তরুন বয়সে ধনী হওয়ার ৭টি পূর্বশর্ত

তরুন বয়সে ধনী হওয়ার ৭টি পূর্বশর্ত

তরুন বয়সটি আসলেই বেশ কঠিন একটি সময়। বড় হয়েও যেন বড় নয় এমন একটি ভাব। আবার ক্রমাগত দায়িত্ব বেড়ে যাওয়া বেশ চাপের হয়ে পড়ে অনেকের কাছে। কি করবো সেটি ভেবে উঠতেই অনেকটা সময় কেটে যায় আমাদের।

নিজের চারপাশকে কেন্দ্র করে বেশ টানাপোড়ান চলে। তবে এই সময়টা কিন্তু নিজেকে গড়ে তোলার আদর্শ সময়। আমাদের সবাইকে সংগ্রাম করতে হয় । কারো হয়তো একটু বেশি সময় লাগে সফল হয়ে উঠতে, কারো কিছুটা কম। তবে চেষ্টার ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে সফলতা আসবেই।

তরুন বয়সেই ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপ, জীবন নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরবর্তী সময়ের জীবনে বিশেষ প্রভাব ফেলে। যেমন তরুন বয়সেই কিন্তু নির্ধারণ করতে হয় এত এত কাজের মধ্যে আপনি জীবনে কি কি কাজ করবেন। সময়ের সাথে কাজের পরিধি বাড়ে তবে জীবনের মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয় আগেই।

তরুণ বয়সেই ধনী হয়ে উঠতে পারেন যদি সঠিক নির্দেশনা বা পরিকল্পনা তৈরী করে নিতে পারেন। তরুন বয়সে ধনী হয়ে উঠার ৭টি গোপন সূত্র নিয়ে আমার আজ আলোচনা করবো।

১। গড়িমসি করবেন না, আজ মানে এখনই! 

তরুনদের সবচেয়ে বেশি দূর্বলতার বিষয় হলো তারা মনে করেন হাতে প্রচুর সময় আছে। এই প্রচুর সময়টাই তাদের পিছিয়ে দেয় অনেকটা। বৃদ্ধ বয়সে আপনি যদি ধনী হতে চান তবে এমন ভাবতে পারেন তবে সেক্ষেত্রেও এই চিন্তা সঠিক নয়। আপনি যদি তরুন বয়সে ধনী হয়ে উঠতে চান তবে সবসময় মনে করবেন হাতে সময় খুব অল্প।

তরুনদের সহজাত প্রবনতার কয়েকটি উদাহরণ হলো, মাত্র উপার্জন শুরু করেছি সঞ্চয় আরো পরে করবো, এই মাসে নয় সামনের মাসে সঞ্চয় করবো, বিনিয়োগ সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করি তারপর বিনিয়োগ করবো, অভিজ্ঞতা নাই তাই বিনিয়োগে ভয় পাই ইত্যাদি। এই ধরণের  নানান চিন্তা তাদের আরো পিছিয়ে দেয়। অভিজ্ঞতা কখনোই হবে না যদি আপনি শুরু না করেন।

একটি মাস পিছিয়ে দেওয়ার অর্থ আপনি আরো ৩০ টা দিন পিছিয়ে গেলেন আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য। আপনি তরুন বলে আপনার হাতে অফুরন্ত সময় আছে এমন ধারণা থাকলে তরুন বয়সে আপনি কখনোই সম্পদশালী হতে পারবে না।

২। সফল হওয়ার জন্য কোন জাদুকাঠি নেই

সফল হওয়ার ছেলের হাতের মোয়া নয়। পরিশ্রম ছাড়া আপনাকে কেউ সফল করতে পারবে না। এই লেখার টাইটেল দেখেই কেউ ভাবতে পারেন নিশ্চয় কোন ম্যাজিক আছে, কোন এক জাদুর বলে রাতারাতি আপনি ধনী হয়ে উঠবেন। সত্যিই এমন কোন ম্যাজিক নেই।

ধনী হওয়ার বেসিক সূত্র বলা যেতে পারে এমন যে, আপনাকে আপনার খরচের অতিরিক্ত আয় করতে হবে এবং বাকি অতিরিক্ত টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এখন কোথায় এবং কিভাবে আপনি বিনিয়োগ করবেন সেই সিদ্ধান্ত একান্তই আপনার। বিনিয়োগ করতে হবে ভাবনা চিন্তার করে।

আপনার কষ্টের টাকা থেকে একটি ভাল ফলাফল আপনি যেন পান তাই বিনিয়োগ করুন বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে। আপনি কোন ম্যাজিকের মাধ্যমে ধনী হয়ে উঠবেন না একথা সত্যি। তবে পরিশ্রম এবং কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে সফল হবেন নিশ্চিত।

আয় বৃদ্ধি করা, খরচ কমানো এবং ভাল বিনিয়োগ আপনাকে তরুন বয়সে সম্পদশালী কাে তুলতে পারবে।

৩। নিজেকে সমৃদ্ধ করুন

নিজেকে  সবসময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং দামী ভাববেন। আপনি থাকলেই সব থাকবে, আপনি নেই তো কোন কিছুই নেই। সুতরাং নিজেকে সমৃদ্ধ করে তুলুন। নিজের উপর বিনিয়োগ করতে কখনোই ভাববেন না।

নিজের দক্ষতা বৃদ্ধিও জন্য লাগাতার চেষ্টা করুন। নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য ভাল পুষ্টিকর খাবার, ব্যায়াম ইত্যাদি বিলাসিতা নয় বরং প্রয়োজন। আপনি যত ভাল থাকবেন তত বেশি কাজ করতে পারবেন, এগিয়ে যেতে পারবেন।

নিজের পড়ালেখার পিছনে সময় এবং অর্থ ব্যয় করুন, দক্ষতা বৃদ্ধি করুন এবং এমন মানুষের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করুন বা নতুন নতুন যোগাযোগ তৈরী করুন যারা আপনাকে ভবিষ্যৎতে লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করতে পারে। শিক্ষা, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা আপনার অর্থনেতিক স্বাধীনতার অন্যতম হাতিয়ার।

৪। বাজেট তৈরী করুন

বাজেট বিহীন ভাবে একসময় চলার জন্য তরুন বয়সে আপনাকে বাজেট করে চলতে হবে, খরচের লাগাম টেনে ধরতে হবে। আপনি যত খরচ বাড়াবেন, খরচ ততই বারবে। যেমন আপনি যত খাবেন পাকস্থলি ততই বড় হবে। এটি সহজ সূত্র। সুতরাং নিজের নিয়মিত এবং প্রয়োজনীয় খরচ নিয়ে বাজেট তৈরী করুন।

সেই নির্দিষ্ট বাজেটে মানিয়ে নেওয়া অভ্যাস করুন। প্রথমে একটু কষ্ট হলেও পরবর্তী সময়ে দেখবেন অভ্যাস হয়ে যাবে।

মনে রাখবেন পূর্বে উল্লেখিত সেই সহজ সূত্র, আয় বেশি, খরচ কম এবং বিনিয়োগ করতে হবে বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে। যত কম আপনি খরচ করবেন, তত বেশি টাকা আপনি বিনিয়োগে নিয়ে আসতে পারবেন এবং তত এগিয়ে যাবেন।

পড়তে পারেনঃ টাকা ধরে রাখার ৭ টি উপায়

৫। ঋণ পরিশোধ করুন

আমাদের সকলেরই লোন বা ঋণ আছে। কারো ঋণের পরিমান বেশি, কারো বা কম। তবে নিয়মিত সঞ্চয় বা বিনিয়োগের আগে ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া একটি ভাল সিদ্ধান্ত হতে পারে।

কারণ ঋণকে কেন্দ্র করে সুদ সহ নিয়মিত ইন্সটলমেন্ট থাকবে আবার সময় মতো পরিশোধ না করতে পারলে সুদ সহ চাপ বাড়বে যা আপনার জন্য ভাল হবে না। সুতরাং যতদ্রুত  সম্ভব ঋণসমূহ পরিশোধ করাই শ্রেয়। প্রয়োজনে ঋণ নিতে হলেও পরিশোধ করার পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মনোযোগী হন।

৬। ঝুঁকি নিতে হবে কিন্তু কতটা!

সফল হওয়ার অন্যতম সূত্র ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা থাকতে হবে। ঝুঁকি ছাড়া আপনি কখনোই ধনী হয়ে উঠতে পারবেন না। অন্যরা যা করছে আপনিও যদি তাই করেন তবে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা পাবেন, কিন্তু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হয়তো পাবেন না।

আবার ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে বলে অকারণ ঝুঁকি নেওয়া বা বোকার মতো ঝুঁকি নেওয়াও যাবে না। কতটা ঝুঁকি নিলে আপনি সেই ধাক্কা সামলে উঠতে পারবেন সেই বিষয়ে ভাবুন এবং চিন্তা করুন।

ঝুঁকি নিরূপন বা বিশ্লেষন পূর্বক নেওয়া উচিত। আরোও পড়ুন – অধিক টাকা আয় করার জন্য কিভাবে নিজেকে মোটিভেট রাখা যায়

৭। বৈচিত্রতা রাখুন

ঝুঁকি নেওয়া সফলতার যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, তেমনই একটি বিষয় বৈচিত্রতা। একটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের চেয়ে বরং কয়েকটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন ভাল। কাজের বৈচিত্রতা একঘেয়েমী দূর করে আপনাকে প্রানবন্ত রাখবে অনেকটা। আবার অনেক আয়ের মাধ্যম আপনাকে সফল হতে সাহায্য করবে।

সুতরাং তরুন বয়সে বৈচিত্র্যময় কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত করতে পারলে অনেক কিছু শিখতে পারবেন, একই সাথে লাভবান হতে পারবেন।

একটি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ কখনোই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আবার শুধু চাকুরী দিয়ে অনেক সম্পদশালী হয়ে ওঠা বেশ কঠিন। সুতরাং আয়ের মাধ্যমগুলোতে বৈচিত্রতা আনুন, কাজের মধ্যে বৈচিত্রতা রাখুন। পড়ুন – ধনী ও সফল ব্যক্তিদের যেসকল গুণ তাদের সম্পদ ধরে রাখতে সাহায্য করে

ধনী হওয়ার কোন সহজ সূত্র নাই।

কঠোর পরিশ্রম দিয়েই আপনাকে সফলতার সিঁড়ি পার হতে হবে। তরুন বয়সেই আপনি চাইলে ধনী হতে পারেন নিজের চেষ্টার ফলে।

মনে রাখতে হবে, যখন অন্য কেউ ঘুমিয়ে আছে তখন আমি কাজ করছি আর তাই আমি তার থেকে বেশি ভাল কিছু প্রত্যাশা করছি। দুজন ব্যক্তি যদি একই কাজ একই রকমভাবে করে তবে ফলাফলের ভিন্নতা আশা করা বোকামি।

আপনি যখন কোনকিছু ভিন্ন ভাবে পরিকল্পনা করে, ভিন্ন ভাবে করার চেষ্টা করবেন তখনই আপনি ভিন্ন ফল পাবেন। ধনী হওয়ার জন্য বয়সের অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই বরং প্রয়োজন সঠিক ভাবে নিজের সময়, মেধা এবং শক্তিকে কাজে লাগানো।