মানুষের জীবনে আর্থিক পরিকল্পনার গুরুত্ব

মানুষের জীবনে আর্থিক পরিকল্পনার গুরুত্ব

আর্থিক পরিকল্পনা হলো একটি মানুষের লক্ষ্য অর্জনের জন্য পর্যায়ক্রমিক ধাপসমূহের বিবরণ। একবারে কেউ নিশ্চয় ১ কোটি টাকার মালিক হতে পারবে না। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা এবং পর্যায়ক্রমিক ধাপ অনুসরণ করে একজন মানুষ তার স্বপ্নপূরণ করতে পারে। এটি একটি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা।

এটি মূলত একটি গাইড লাইন হিসাবে কাজ করে। আর্থিক পরিকল্পনা আপনার আয়, ব্যয়, সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। একটু গভীর ভাবে চিন্তা করলে আপনি বুঝতে পারবেন জীবনের অধিকাংশ জিনিসই টাকার সাথে সংযুক্ত।

আপনি আপনার লক্ষ্য, আশা আকাংক্ষা পূরণ করতে চাইলে অবশ্যই টাকার প্রয়োজন । এবং শুধু টাকা থাকলেই হবে না, সঠিক সময়ে সেই টাকার আপনার হাতে থাকা প্রয়োজন।

আর্থিক পরিকল্পনার মাধ্যমে আপনি অর্থ ব্যবস্থপনাসহ টাকার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারবেন। চলুন আজ আমরা জেনে আসি আর্থিক পরিকল্পনার গুরুত্ব।

১। সঞ্চয় বৃদ্ধি

সঞ্চয় বৃদ্ধি করতে আর্থিক পরিকল্পনার গুরুত্ব অনেক। আর্থিক পরিকল্পনা ছাড়া হয়ত আপনি সঞ্চয় করতে পারবেন কিন্তু সেই সঞ্চয় অর্থবহ হয়ে উঠবে না। এছাড়া আর্থিক পরিকল্পনার উপর আয় এবং ব্যয় নির্ভর করে।

আমরা সবাই জানি আয় এবং ব্যয়ের সাথে সঞ্চয় অতোপ্রতভাবে জড়িত। সুতরাং সঞ্চয় বৃদ্ধি করতে আর্থিক পরিকল্পনা বিশেষ ভূমিকা রাখে। আপনি যখন কোন নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে সঞ্চয় করবেন যেমন, আপনি যখন একটি জমি কেনার পরিকল্পনা করে টাকা সঞ্চয় করবেন তখন অধিক টাকা জমাতে সমর্থ হবেন।

কিন্তু যদি কোন উদ্দেশ্য সামনে না রেখে আপনি টাকা জমাতে শুরু করেন তবে দেখবেন এক দুইমাস পরে আপনার ইচ্ছে বা আগ্রহ কমে যাবে।

আর্থিক পরিকল্পনাই পারে সঞ্চয়ের ধারাবহিকতা বজায় রাখতে।

২। জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন

আমরা অনেকেই বলে থাকি, এত টাকা আয় করি কিন্তু মাস শেষে একটাকাও থাকে না। কিংবা মাসের শেষের দিনগুলো তুলনামূলক খারাপ যায়। এর কারন হলো সঠিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা কিংবা মানি ম্যানেজমেন্ট করতে না পারা।

মানি ম্যানেজমেন্ট করতে চাইলে অবশ্যই আর্থিক পরিকল্পনা বা ফাইন্যাসিয়াল প্ল্যানিং থাকতে হবে। আপনি যদি আপনার মাসিক আয় অনুসারে সারা মাসের খরচের একটি প্ল্যানিং করতে পারেন তবে আপনাকে এমন বিপত্তিতে পড়তে হবে না।

এর সাথে আপনি প্রয়োজনীয় সকল চাহিদা মিটিয়ে সুন্দর ভাবে জীবন যাপনে সক্ষম হয়ে উঠবেন।

৩। খরচ কমাতে সাহায্য করবে

প্রতিনিয়ত বেড়ে যাচ্ছে খরচ। আমাদের জীবনে সবসময়ই চাহিদার তুলনায় যোগান অল্প। কিন্তু তার মধ্যেও অনেকেই সুন্দন ভাবে জীবন যাপন করতে সক্ষম, আবার অনেকেই সক্ষম না। অভাব প্রত্যেকেরই আছে।

মাসিক আয়, ১০,০০০ টাকা কিংবা ৫০,০০০ টাকা হোক, অভাব এবং সীমাহীন চাহিদা প্রত্যেকেরই আছে। তবে নিজ আয়ের মধ্যে সুন্দর ভাবে জীবন যাপনের জন্য অবশ্যই চাই আর্থিক পরিকল্পনা।

আপনার যখন নির্দিষ্ট খাতে নির্দিষ্ট পরিমান টাকা খরচের জন্য পূর্ব-পরিকল্পনা থাকবে, তখন অতিরিক্ত খরচ করার প্রবনতা ক্রমেই কমে যাবে।

৪। বিপদকালীন তহবিল

আর্থিক পরিকল্পনার অন্যতম অংশ হলো বিপদ কালীন তহবিল। আমাদের জীবনে কোন কিছুরই নিশ্চয়তা নেই। জীবনে যে কোনো সময় বিপদ আসতে পার। বেকারত্ব, অসুস্থতা, মৃত্যুসহ জীবনে নানা অনাকাংক্ষিত ঘটনার জন্য প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন।

আপনার যদি একটি সুন্দর আর্থিক পরিকল্পনা থাকে, তবে তার অংশ হিসাবে অবশ্যই বিপদকালীন তহবিল থাকবে এবং যার ফলে আপনি আপনার জীবনের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারবেন।

৫। মানসিক শান্তি

একটি সঠিক এবং সুস্পষ্ট আর্থিক পরিকল্পনা আপনাকে মানসিক ভাবে প্রফুল্ল রাখবে।

যখন আপনার হাতে আপনার নিয়মিত খরচের পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ থাকবে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের জন্য এবং আপনাকে আপনার পরিবারের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য চিন্তা করতে হবে না তখন আপনি আরো নিবিষ্ট মনে লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করতে পারবেন।

একমাত্র আর্থিক পরিকল্পনার মাধ্যমেই যা অর্জন করা সম্ভব। আর্থিক পরিকল্পনা আপনার অর্থ সঠিক ভাবে ব্যয় করতে সাহায্য করবে। আরোও পড়ুন – টাকা ধরে রাখার ৭ টি উপায়

৬। অবসরজনিত পরিকল্পনা

জীবনে কর্মক্ষেত্রে যোগদানের পরপরই আমরা সবাই অবসর জীবন নিয়ে চিন্তা শুরু করি। অনেক অজানা ভয় কাজ করে এই অবসরকালীন সময়কে কেন্দ্র করে।

তবে চিন্তা না করে যদি একটি আর্থিক পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করা যায় তবে সহজেই অবসরকালীন সময়ের জন্য আগাম প্রস্ততি নেওয়া সম্ভব।

আর্থিক পরিকল্পনার কথা সাধারণত আমাদের সমাজে কেউ খোলামেলা আলোচনা করে না। আমরা অনেকেই বিষয়টি এড়িয়ে যাই। কিন্তু জীবনের এমন সময় পৌঁছে আমাদের এই বিষয়ে উপলদ্ধি আসে যখন হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকে না।

আর তাই সময় থাকতে নিজের জীবনের লক্ষ্যের সাথে সাম্যঞ্জস্য রেখে একটি আর্থিক পরিকল্পনা তৈরী করে ফেলুন এবং সেই অনুসারে কাজ করুন।