শুধুমাত্র টাকা জমিয়ে ধনী হওয়া যায় না

শুধুমাত্র টাকা জমিয়ে ধনী হওয়া যায় না

একটা ফুটো বালতিতে আপনি যতই পানি ঢালেন না কেন, এতটুকু পানি ধরে রাখতে পারবেন না। ঠিক তেমনি শুধুমাত্র টাকা জমিয়ে ধনী কিংবা আর্থিক স্বাধীনতাও অর্জন করা যায় না। হয়ত আপনার সাথে আমার মতের মিল না হতে পারে। তবে আমার অভিমত আমরা কখনোই টাকা জমিয়ে ধনী হতে পারব না। এর কারন স্বরূপ কিছু ধারনা তুলে ধরনা তুলে ধরার ইচ্ছা প্রকাশ করছি।

দেখুন, আমরা একটা ছোট দেশে বসবাস করি, যেখানে আয়তনের তুলনায় মানুষ অনেক বেশি। যদিও এটি খুব বড় সমস্যা না। তবে সমস্যা হচ্ছে এখানে মানুষের ইনকামের তারতম্য অনেক বেশি। আমাদের দেশে মাত্র ১০% মানুষের কাছে যত টাকা আছে, বাকী ৯০% মানুষের কাছে সেই টাকা নেই। একই সাথে এই ১০% মানুষ যা করে, বাকী ৯০% মানুষ তার বিপরীত কাজ করে।

আপনি যদি প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে জমান তবে ১ কোটি টাকার মালিক হতে আপনার সময় লাগবে প্রায় ৮৩ বছর। যদি ২০ হাজার করে জমাতে পারেন তবে সময় লাগবে প্রায় ৪১ বছর।

আমি জানি, মুখে বলা খুব সহজ, আমাদের সমাজের ১ কোটির উপর মানুষ আছে যাদের ইনকাম ২০ হাজারের অনেক কম, তাহলে এরা কি ধনী হতে পারবেন না?

এর উত্তর যথেষ্ট কঠিন, যদি সে একমাত্র টাকা জমিয়ে ধনী হতে চায় তবে পারবে না। ২০ হাজার না ৫০ হাজার টাকা প্রতিমাসে জমাতে পারলেও সম্ভব না। এর কারব অনেক আছে তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কারন হচ্ছে মূল্যস্ফীতি!

১৯৮০ সালে কেউ যদি ১০ টাকা নিয়ে বাজারে যেত তবে তার ব্যাগ ভরে বাজার নিয়ে আসতে পারত আর এখন এই ২০২২ সালে ১০ টাকায় শুধুমাত্র একটা ছোট আকারের বাজারে ব্যাগ পাওয়া যায়। বাজারে পণ্যের কথা উল্লেখ নাই করলাম।

আপনার কাছে যদি আজকে ১ কোটি থাকে তা দিয়ে, তবে আপনি একটা ভালো ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন, কিংবা বাড়ী বানানোর মত একটা জায়গা কিনতে পারবেন। তবে বিশ্বাস করুন, ২০৬০ সালে এই ১ কোটি টাকায় একটা বাথরুম করার মত জায়গা মিলবে কিনা সন্দেহ আছে।

এখন আপনি যদি আজকে থেকে প্রতি মাসে ২০ হাজার করে টাকা জমান তবে ২০৬০ সালে পাবেন ধরুন, ১ কোটি টাকা। তাহলে সেই ১ কোটি নিয়ে কি’ইবা করার থাকবে।

আমি টাকা জমানোর বিপক্ষে না, তবে একমাত্র টাকা জমিয়ে কখনোই কেউ কোনো দিন আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে নাই আর, পারবেও না।

তাহলে আমাদের মনে একটা প্রশ্ন আসতেই পারে এখন বিকল্প পথ কি?

এর সোজাসাপ্টা কোনো উত্তর বলা কঠিন। তবে ৩টা জিনিষ করতে পারলে আমাদের জন্য আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন করতে সহজ হবে।

#১। ইনকাম বা আয়ের একাধিক উৎস বানানো

এই বিশ্বে খুবই কম মানুষ আছে যারা একটি মাত্র আয়ের উপর নির্ভর করে সত্যিকারের ধনী হতে পেরেছে।

আমি জানি, বললেই একাধিক ইনকামের পথ বানানো যায় না।

তবে আমাদের আশে পাশে অনেক মানুষ কিন্তু একাধিক আয়ের পথ বানাতে পেরেছে, যা হয়ত আমি আর আপনি পারছি না।

প্রথম অবস্থায় বা একদম শুরুতেই যে অনেক টাকা আয় হবে তা কিন্তু নয়, তবে আপনি যদি একাধিক ইনকামের পথ বানাতে পারেন তাহলে খরচ কমাতে পারবেন যা দিন শেষে আপনাকে আর্থিক স্বচ্ছলতা দিবে।

#২। বিনিয়োগ

এই আধুনিক যুগে আমরা যেই ভুলটি করি তা হলো টাকা সঞ্চয় করাকে বিনিয়োগ মনে করি।

আমি একটা জাতীয় সঞ্চয়পত্র কিনলাম, আর বললাম আমার এত টাকা বিনিয়োগ করা আছে তাহলে আমার থেকে এই দেশে দ্বিতীয় আর কোনো বোকা থাকার কথা না।

আমাদের মনে রাখতে হবে ব্যাংক, বীমা, পোস্ট অফিস, বা সঞ্চয়পত্র এই গুলোতে টাকা রাখা মানে হচ্ছে আপনি টাকা জমাচ্ছেন, বিনিয়োগ করছেন না।

এই মাধ্যমগুলো ভালো তাদের জন্য যারা মুদ্রাস্ফিতি মানে না কিংবা বুঝে না। এখন আমাদের দেশে এই ২০২২ সালে মুদ্রাস্ফিতি হার প্রায় ৬%। আর গড়ে ব্যাংকগুলো সুদ দিচ্ছে ৫/৬%। তাহলে আমি কি বলতে পারি না, আমি ব্যাংকে টাকা রেখে বছরে টাকার ভেলু কমিয়ে ফেলছি?

#৩। নেটওয়ার্ক

টাকার মাধ্যমে যদি টাকা না আসে তাহলে সেই টাকাই টাকার ভেল্যু কমিয়ে দেয়। আপনি যদি একটা ব্যবসা করতে যান তাহলে সেই শাখায় অভিজ্ঞদের কাছ থেকে জ্ঞান নিতে হবে। বিনিয়োগ না বুঝলে দক্ষ কারো কাছে শিখতে হবে।

লেনদেন করতে চাইলে তা শিখতে হবে, আর এই সব ক্ষেত্রে যা লাগবে তা হলো নেটওয়ার্ক। আপনার আশে পাশের মানুষ, যাদের সাথে আপনার উঠা বসা তারা যদি আপনার থেকে দক্ষ না হয় আপনিও কোনো দিন দক্ষ হতে পারবেন না।

একজন কামারের কাছে আপনি লোহার হাতুড়ি পাবেন, সোনা পেতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে সোনার জহুড়ির কাছে।

পরিশেষে, আমরা বলতে পারি, ধনী হতে চাইলে কিংবা আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন করতে চাইলে ইনকামের একাধিক পথ বানাতে হবে, বিনিয়োগে আসতেই হবে এবং আমাদের নেটওয়ার্ক বাড়াতে হবে।