Money Management বা অর্থ ব্যবস্থাপনার ৭টি সেরা উপায়

অর্থ ব্যবস্থাপনার ৭টি সেরা উপায়

Money Management বা অর্থ ব্যবস্থাপনা আমাদের কাছে অন্যতম কঠিন বিষয়। প্রতিনিয়ত চলার পথে, জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে, প্রতিদিনের নানান কর্মকান্ডের মাঝে যখন নিজের জন্য একটু সময় বের করা বেশ কষ্টদায়ক, সেখানে অর্থ ব্যবস্থপনা বেশ কঠিনই মনে হয়। তবে বিষয়টি কিন্তু তেমন জটিল নয়। প্রয়োজন একটু পরিকল্পনা এবং সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন।

একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, আমার সুদিনে লোকের অভাব না হলেও. দূর্দিনে কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এটাই কঠিন বাস্তবতা। আর তাই আমাদের উপার্জনের মধ্য দিয়েই আমাদের ভবিষ্যৎ এর প্রস্তুতি নিতে হবে।

অতিরিক্ত আয় করলেই একমাত্র Money Management বা অর্থ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন বা সম্ভব বিষয়টি তেমন না। বরং আপনার আয় যত সামান্যই হোক না কেন আপনি যদি সঠিক ভাবে আপনার অর্থ ব্যবস্থাপনা করতে পারেন তবে অন্য যে কারো থেকে আপনি নির্দিষ্ট আয় দিয়েই আরো অনেক ভালো ভাবে চলতে পারবেন।

আসুন জেনে নেই Money Management বা অর্থ ব্যবস্থাপনা ৭টি অসাধারণ উপায়।

১। আপনার কাছে কোন কোন বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ সেটি প্রথমে জানুন

ব্যক্তিভেদে আমাদের আগ্রহ আলাদা আলাদা হয়। কারো কাছে যেমন গল্পের বই পড়তে ভাল লাগে, কেউ আবার গাছ লাগাতে ভালবাসেন। যেমন কারো ফিট থাকা প্রিয়, কেউবা আবার খেতে অনেক বেশি ভালবাসেন।

সুতরাং ব্যক্তির রুচি, বয়স, লিঙ্গ, সামাজিক অবস্থান, অর্থ, পছন্দ এবং অপছন্দের উপর তার জীবনযাপনের ধরন নির্ভর করে অনেকটা। Money Management বা অর্থ ব্যবস্থাপনা এর ক্ষেত্রে আপনার সর্বপ্রথম ধাপ হবে আপনার কাছে কোন কোন বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ জানা।

কিছু জিনিস অন্যের কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ হলেও আপনার কাছে সেটি ভীষণ প্রয়োজনীয় হতে পারে। জোর করে সেটি বাদ দিতে চাইলে মানি ম্যানেজমেন্ট বা অর্থ ব্যবস্থাপনা বিষয়টি বেশি দিন ধরে রাখতে পারবেন না। মনে রাখবেন আপনি একজন আলাদা ব্যক্তিসত্তা।

তাই অন্যের ভাল-লাগা, মন্দ-লাগার উপর আপনার জীবন নির্ভর করবে না। বরং আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন। যদি আপনার মনে হয় এটি বাড়তি খরচ কিন্তু আপনি ত্যাগ করতে পারবেন না তবে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে বিষয়টিকে এমন পর্যায় নিয়ে আসুন যা আপনার জন্য ক্ষতিকর নয়।

যেমন ধরুন- আপনার রেস্টুরেন্টের খাবার খুব ভাল লাগে। আপনি সপ্তাহে ৪/৫ বার রেস্টুরেন্ট খেতে চান। অনেকে এটি ফালতু খরচ বললেও নতুন নতুন খাবার টেস্ট করা আপনার কাছে আনন্দের।

সেক্ষেত্রে প্রথম সপ্তাহে ৪ বারের জায়গায় ৩ বার রেস্টুরেন্টে যান পরের সপ্তাহে ২ বার। এভাবে নিজেকে শৃংঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসুন নিজেকে কষ্ট না দিয়েই।

২। খরচ নিদিষ্ট করুন

কিছু খরচ আমাদের জন্য একদম বাঁধা। যা চাইলেও আমরা কমাতে পারি না। যেমন, প্রতিদিন আপনার অফিস যেতে আসতে ৩০ টাকা খরচ হয়। এই ৩০ টাকা কমানোর কোন উপায় কিন্তু নাই।

আবার খাবারের জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমান খরচ আপনাকে করতেই হবে। ইলেকট্রিক বিলসহ নানান কিছুর বিল আপনার নির্দিষ্ট খরচ।

সুতরাং এই সব খরচ নির্দিষ্ট করুন এবং তার টাকা আগেই সরিয়ে ফেলুন। জীবনকে বাঁধাগ্রস্থ করা অর্থ ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য নয়, বরং জীবনকে আরো সহজ করে তোলাই অর্থ ব্যবস্থাপনার কাজ।

৩। খরচের হিসাব রাখুন

আপনি যখন টাকা বে-হিসাবী খরচ করবেন তখন খরচের কোন মাত্রা থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। আবার হিসাব করে খরচ করলে আপনি নিজের অজান্তেই সচেতন হয়ে পড়বেন এটাও স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। আমরা আমাদের সকল অর্থ বিষয়ক লেখায় বা ভিডিওতে এই বিষয়টি বারবার উল্লেখ করে থাকি।

আপনি সারাদিনে শেষে বাসায় বসে মাত্র ৫ মিনিট সময় বের করে খরচের হিসাব রাখতে শিখলে অচিরেই এর ফল হাতে পাবেন। খরচের হিসাব আমাদের বুঝিয়ে দেয়, আমরা কোথায় কত টাকা খরচ করছি।

কোনটা বাজে খরচ, কোনটি অতিরিক্ত খরচ। নিয়মিত হিসাব রাখতে পারলে আপনি নিজের খরচ নিজেই নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন এবং মানি ম্যানেজমেন্ট করতে সক্ষম হয়ে উঠবেন। ১ টাকা হোক আর ১০০ টাকা প্রতিটি টাকার হিসাব রাখুন।

৪। পরিকল্পনা করুন

আপনি জানেন আপনার আয় কত। আপনি এটিও জানেন আপনার খরচ কত। তবে এবার পালা পরিকল্পনা করার কিভাবে আপনি খরচের পাশাপাশি নিজের ভবিষ্যৎ এর জন্যও একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা করতে পারেন।

যেমন: আপনি জিমে যেতে চান, আপনার ফিট থাকতে ভাল লাগে। যদি আপনার অফিস বা কোনো ক্লাব আপনাকে ফ্রি জীমের সুযোগ দেয় তবে সেটি নিতে দ্বিধাবোধ করবেন না। মনে রাখবেন আপনি নিশ্চয় সেটি কোন না কোন উপায় তা অর্জন করেছেন।

সুতরাং সেটি ব্যবহার করার মধ্যে কোন লজ্জা নাই। আবার কোন শপে ডিসকাইন্ট অফার থাকলে সেখান থেকে কেনাকাটা করুন। এতে কিছুটা সাশ্রয় হবে। কোন কোন শপে নির্দিষ্ট ব্যাংকের কার্ডে ডিসকাউন্ট থাকে।

আপনার যদি সেই ব্যাংকে একাউন্ট থাকে তবে সেই সুযোগটি নিতে ভুল করবেন না। এভাবে আপনি অনেক টাকা অতিরিক্ত খরচ থেকে বাঁচাতে পারবেন।  তাই এই বিষয়ে পরিকল্পনা করুন।

৫। একটি পরিকল্পনায় আবদ্ধ থাকুন

নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস, ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস। আমাদের জীবনও এমন। আমাদের সব সময় মনে হয় অন্যের জিনিসটা বেশি ভাল।

আপনার যদি Money Management বা অর্থ ব্যবস্থাপনা এর নিদিষ্ট কোন পরিকল্পনা থাকে, কিংবা সঞ্চয়ের জন্য কোন পরিকল্পনা থাকে যেটি আপনার খুব ভাল কাজ করছে তবে সেই পরিকল্পনা অব্যাহত রাখুন।

অন্যেরটা আরো ভাল, অনেক টাকা জমিয়ে ফেলছে ভেবে নিজের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে দিবেন না। তার জীবনের চাহিদা আর আপনার চাহিদা এক নয়। বিষয়টি বুঝে শুনে আগানো ভাল।

আপনার যদি বিষয়টি ভাল লাগে তবে সেটি নিয়ে ভাবুন, আপনি কতটা সেটি গ্রহণ করতে পারবেন এবং বজায় রাখতে পারবেন সেই বিষয়ে ভেবে দেখুন। নতুন একটি পরিকল্পনায় যাওয়ার আগে কেন সেই পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন তার যথাযথ কারণ থাকা আবশ্যক।

৬। তাৎক্ষণিক প্রয়োজনের বিষয়টি মাথায় রাখুন

যত পরিকল্পনা করি না কেন, জীবন পরিবর্তনশীল। সময়ের সাথে সাথে যেমন মানুষের প্রয়োজন, চাহিদা বদলে যায় ঠিক তেমনি হঠাৎ হঠাৎ বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে যায় আমাদের জীবনে। যার নিয়ন্ত্রন আমাদের হাতে থাকে না। তবে চাইলে এর জন্যও আপনি প্রস্তুত থাকতে পারেন কিছুটা।

অনিশ্চিত জীবনে বিপদ আসতে পারে যখন তখন। আপনি অসুস্থ হতে পারেন, চাকুরি চলে যেতে পারে, আপনার ব্যবসায় লস্ হতে পারে, আপনার পরিবারের কোন খরচ অতিরিক্ত হতে পারে।

এমন নানান সমস্যা আসতে পারে। তবে এই সমস্যা যেন আপনার স্বাবাভিক জীবনকে বাঁধাগ্রস্থ না করতে পারে সেই ব্যবস্থা আপনি করতে পারেন। প্রতিমাসে আয়ের থেকে সামান্য কিছু অংশ ঊসবৎমবহপু ফান্ডে রাখুন।

অল্প অল্প রাখতে রাখতে এই টাকা বাড়তে থাকবে এবং আপনার তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করবে। হঠাৎ কোন খরচ আসতেই পারে বিষয়টিকে স্বাভাবিক ভাবে নিয়ে প্রস্তুতি নিতে ভুলবেন না।

পড়ুন- সঞ্চয় করতে পারি না – উপায়?

৭। দ্রুত সঞ্চয় করুন এবং প্রতিনিয়ত করুন

যত দ্রুত সম্ভব সঞ্চয় করুন এবং প্রতিনিয়ত সঞ্চয় করুন। আপনি যত তাড়াতাড়ি সঞ্চয় করবেন তত বেনিফিট পাবেন। আপনি এক মাস বেশি সঞ্চয় করলে একমাস এগিয়ে থাকবেন এমন করে ভাবুন। সঞ্চয় নিয়মিত রাখার চেষ্টা করুন।

সঞ্চয় বিষয়ক আমাদের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন লেখা আছে, আপনারা চাইলে সেগুলো দেখতে পারেন। সঞ্চয়ের পরিকল্পনা অর্থ ব্যবস্থাপনা এর অন্যতম একটি ধাপ।

মনে রাখতে হবে Money Management বা অর্থ ব্যবস্থাপনা এর বিষয়ে আপনাকে জানাতে পারবে অনেকেই কিন্তু আপনিই পারবেন বিষয়টিকে বাস্তবে রূপ দিতে। তাই সময় নষ্ট না করে আজই নিজের Money Management বা অর্থ ব্যবস্থাপনা এর জন্য উদ্যোগী হন। ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল – Bangla Preneur YouTube Channel