অধিক টাকা আয় করার জন্য কিভাবে নিজেকে মোটিভেট রাখা যায়

নিজেকে মোটিভেট রেখে কিভাবে অধিক টাকা আয় করা যায়!

নিজেকে মোটিভেট রেখে কিভাবে অধিক টাকা আয় করা যায়!

নিজেকে মোটিভেট রেখে কিভাবে অধিক টাকা আয় করা যায়!

অনেক বেশি টাকা উপার্জন, আর্থিক স্বাধীনতা আমাদের সকলের জন্য স্বপ্ন। আমরা সবাই এমন একটি জীবন চাই যেখানে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবো এবং টাকার জন্য কোনো টেনশন করতে হবে না।

সকলে সোনার চামচ মুখে নিয়ে পৃথিবীতে আসে না। পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যারা শূণ্য থেকে শুরু করে আজ রীতিমতো টাকার পাহাড়ে বসবাস করে। এই অর্জন একদিনে সম্ভব হয় নি, অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়েছে তাদের।

মোটিভেশন ধরে রাখাই এই অর্জনের পথে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। জীবনের নানা রকম চড়াই উতরাই পাড়ি দিয়ে নিজেকে মোটিভেট রাখা সহজ নয়।

আসুন অধিক টাকা উপার্জনের জন্য কিভাবে নিজেকে মোটিভেট রাখা যায় এর কিছু উপায় জানার চেষ্টা করি।

১। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ

জীবনে লক্ষ্য না থাকলে বড় কিছু করা সম্ভব হয় না। জীবনের কিছু অর্জন করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

তবে লক্ষ্যটি অবশ্যই স্থির হতে হবে। আমি অনেক টাকার মালিক হবো এটি কিন্তু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নয়। বরং আমি ৫ বিলিয়ন টাকার মালিক হবো এমন লক্ষ্যকে আমরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বলতে পারি।

নিজের লক্ষ্যকে দৃশ্যমান রূপ দিতে হবে। যেমন চিন্তা করুন, আগামী তিন মাসে আমি আমার ইনকাম ২০,০০০ টাকা বৃদ্ধি করব, এবং তিন মাস পর আপনি ফলাফল দেখুন। জীবনের সাথে সংগতি রেখেই নিজের লক্ষ্যকে নিজের কাছে দৃশ্যমান করে তুলতে হবে।

২। কি অর্জন করছেন সেটি চিহ্নিত করুন

আমরা দিন রাত কাজ করেই যাই কিন্তু কাজ করার ফলাফল কি হচ্ছে সেটি কখনো লক্ষ্য করি না। আপনি ঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছেন কি না সেটি আপনাকেই খেয়াল রাখতে হবে। সুতরাং কি কি অর্জন করছেন সেটি অবশ্যই খেয়াল করুন।

যখন দেখবেন আপনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন সেটি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন নিজের ভিতর আত্মতৃপ্তির সাথে আপনার আত্নবিশ্বাস কয়েকগুন বেড়ে যাবে। এবং আপনি আরো নতুন উদ্যেমে কাজ করতে শুরু করবেন।

আবার আপনার কাজে কিংবা পরিকল্পনায় কোন ভুল ছিল কিনা সেটিও আপনি এই সময় উপলবদ্ধি করতে পারবেন। তাই ফিরে দেখার এই বিষয়টি কখনোই এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।

৩। আয়ের একাধিক উৎস রাখুন এবং পছন্দের বিষয় নিয়ে কাজ করুন

আয়ের বিভিন্ন উৎস থাকলে আপনাকে কোন নির্দিষ্ট আয়ের ওপর নির্ভর করতে হয় না। এর ফলে আপনার মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যায়। আপনি যদি চাকুরি করেন তবে এর পাশাপাশি নিজের একটি ছোট ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

একটা ব্লগ চালাতে পারেন, ইউটিউব করতে পারেন, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে পারেন, তবে এমন কিছু নিয়ে কাজ করতে হবে যার প্রতি আপনি আগ্রহ বোধ করেন। এই আগ্রহ আপনাকে মোটিভেশন দিবে আরো অধিক কাজ করার জন্য।

নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা আয় করে আপনি সচ্ছলতা পেতে পারেন কিন্ত কখনোই আর্থিক স্বাধীনতা পাবেন না। তাই কিভাবে আয়ের বিভিন্ন উৎস তৈরী করা যায় সেই বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে।

৪। ব্যয় কমিয়ে ফেলুন

আপনি যত ব্যয় কমাতে সক্ষম হবে তত টাকা আপনি সঞ্চয় কিংবা বিনিয়োগে নিয়ে আসতে পারবেন। কিছু ব্যয় আছে আমরা যা চাইলেই কমাতে পারি। যেমন ধরুন, আপনি দৈনিক নিজের পকেট খরচের জন্য ১০০ টাকা খরচ করেন।

এই ব্যয় চাইলেই কিন্তু কমনো সম্ভব। যখন আপনার হাতে বেশ কিছু টাকা থাকবে তখন আপনি আরো অধিক টাকার জন্য আগ্রহ বোধ করবেন।

আপনি যদি অপ্রয়োজনীয় খরচ কমাতে না পারেন তবে আপনি যত বেশি আয়ই করুন না কেন টাকা ধরে রাখতে পারবেন না। এবং সেক্ষেত্রে ফলাফল শূণ্যই থাকবে।

সুতরাং কত টাকা আয় করেছেন এবং কত টাকা ব্যয় করছেন সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখুন।

৫। প্রতিযোগী মনোভাব বজায় রাখুন

প্রতিযোগী মনোভাব আপনাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। সুদীর্ঘ সময় ধরে একটি কাজ নিরলস ভাবে করে যাওয়া কঠিন। যদি না সেখানে উত্তেজনা থাকে, জয় পরাজয় থাকে। সহজে অর্জিত জিনিসের প্রতি আমাদের মোহ কম থাকে।

তাই আপনি নিজেকে মোটিভেট রাখার জন্য নিজের পরিচিত আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে কাউকে খুঁজে বের করতে পারেন যে নিজেও অধিক ইনকাম করতে আগ্রহী।

একটি সুস্থ প্রতিযোগীতার মাধ্যমে দুইজনেই আরো ইনকামের প্রতি উৎসাহ বোধ করবেন এবং সেই অনুসারে কাজ করবেন। এর ফলে দুজনই কাংক্ষিত লক্ষ্যমাত্র অর্জনে সক্ষম হয়ে উঠবেন।

৬। অনুপ্রেরণার উৎস খুঁজে বের করুন

জীবনে অনুপ্রেরণার ভীষণ প্রয়োজনীয়। শুধু কাজ করলেই হবে না আপনাকে জানতে হবে আপনি কি কাজ করছেন এবং কেন কাজ করছেন।

আপনি জীবনে কাকে অনুসরণ করেন কিংবা কার মতো হতে চান সেটি ভাবুন। এর অর্থ এই না যে, আপনি তাকে অন্ধ অনুকরণ করবেন।

বিষয়টি একদমই এমন না। বরং তার জীবনের বিভিন্ন সংগ্রামের গল্প আপনাকে চাঙ্গা রাখবে।

আপনি যা অর্জন করতে চান সেই পথে আপনার পূর্বসুরী যারা আছে তাদের জীবন এবং কাজ সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করুন।

এতে আপনার সামনে এগিয়ে চলার পথ সহজ হবে। এবং আপনি সবসময়ই মোটিভেট থাকতে পারবেন।

৭। মেনটর খুঁজে বের করুন

নিজেকে অধিক আয়ের জন্য মোটিভেট রাখার অন্যতম উপায় মেনটর খুঁজে বের করা। আমাদের দেশে তেমন মেনটর খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন।

তবে আপনি যদি সেটি করতে পারেন তবে আপনার লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে ব্যপক ভুমিকা রাখবে। মেনটর এমন একজন মানুষ যে আপনাকে বাস্তবসম্মত বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে বোঝাবে।

মেনটর তিনি, যিনি আপনার আগে সেই পথে চলেছেন এবং যিনি জানেন আপনি  কি কি বাঁধার সম্মুখীন হতে পারেন।

যেমন, আপনি যদি আপনার লক্ষ্য পূরণের এই যাত্রায় আপনার পরিবারকে পাশে না পান তবে মেনটর হিসাবে এমন কাউকে খুঁজে বের করুন যে পরিবারের সাহায্য ছাড়াই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে।

৮। বন্ধু নির্বাচনে সর্তক হন

আপনি যদি হতাশাগ্রস্থ একজন মানুষের সাথে বাস করেন তবে দিন দিন আপনি হতাশায় ডুবে যাবেন।

আপনি যদি ইতিবাচক মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করেন তবে ক্রমান্বয়ে আপনি ইতিবাচকই হয়ে উঠবেন।

সুতরাং কাদের সাথে আপনি দিনের অধিক সময় ব্যয় করছেন সেই বিষয়ে লক্ষ্য রাখুন। আমরা অনেকেই চায়ের দোকানে দীর্ঘ সময় কাটাই।

তাদের মধ্যে কেউ কেউ শুধু আড্ডাই দেয়, কেউ কেউ আবার বিভিন্ন রকমের আইডিয়া শেয়ার করে, বিভিন্ন কাজ নিয়ে আলোচনা করে।

আপনি কি কি বিষয়ে আলোচনা করে আপনার মূল্যবান সময় পার করবেন সেটি একান্তই আপনার সিদ্ধান্ত।

৯। শারীরিক সুস্থতার প্রতি যত্নশীল হতে হবে

শারীরিক সুস্থতা সবার আগে প্রয়োজন। আপনি শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকলে আরো অধিক মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারবেন।

তাই শারীরিক সুস্থতার উপর নজর রাখুন। প্রতিদিন ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার, ৬/৭ ঘন্টা ঘুম আপানকে আরো বেশি এনার্জিটিক মানুষ হিসাবে গড়ে তুলবে।

১০। বিজয় উদযাপন করুন

সবসময় কাজ করতে থাকলে একঘেয়েমী চলে আসে এবং কাজের মান খারাপ হয়ে যায়। আর তাই নিজের জন্য অবসর রাখুন। নিজের ছোট ছোট অর্জনের জন্য নিজেকে পুরস্কার দিন। নিজেকে বুঝতে দিন আপনি চমৎকার ভাবে কাজ করছেন।

এতে আপনার উৎসাহ বেড়ে যাবে এবং আপনি নিজেকে মোটিভেট রাখতে পারবেন। কাজ করতে গিয়ে নিজের ভাল-লাগা খারাপ-লাগাকে বিসর্জন দিবেন না।

পরিবার বন্ধু বান্ধবদের সময় দিবেন। তাদের ভালবাসা এবং সমর্থন আপনাকে লক্ষ্য অর্জনের জন্য উৎসাহিত করবে।

যত বেশি টাকা আপনি মাসিক আয় করতে পারবেন, তত বেশি আপনি আর্থিক স্বাধীনতার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবেন।

আর্থিক স্বাধীনতা কিংবা অনেক বেশি টাকা উপার্জনের এই যাত্রা খুব একটা সহজ নয়। বার বার ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়। ভেঙে পড়ার মুহূর্তে নিজেকে মোটিভেট রাখতে পারলে জয় সুনিশ্চিত।