শেয়ার বাজারে ঝুঁকি কমিয়ে লাভ করার কিছু উপায়

শেয়ার বাজারে ঝুঁকি কমিয়ে লাভ করার কিছু উপায়

সঠিক ধারণা নিয়ে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি কমিয়ে অধিক লাভের সুযোগ আছে শেয়ার বাজারে। একজন বিনিয়োগকারী হিসাবে শেয়ার বাজারে ঝুঁকি কমাতে পারবেন কিন্তু শত ভাগ ঝুঁকি মুক্ত থাকতে পারবেন না। কেউ যদি চায় সম্পূর্ণ ঝুঁকি মুক্ত ভাবে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করবে তবে তা এক কথায় অসম্ভব।

অনেকেই শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে “ঝুঁকি” আছে এটি শুনেই বিনিয়োগ করা থেকে নিজেকে পিছিয়ে নেয়। তবে মজার বিষয় এই ঝুঁকির পিছনেই আছে সফলতার হাতছানি যা আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে।

শেয়ার বাজারের বর্তমান অবস্থা এবং কোন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন  তার ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে ঝুঁকির মাত্রা। যদি ভালো কোম্পানির শেয়ারে, দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করেন, তাহলে ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়।

বাজার খারাপ হলে সাময়িকভাবে দাম হয়তো কমতে পারে, কিন্তু তাতে হতাশ না হয়ে আপনাকে ধৈর্য্য ধরতে হবে।

আপনাকে মনে রাখতে হবে, শেয়ার বাজারে শুধুমাত্র টাকা বিনিয়োগ করলেই হবে না।

তাছাড়া আরোও দুইটি বিষয় আপনার মধ্যে থাকতে হবে। এই দুইটি বিষয় হলো শেয়ার বাজার সম্পর্কিত জ্ঞান এবং ধৈর্য্য। এই তিনটি বিষয় মানে- টাকা, জ্ঞান এবং ধৈর্য্য থাকলে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের ঝুঁকি কমিয়ে অনেক ভালো লাভ করার সুযোগ লুফে নিতে পারবেন।

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সব থেকে সহজ এবং সাধারন নিয়ম হলো ভালো শেয়ারে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করা।

ওয়ারেন বাফেটের মতে, শেয়ারে লাভ করতে হয় কেনার সময়। তাই দাম যখন কম থাকে, তখন কেনার ভালো সময় বলে ধরা হয়। যখন শেয়ার বাজার সম্পর্কে বেশীরভাগ মানুষের ধারনাই নেগেটিভ থাকে তখনই শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার সেরা সময়।

আর যখন দেখবেন সবার মুখে মুখে শেয়ার বাজারের জয়ধ্বনি, তখন বুঝে নিতে হবে সামনে ছোট বা বড় ধরনের পতন আসছে। এই বিবেচনায় বর্তমান এর সময়টা আমার কাছে মনে হচ্ছে বিনিয়োগের সেরা সময়।

ব্যাংকে টাকা রেখে সুদ খাওয়ার চেয়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে বেশি লাভ করা যায় যদি আপনি সঠিক সময়ে সঠিক কম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারেন। 

IDLC Investment এর তথ্য অনুযায়ী, সাত বছরের বেশি সময় বিনিয়োগ ধরে রেখে একজন বিনিয়োগকারী সবচেয়ে বেশি প্রফিট পেয়েছে ম্যারিকোর শেয়ারে, যা বছরপ্রতি এই হার প্রায় ৩৬ শতাংশ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রফিট পেয়েছে বার্জার বাংলাদেশ শেয়ার থেকে, এই হার ২৯ শতাংশের বেশি।

রেকিট বেনকাইজারের শেয়ারে বিনিয়োগ করে প্রায় ২৮ শতাংশ প্রফিট পাওয়া গেছে, এছাড়া রেনেটার শেয়ার থেকে ২৫ শতাংশ। এগুলো হচ্ছে IDLC Investment এর তথ্য।

আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, কোনো কোনো শেয়ারে বিনিয়োগ করে ৫/৬ মাসের মধ্যে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ লাভ করতে পেরেছি। 

আসুন শেয়ার বাজারে ঝুঁকি কমিয়ে লাভ করার কিছু উপায় জেনে নেই

#১। শেয়ার বাজার সম্পর্কে প্রাথমিক শিক্ষা

আপনার কষ্টের টাকা কোথায় বিনিয়োগ করবেন, কিভাবে লাভ আসে, কখন শেয়ার কিনবেন, কেন কিনবেন, কোন ক্যাটাগরির শেয়ার কিনবেন, কতদিন পর কোন ক্যাটাগরির শেয়ার বিক্রি করা যায় ইত্যাদি সাধারন জ্ঞান আপনার মধ্যে অবশ্যই থাকতে হবে।

শেয়ার বাজার একটি বিশাল জগত যেখানে শেখার কোন শেষ নেই।

একজন নতুন বিনিয়োগকারী হিসাবে আপনি সকল বিষয়ে দক্ষ হয়েই বাজারে আসতে হবে তা কিন্তু নয়, আপনি আস্তে আস্তে শেয়ার বাজার বুজতে পারবেন, তবে শুরুর আগে সাধারন শিক্ষা নিয়েই বাজারে আসতে হবে। 

#২। কত টাকা কত দিনের জন্য বিনিয়োগ করবেন তা জানা

একজন বিনিয়োগকারি হিসাবে আপনাকে অবশ্যই টাকার অঙ্ক নির্ধারণ করতে হবে। একই সাথে একটি নিদিষ্ট সময় ঠিক করতে হবে। হতে পারে আপনি ৫ লাখ টাকা ১ বছরের জন্য বিনিয়োগ করতে চান। যখন সময় এবং টাকার অঙ্ক নির্ধারণ করতে পারবেন তখন সঠিক পরিকল্পনাও ঠিক করতে পারবেন।

#৩। কোন কোম্পানির শেয়ার কিনবেন তাদের সম্পর্কে জানা

ভালো কোম্পানি মানেই ভালো শেয়ার না, আবার খারাপ কোম্পানি মানেই খারাপ শেয়ার না। আপনাকে এমন কোম্পানি বেছে নিতে হবে যাদের কোম্পানি প্রোফাইলও ভালো এবং শেয়ারও ভালো।

আপনার নির্বাচিত কোম্পানিটি কোন ধরনের পন্য বা সেবা দেয় তা জানতে হবে। একই সাথে কোম্পানির মালিক কারা তা জানতে হবে।

তাদের অন্য ব্যবসা আছে কিনা, কত টাকা লোনে আছে, তাদের নামে মামলা আছে কিনা, অন্য ব্যবসায় কেমন লাভ করছে ইত্যাদি বিষয় জানতে হবে।

#৪। সবুরের মেওয়া

শেয়ার বাজারে ঝুঁকি কমানোর অন্যতম সেরা হাতিয়ার ধৈর্য্য ধারন করা।

সাধারণত যখন একজন বিনিয়োগকারী ব্যাংক এ ডিপিএস করে বা ফিস্কড ডিপজিট করে তখন সে অনায়াসে ৭/৮ বছর অপেক্ষা করতে পারে।

কিন্তু যখন ঐ একই বিনিয়োগকারী শেয়ার বাজারে আসে তখন ঐ একই রকম ধৈর্য্য তার মধ্যে থাকে না। এই অবস্থায় আমাদের উচিত হবে, টাকা ও জ্ঞানের পাশাপাশি সর্বোচ্চ ধৈর্য্য বিনিয়োগ করা।  

#৫। ধারাবাহিক বিনিয়োগ

শেয়ার বাজারে ঝুঁকি কমানোর অন্যতম সেরা একটি মাধ্যম ধারাবাহিক ভাবে বিনিয়োগ করা।

ধরুন, আপনার প্রাথমিক বিনিয়োগ ৫ লাখ টাকা, এবং একই সাথে যদি আপনি প্রতি মাসে আরো ৫ হাজার টাকা করে বিনিয়োগ করতে পারেন তবে বিশ্বাস করুন আপনি কমপক্ষে ৭০ শতাংশ বিনিয়োগকারির চেয়ে এগিয়ে থাকবেন।

ধারাবাহিক বিনিয়োগ করতে পারলে একদিক থেকে লস এড়ানো যাবে এবং একই সাথে মোটা অঙ্কের টাকা প্রফিট করা যাবে।

#৬। অবাস্তব প্রত্যাশা না করা

আমরা যারা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করব তারা সবাই চাইব লাভ করতে। একই সাথে লাভের নামে অবাস্তব প্রত্যাশা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।

যখনই আপনি অবাস্তব প্রত্যাশা করবেন তখনই আপনার মধ্যে লোভ চলে আসতে পারে এবং যা আপনার অনেক বড় ঝুঁকি নিতে উৎসাহিত করবে।

তাই শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে ঝুঁকি কমাতে চাইলে সকল ধরনের অবাস্তব প্রত্যাশা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।

আরো পড়ুন – শেয়ার বাজারে Long Term Investment করার সেরা সময় এই এখনই

#৭। আবেগে শেয়ার কেনা বা বিক্রি না করা

আবেগতাড়িত হয়ে শেয়ার কিনলে লস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। যখন আপনি কোন একটি কোম্পানি নিয়ে এনালাইসিস করবেন তখন টেকনিকাল, ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিসের পাশাপাশি অন্য বিনিয়োগকারিদের সাইকোলজি বোঝার চেষ্টা করতে হবে।

এই অবস্থায় আবেগে পরে ভুল সিন্ধান্ত নেওয়া থেকে নিজেকে বিরত থাকতে হবে।   

#৮। পরামর্শ গ্রহণ করা

অনেকেই বলে থাকে, অন্যের কথায় শেয়ার কিনলে লস হয়। আসলে কথাটা ঠিক না।

একজন নতুন বিনিয়োগকারি হিসাবে আপনার উচিত হবে অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারির কাছ থেকে মতামত গ্রহন করা।

একই সাথে যত বেশি বিনিয়োগকারিদের সাথে মিশতে পারবেন ততই নানামুখী জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। তবে শতভাগ অন্ধের মত অন্যের কথায় বাই সেল করাও ঠিক হবে না।

#৯। টাকা পয়সার হিসাবে দক্ষ হওয়া

শেয়ার বাজারে প্রতিটি পয়সার বিশাল মূল্য আছে। যত কম দামে কিনে যত বেশি দামে বিক্রি করা যায় লাভ ততই বেশি হয়।

আপনি যখন শেয়ার বাই সেল করবেন তখন ব্রোকার হাউস আপনার কাছ থেকে একটি কমিশন কাটবে।

ব্রোকার হাউস বুঝে এই কমিশন ৩০ পয়সা থেকে ৬০ পয়সা হয়। এছাড়া বোনাস টাকা, বোনাস শেয়ার, ইত্যাদি কিছু হিসাবে আপনাকে দক্ষ হতে হবে।  

#১০। একটি কোম্পানিতে সকল টাকা বিনিয়োগ না করা

শেয়ার বাজারে ঝুঁকি কমাতে চাইলে কখনই একটি কোম্পানিতে সকল টাকা বিনিয়োগ করবেন না। আপনার হিসাব এবং এনালাইসিস সব সময় ঠিক নাও হতে পারে।

যখনই একটি কোম্পানিতে সকল টাকা বিনিয়োগ করবেন এবং কোন একটি কারনে যদি কোম্পানির পারফরমেন্স খারাপ করে তবে লসের সম্মুখীন হতে পারেন।

#১১। অল্প টাকা দিয়ে শুরু করে দেওয়া

শেয়ার বাজারে এক্সপাট হয়ে তার পর যদি বিনিয়োগ করতে চান তবে আপনি কখনই পারবেন না।

কারন অনেক বিষয় রয়েছে যা বাজারে সরাসরি না নামলে বুঝতে পারা যায় না। তাই আগে অভিজ্ঞতা অর্জন করার জন্য এবং ভবিষ্যৎ ঝুঁকি কমানোর জন্য অল্প টাকা দিয়ে বিনিয়োগ শুরু করে দিন। ধন্যবাদ – কে এম চিশতি সিয়াম