে পারেন।

আমাদের দেশের শেয়ার বাজারে তথ্যের অভাব নেই, তবে এই তথ্যগুলো সঠিক কিনা আমরা যাচাই-বাছাই করি না। সম্প্রতি সময়ে অনেক বিনিয়োগকারির সাথে আমার ফোনে ও সরাসরি কথা হয়েছে তাদের মধ্যে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারি শেয়ার বাজারে লসে আছে এর অন্যতম কারন সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারনে।

যেমন অনেকেই ব্রোকার হাউসের ট্রেডারের উপর নির্ভর করে শেয়ার বাই/সেল করে লসে করছে। আপনি যখন শেয়ার বাজারে লেনদেন করবেন তখন দেখবেন তথ্য দেওয়ার লোকের অভাব হবে না, তবে সঠিক তথ্যের বড়ই অভাব।

অনেক বিনিয়োগকারী সব-সময় রানিং আইটেম বা গ্লামিং শেয়ার খুঁজে বেড়ায়, তাদের ধারনা একটা গ্লামিং শেয়ার কিনতে পারলে অনেক টাকা লাভ করবে কিন্তু এটা মাথায় রাখে না যে, একবার ধরা খেলে তার পুঁজি অর্ধেকও হতে পারে। শেয়ার বাজারে সঠিক তথ্যের বিশ্বস্ত মাধ্যম হলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইট। তবে সমস্যা হলো তারা যথেষ্ট ধীরগতির। আশা করছি এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে।

সামগ্রীক ভাবে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে ভালো করতে চাইলে আপনাকে বাজারের সাথে আপটু-ডেট থাকতে হবে। কোন কোম্পানির কি আয় করছে, নতুন কি ব্যবসা করছে, কোম্পানির পরিচালক শেয়ার কিনছে বা বিক্রি করছে এই সকল বিষয় জানতে হবে।

এখন মার্কেট লেনদেন শুরু হয় সকাল ১০টা বাজে। সাড়ে নয়টা থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ওয়েবসাইটে কোম্পানির নিউজ গুলো প্রকাশ করে থাকে। এই সকল খবরগুলো প্রতিনিয়ত নজর রাখতে হবে। যে কোনো কোম্পানির শেয়ার কেনার আগে যতটা সম্ভব সেই কোম্পানি নিয়ে তথ্য জানতে হবে।

যেমন, কোম্পানির পরিচালকগন কেমন, তাদের শেয়ার হোল্ডিং কত পারসেন্ট, তাদের আর কি ব্যবসা রয়েছে। তাদের কোম্পানিটি নিয়ে সম্ভাব্য পরিকল্পনা কি, ইত্যাদি নানা বিষয়। দেখুন তথ্যের শেষ নেই, তবে সেই তথ্যটি হতে হবে যথেষ্ট সঠিক। শেয়ার বাজারে নিয়ে দেশের প্রথম সারির নিউজ পত্রিকা ও খবরের চ্যানেলগুলোকে আরো মনোযোগী হতে হবে।

কোন নায়িকা কি করল, বা কোন নায়ক কোন ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হলো এর থেকে আমার শেয়ার বাজার কম গুরুত্বপূর্ণ না। একজন বিনিয়োগকারী হিসাবে যখন আপনি কোনো তথ্য পাবেন তখনই তা যাচাই করতে হবে। তথ্যের সত্যতা মিললে বিনিয়োগে যেতে পারেন।

কে এম চিশতি সিয়াম

01929216782