কেন আমি মিউচুয়াল ফান্ড পছন্দ করি

শেয়ার বাজারের অন্যতম উপাদান মিউচুয়াল ফান্ড। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন থেকে অনুমোদিত যৌথ স্কীম এই মিউচুয়াল ফান্ড।

 

বর্তমানে প্রায় ৩০টি অধিক মিউচুয়াল ফান্ড শেয়ার বাজারের মূল মার্কেট এ লেনদেন হয়। এর মধ্যে সর্বনিন্ম দামে আছে FBFIF যার দাম ৫টাকা আর সর্বোচ্চ দামে আছে 1STPRIMEMF যার ১৫ টাকা।

 

প্রায় ৮০% মিউচুয়াল ফান্ড ফেইসভেলু ১০ টাকার নীচে লেনদেন হয়। ২০২২ সালে সকল মিউচুয়াল ফান্ড কম বেশি ডেভিডেন্ট দিয়েছে।

 

উল্লেখ করা দরকার এই যে, একটা মিউচুয়াল ফান্ডের লাভের সর্বনিন্ম ৭০% ক্যাশ বোনাস দেওয়ার আইন আছে। ধরুন একটা মিউচুয়াল ফান্ড যদি ১০০ টাকা একবছরে লাভ করে তবে ৭০ টাকা তার ইউনিট হোল্ডারদের ক্যাশ বোনাস দিতে হবে।

 

অনেক বিনিয়োগকারী মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে চায় এই বিবেচনায় যে, মিউচুয়াল ফান্ড খুব একটা বাড়ে না। এই ধারনা আংশিক সত্যি। কেননা মিউচুয়াল ফান্ডগুলো অন্য শেয়ারের মত বেশি প্রাইজে উঠা নামা করে না।

 

তবে সঠিক ভাবে কেনা বেচা করতে পারলে কম ঝুঁকিতে এর থেকে ভালো বিনিয়োগ আছে বলে আমার মনে হয় না। ব্যক্তিগত ভাবে আমি মিউচুয়াল ফান্ড দারুন ভাবে পছন্দ করি। কেননা, মিউচুয়াল ফান্ড কোনো একটা প্রোডাক্ট না যে, আগুনে পুরে যাবে, পানিতে ডুবে যাবে, কারখানায় আগুন লাগবে। এই সকল বিষয় থেকে মিউচুয়াল ফান্ড মুক্ত।

মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে একজন বিনিয়োগ কারী দুই ভাবে লাভ করতে পারে। যেমন, ডেভিডেন্ট থেকে আয় এবং ক্যাপিটাল গেইন থেকে প্রফিট। তবে এই ইনকাম বা আয়কে আরো বাড়াতে কিছু কোশল গ্রহন করা যেতে পারে।

 

যেমন কোনো একজন বিনিয়োগকারী যদি ১৪/১৫ মাসের জন্য একটা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে তাহলে সে এই ১৪/১৫ মাসে দুইবার বোনাস পাবেন। গড়ে একটা মিডিয়াম রেঞ্জের মিউচুয়াল ফান্ড ৭% বোনাস দিয়ে থাকে।

 

যদি আপনি ৭% বোনাস পান, মানে হলো প্রতি ফান্ডের বিপরীতে ৭০ পয়সা। ১৪/১৫ মাসে দুই বার বোনাস এবং বছরে যদি ২/১ বারও যদি ১০/১২% ও ক্যাপিটাল গেইন আসে তাহলে প্রায় ২৫% রিটান পাওয়া যায়।

 

আমি যেই হিসাব দিলাম, এটা কম করেই বলা হয়েছে, সঠিক ভাবে মানি ম্যানেজমেন্ট করতে এর থেকেও বেশি আশা করা যাবে। মিউচুয়াল ফান্ডের আরেকটা সুবিধা হলো, কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু মিউচুয়াল ফান্ড কোনো কোম্পানি না, এটি একটা ফান্ড, যার একটা মেয়াদ আছে।

 

বর্তমানে যতগুলো ফান্ড বাজারে আছে এর মধ্যে ২০২৬ সালের আগে মেয়াদ শেষ হওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। মেয়াদ শেষ হলে, NAV বা নেট এসেট ভেলু হিসাব করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে টাকা ভাগ করে দেওয়া হয়। সেই বিচারেও মিউচুয়াল ফান্ড অন্যকিছুর থেকে এগিয়ে। এছাড়া মিউচুয়াল ফান্ডের বড় একটা ইনকাম হয় আইপিওর মাধ্যমে। যখন একটা কোম্পানি বাজারে আইপিওর মাধ্যমে আসে, সেই আইপিওতে আবেদন করার জন্য মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য একটা আলাদা কোটা থাকে।

 

বছরে ৭/৮টা আইপিও যদি আসে তাহলে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো সেখান থেকে ভালো পরিমান টাকা আয় করতে পারে। বিগত বছরগুলোর মধ্যে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো সব থেকে বেশি আয় করতে পেরেছিল রবি কোম্পানির আইপিওর মাধ্যমে। বর্তমানে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো খুবই অবমুল্যায়িত অবস্থায় আছে, প্রায় ৯৫% ফ্লোর প্রাইজে আছে।

 

এই অবস্থায় মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারীগন কিছুটা অস্থির মধ্যে থাকলেও আশা করা যায় খুব দ্রুত মিউচুয়াল ফান্ডের সুদিন ফিরে আসবে।

 

সকল শ্রেনী মানুষের জন্য মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা উত্তম, তবে বিশেষ ক্ষেত্রে যারা ব্যাংক বা সঞ্চয়পত্রে টাকা রেখে ইনটারেস্ট খেয়ে থাকে তাদের জন্য মিউচুয়াল ফান্ড সব থেকে বেশী ভালো কেননা বর্তমান ইনটারেস্ট এতটাই কম যে, মুদ্রাস্ফিতি এর থেকে প্রায় দ্বিগুণ।

আমাদের সবার বিনিয়োগ ভালো থাকুন, আল্লাহ হাফেজ.

K M Chisty Shiam (01929216782, whatsapp)