বিনিয়োগ সম্পর্কে ধারনা ! সফলতার সাথে বিনিয়োগের জন্য এই ৮টি বিষয় মনে রাখতে হবে

বিনিয়োগ সম্পর্কে ধারনা

বিনিয়োগ সম্পর্কে ধারনা

বিনিয়োগ সম্পর্কে ধারনা

আকাশ ছোয়ার স্বপ্ন নিয়েই আমরা এগিয়ে চলি। স্বপ্ন পূরনের জন্য প্রতিদিনের লড়াইয়ের গল্পটা ভীষন কষ্টের, ভীষন যন্ত্রণার। প্রতিদিন হাজার হাজার ব্যর্থতাকে ভিতর থেকে একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়া। এই এগিয়ে যাওয়ার নামই জীবন।

জীবনে সচ্ছলতা লাভের জন্য আমাদের কত পরিশ্রম, কত চেষ্টা। হালাল পথে রোজগার করেও সফলতা, অর্থ-বিত্ত সবই অর্জন সম্ভব।

কিছু মানুষ এক পেশে মন্তব্য করেন যে, সৎ পথে থাকলে টাকা রোজগার করা যায় না। সম্পূর্ণ ভুল এই কথা। আপনি চাইলে সৎ পথে থেকেও ধনী হতে পারবেন। তবে আপনাকে অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হবে এবং কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

বিনিয়োগ এমনই এক শাখা, যেখানে আপনি পরিশ্রম এবং ধৈর্যের মিশ্রন ঘটাতে পারলে উপরে উঠতে পারবেন।

ব্যর্থতার অনেক গল্পও আছে, আর সেই ব্যর্থতার নিশ্চয় কিছু কারণও আছে। বিনিয়োগ করতে হবে অব্যশই হিসাব নিকাশ করে। বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনি আকাশ ছোয়ার যে স্বপ্ন বুকের ভিতর লালন করেন, সেই স্বপ্ন পূরন সম্ভব।

ব্যবসা খুবই পরিচিত একটি শব্দ আমাদের কাছে। আমরা ব্যবসা নিয়ে ছোট বেলা থেকেই সবাই জানি ও বুঝি।

কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই ৯-৫ টার ধরাবাঁধা চাকুরি জীবন বেছে নেয়। কারণ? নিশ্চয়তা। কিসের নিশ্চয়তা বলুন তো?

আজ আমি মারা গেলে আমার পরিবার থেকে কাউকেই সেই চাকুরি প্রদান করা হবে না। আমার পরিবারের কথা কেউ ভাববে না। ভেসেই যাবে আমার পরিবার। কিন্তু আজ যদি আমার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা বিনিয়োগ খাত থাকতো, তবে আমার উত্তরসূরি যারা আছে তারা সেটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারত। কমপক্ষে তাদের না খেয়ে থাকতে হত না।

তাহলে চাকুরিতে নিশ্চয়তা কোথায়?

আমার দেখা এক মুদি ব্যবসায়ী তার স্ত্রী, ১২ বছরের একটি পুত্র এবং ৫ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রেখে মারা গিয়েছেন। ১২ বছরের ছেলের ঘাড়ে এখন সংসার নামক জোয়াল।

বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে আঁকড়ে ধরে তাদের এগিয়ে যাওয়ার গল্পটা কষ্ঠের হলেও, কারো কাছে হাত পাততে হয় নি। কিন্তু লোকটি যদি শুধুমাত্র চাকুরি করতো, তবে কোন প্রতিষ্ঠানই ১২ বছরের কোন ছেলেকে কিংবা মৃত লোকটির অল্প শিক্ষিত স্ত্রীকে চাকুরি দিতো না। এটাই বাস্তবতা।

আমি অবশ্যই চাকুরির না করার পক্ষে নই। তবে আয়ের একাধিক উৎস থাকা সবচেয়ে ভাল। বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ এই শব্দটি আমরা সবসময় শুনে আসছি। কিন্তু গভীর ভাবে চিন্তা করলে আমরা বুঝতে পারবো বিনিয়োগ ঝুঁকি কমায়ও।

বিনিয়োগ করতে চাই, কিন্তু কোথায়? কিভাবে বিনিয়োগ করবো? কত টাকা বিনিয়োগ করবো?

এমন নানা প্রশ্ন আসে আমাদের মনে। অবশ্যই এগুলো খুবই প্রাসঙ্গিক এবং যুক্তিপূর্ণ প্রশ্ন। এগুলো নিয়ে ভাবার অর্থ, আপনি সত্যিই বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াস।

বিনিয়োগে আসতে হলে আপানকে অবশ্যই যাচাই বাছাই করে আসতে হব। কোন খাতটি, আপনার জন্য ভাল, কোনটি আপনার জন্য ভাল না সেই বিষয়ে আপনাকে ভাল ভাবে জানতে হবে।

আপনার কষ্টে উর্পাজিত টাকা বা সঞ্চয়কৃত টাকা যাই হোক না কেন, তাকে কাজে লাগাতে হবে সঠিক উপায়ে। বিনিয়োগের জন্য আসলে ধরাবাঁধা কোন নিয়ম নাই। মানুষ ভেদে বিনিয়োগও ভিন্ন ভিন্ন, নীতি মালাও বিভিন্ন।

সফলতার সাথে বিনিয়োগের জন্য যে বিষয়গুলি মনে রাখা উচিত

১। দ্রুত বিনিয়োগ করুন

নিজেকে একজন সফল বিনিয়োগকারী হিসাবে দেখতে চাইলে দ্রুত বিনিয়োগ করুন।

যিনি এখন বিনিয়োগ করছেন তিনি নিশ্চয় ৫ বছর পর বিনিয়োগ করা এক জনের থেকে বেশি এগিয়ে থাকবেন। ব্যর্থতার পরিমাণ যদি তার বেশিও হয়, যে জ্ঞান তিনি অর্জন করেছেন, সেটি অমূল্য।

আর তাই সময় নষ্ট না করে বিনিয়োগ শুরু করুন। ছোট পরিমান অর্থের মাধ্যমেই শুরু করুন এবং আস্তে আস্তে বাড়ান। কখনোই ভাববেন না, অনেক টাকা ছাড়া বিনিয়োগ হয় না।

যার টাকা আছে তার কাছে হয়তো সুযোগের পরিমান বেশি আছে, আপনার কাছে কম আছে। কিন্তু সেই কম সুযোগের মধ্যেও আপনর জন্য উপযুক্ত সুযোগ আছে। যার অনুসন্ধান আপনাকেই করতে হবে।

২। ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে

বিনিয়োগে আসতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ঝুঁকি নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। চাকুরি মত টাকার পরিমান এখানে নিশ্চিত নয়।

আর তাই ঝুঁকি থেকে যায় অনেকটা। ঝুঁকি যেমন বেশি, লাভ হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশি।

৩। নিয়মিত বিনিয়োগ করুন

বিনিয়োগ শাখায় আপনাকে অবশ্যই নিয়মিত হতে হবে। আপনি যখন নিয়মিত বিনিয়োগ করবেন, তখন বিনিয়োগের পারফেক্ট সময়ের জন্য আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে না।

আপনি বেশি পরিমান কিনতে পারবেন যখন দাম কম থাকে, আবার দাম বেশি থাকলে কম পরিমান কিনে সামগ্রিক মূল্য কমিয়ে নিয়ে আসতে পারেন। এরজন্য আপনাকে প্রতিনিয়ত এই খাতে থাকতে হবে।

নিয়মিত সঞ্চয় যেমন আপনার সঞ্চয়কৃত টাকার পরিমান বাড়ায়, নিয়মিত বিনিয়োগও ঝুঁকি কমিয়ে আপনার লাভের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। জেনে নিন – সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের মধ্যে পার্থক্য

৪। যথেষ্ট পরিমান বিনিয়োগ করুন

ভবিষ্যৎতের জন্য সুদীর্ঘ সময়ের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্য সঞ্চয় করুন এখনই। জীবনে আমাদের অনেক বড় বড় লক্ষ্য থাকে। যেমন, বাড়ি, গাড়ি, সচ্ছলতা এবং আর্থিক স্বাধীনতা।

আপনি আজ যতটুকু টাকা সঞ্চয় করবেন, ভবিষ্যৎতে আপনাকে তুলনামূলক কম পরিমান টাকা সঞ্চয় করতে হবে। ঠিক তেমন, আপনি যদি এখনই বিনিয়োগ শুরু করেন তবে ভবিষ্যৎতে আপনার চাপ অনেকটা কমে যাবে। খুব বেশি ঝুঁকি নেওয়ার প্রয়োজন হবে না।

বয়সের সাথে সাথে আমাদের শারীরিক সক্ষমতা কমতে থাকে, বাড়তে থাকে দায়-দায়িত্ব। আর তাই আপনি যতটু এগিয়ে থাকতে পারবেন, ততটাই লাভ। আরো পড়ুন – শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে সফল হওয়ার ৪৬টি উপায়

৫। বৈচিত্র্যতা রাখুন

নিজের যাবতীয় সব কিছু একটি নৌকায় তুলে দিয়ে নদী পার হতে চাইলে অতিরিক্ত ভারে নৌকাডুবিও হতে পারে।

কিন্তু আপনি যদি ২ বা ৩ টি নৌকায় আপনার মালপত্র রাখেন তবে আপাত দৃষ্টিতে মূল্যহীন হলেও আপনি কিন্তু আপনার ঝুঁকি কমিয়ে ফেলেছেন অনেকটা। বিনিয়োগ বিষয়টিও তেমন।

নিজের সব টাকা একটি খাতে রাখবেন না। বরং আপনার পোর্টফলিও সাজান নানা রঙে। বিভিন্ন ধরনের পন্যের উপর টাকা বিনিয়োগ করুন। এই বৈচিত্র্যতা আপনাকে সফল হতে সাহায্য করবে।

৬। লোভ করবেন না

অতি লোভে তাঁতী নষ্ট। প্রচলিত এই বাক্যটি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ধ্রুব সত্য। বিনিয়োগের সাথে সাথে লাভের পরিমান কত হবে সেটি ভেবে নিন এবং সেই পরিমান আসলে বিক্রি করে দিন।

অতিরিক্ত লোভের জন্য বড় মাশুল দিতে হতে পারে। অল্প লাভ, কিন্তু নিয়মিত লাভ বেশি সুবধাজনক।

৭। বুদ্ধিমত্তার সাথে সিদ্ধান্ত নিন

বিনিয়োগে সফল হতে চাইলে আপাকে ভাবতে হবে যৌক্তিক উপায়ে। যৌক্তিকতায় আপনার সাফল্য নিশ্চিত করবে। একজন বিনিয়োগকারীকে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং সেটি দ্রুত সময়ের মধ্যে।

এই সিদ্ধান্তকে অবশ্যই যুক্তি নির্ভর হতে হবে। আবেগের বশবর্তী হয়ে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন না। একজন সফল বিনিয়োগকারী সবসময় পরিস্থিতি বুঝে, বিচার বিশ্লেষন পূর্বক সিদ্ধান্ত নেন। কারন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিটি সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৮। জ্ঞান অর্জনের বিকল্প নেই

প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে সময়, চাহিদা, মন মানসিকতা। বদলে যাচ্ছে চাল চলন, প্রয়োজন, নিয়মনীতি। সফলতা অর্জনের জন্য আপাকে আপনার বিষয়টি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে।

প্রতিনিয়ত চেষ্টা করতে হবে কিভাবে নিজের জ্ঞানকে আরো সমৃদ্ধ করা যায়। জ্ঞান এমনই এক জিনিস যা আপনার কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।

আপনার ব্যবসা পদ্ধতি কেউ নকল করতে পারে কিন্তু আপনার যে জ্ঞান আছে সেটি দিয়ে আপনি খুব সহজেই অন্য একটি কৌশল তৈরী করতে পারবেন, যা আপনাকে নকল করা লোকটি পারবে না। যখন যে ভাবে সম্ভব, জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

বিনিয়োগকারী হিসাবে সফল হতে গেলে কোন ধরাবাঁধা নিয়ম না থাকলেও এই বিষয়গুলি আপনার চলার পথকে সহজ করবে।

একজন বিনিয়োগকারীকে সবসময় আত্নবিশ্বাসী হতে হবে। নিজের উপর এবং নিজের সিদ্ধান্তের উপর আস্থা রাখতে হবে সবসময়ই। ছোট খাটো ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। সফলতা আসবেই। ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল – Bangla Preneur YouTube Channel