বাজেট অনুসারে চলতে পারি না, কি করবো?

জীবন মানেই যুদ্ধ, লাগাতার সংগ্রাম। এই যুদ্ধের নিয়ম হল, কোন ভাবেই হার মানা যাবে না। চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। ঠিক যত বার আপনি পড়ে যাবেন, ঠিক তত বারই আপনাকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এটাই একমাত্র আমাদের সফল হওয়ার মূল মন্ত্র।

জীবনে ব্যর্থ হলে কিছু সময়ের জন্য চিন্তা করার সময় দিন, কিন্তু আবার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে আবার প্রথম থেকে শুরু করুন তবে বন্ধ করে দেবেন না। মিতব্যয়ী হওয়া জীবনে সফল হওয়ার অন্যতম পন্থা।

কোন কিছুই অতিরিক্ত ভাল না। আপনি যখনই কিছু অতিরিক্ত করবেন, সেটিই আপনার জন্য ক্ষতিকারক হয়ে পড়বে। যেমন ঘুম শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়।

কিন্তু অতিরিক্ত ঘুম বা শুয়ে থাকা আমাদের উপকারের বদলে অপকার বেশি করে। আপনাকে বুঝতে হবে কতটুকু আপনার প্রয়োজন। সেই প্রয়োজন অনুসারে আপনাকে কাজ করতে হবে।

টাকা পয়সার ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হতে চাইলে, আপনাকে অবশ্যই বাজেট করে চলতে হবে। একটি সুন্দর বাজেট আপনাকে আপনার সকল চাহিদা মেটাতে যেমন সাহায্য করবে, ঠিক সেই সাথে সঞ্চয়ের জন্য সাহায্য করবে।

দোকানে কিছু কিনতে গেলে দোকানীরা সাধারণত বলে, বাজেট করে কিছু হয় না। কথাটি কি সত্য? আসলে বাজেট করেই সবকিছু হয়।

যেমন আপনি যদি ২০০০ টাকা বাজেটের মধ্যে কোন জামা কিনতে চান তবে মার্কেটে গেলে পছন্দ কারনে বেশি হলে ৩০০০ টাকার একটি জামা কিনতে পারেন। কিন্তু কোন ভাবেই আপনি ৫০০০ টাকা বা এর বেশি দামের জামা কিনবেন না।

যদি কেনেন তবে আপনার বাজেট সঠিক ছিল না কিংবা আপনি বাজেট ধরে রাখতে পারেন নি।

আপনি যখন প্রথম সিদ্ধান্ত নিলেন যে ২০০০ টাকার মধ্যে একটি জামা আপনি কিনবেন, তখন  নিশ্চয় আপনি আপনার হাতে থাকা অর্থের কথা বিবেচনা করে কিনেছেন।

এর বাইরে বেশি খরচ করা অর্থ আপনি আপনার অন্য খরচের খাত থেকে টাকাটি আনছেন বা সঞ্চয় থেকে খরচ করছেন। অন্য খবচের খাত থেকে টাকা খরচ করা একটি ভুল সিদ্ধান্ত। কারন তার কারনে সেই খাতটি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

আবার সকলেই সঞ্চয় একটি বড় পরিকল্পনা থেকে করে। সুতরাং সেটিও ব্যাহত হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কি নিজের কোন চাওয়াকে প্রাধান্য দিবো না। অবশ্যই দিবেন। আপনি যা চাইছেন সেটির বিনিময়ে আপনি কি পাচ্ছেন এবং কি হারাচ্ছেন সেটি ভেবে দেখুন।

আমরা খুচরা টাকাকে গুরুত্ব দেই না। কিন্তু মনে রাখবেন প্রতিটি টাকা গুরুত্বপূর্ণ। নিজের ব্যাগের মধ্যে পড়ে থাকা ১০ টাকা, ৫ টাকা , ২ টাকা হিসাব করে দেখুন কমপক্ষে ১০০ টাকা হবে। আমরা এগুলো মূল্যায়নই করি না। কিন্তু একদিন মানিব্যাগ বাসায় ভুলে ফেলে রেখে গেলে সেদিন আপনি বুঝতে পারবেন সেই টাকার মূল্য কত।

আর তাই প্রতিটি টাকাকেই মূল্যায়ন করুন। ৫০০ টাকাই তো, ভেবে বাজেটের বাইরে চলে গেলে দেখবেন সারা মাস জুড়ে সেই ৫০০ টাকার অতিরিক্ত খরচ আপানকে অন্য খরচের সাথে এ্যাডজাস্ট করতে হচ্ছে। সুতরাং একটি ভুলে মাস জুড়েই আপনাকে কষ্ট করতে হচ্ছে।

তাহলে বেশি পরিমান টাকার ক্ষেত্রে আপনাকে কতটা কষ্ট করতে হবে ভেবে দেখুন।

আমরা যারা আয় করি আমাদের সকলেরই বাজেট থাকে। কিন্তু আমরা আসলে পারি না বাজেটের মধ্যে থাকতে। ফলে ১ মাসের টানাটানি চলে যায় পরের মাসে, আবার পরের মাসের সমস্যা চলে যায় তার পরের মাসে। সুতরাং ঝামেলা রীতিমতো চলমান। বাজেটের মধ্যে থাকাটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।

বাজেট অনুসারে কিভাবে চলতে পারবেন এবং মোটিভেশন ধরে রাখতে পারবেন আজ আমরা সেই বিষয়ে আলোচনা করবো।

১। খরচের খাত সমূহ আলাদা করুন

আপনার যে যে খাতে খাতে খরচ হবে আপনি সেটা জানেন, সুতরাং আপনি সেই সেই খাতের জন্য টাকার পরিমান ভাগ করে নিন। নিয়মিত সঞ্চয় করতে চাইলে আপনাক ব্যয়ের আগেই সঞ্চয়ের টাকা সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রতিটি খাতের টাকা আলাদা করে ফেলুন এবং প্রয়োজনে আলাদা আলাদা ব্যাগে রাখুন।

২। বাজেট যুক্তিসংগত করুন

অযৌক্তিক বাজেট করবেন না। আপনি আপনার সারা মাসের খাবারের খাতে ১০০০ টাকা বাজেট নিশ্চয় রাখবেন না। এই টাকায় আপনি ঠিক মতো খেতে পারবেন না, সুতরাং হতাশ হয়ে পড়বেন। ঠিক তেমনি কোন খাতে অতিরিক্ত টাকাও রাখবেন না। আপনি একটি টাকা সঞ্চয় করতে পারলে সেটি আপনারই থাকবে। মনে রাখবেন আপনি যা যা করতে পারবেন, সেটিই আপনার অর্জন।

৩। লক্ষ্য স্থির করুন

লক্ষ্যহীন যাত্রা কখনোই ভাল ফল এনে দিতে পারে না। আপনাকে আপনার লক্ষে স্থির থাকতে হবে। আপনার বাজেট অনুসারে কেন চলবেন, কি কি আপনি অর্জন করতে চান সেই বিষয়ে আপনাকে পরিস্কার ধারনা থাকতে হবে। তাহলেই সফল হবেন।

৪। কল্পনা করুন

কোন কিছু পাওয়ার জন্যই আমরা কোন কিছু ত্যাগস্বীকার করতে রাজি হই। এটাই নিয়ম। আমি দিন শেষে কিছু পাবো না জানলে আমার আগ্রহ কমে যেতে থাকবে এবং এক সময় সব আগ্রহ শেষ হয়ে যাবে। যেমন সঞ্চয় করতে কি কারো ভাল লাগে?

বর্তমান সময়ে কত নিত্যনতুন জিনিস, কত চাহিদা, কত পণ্য। এসবের মধ্যে এডজাস্ট করে আমরা সেভিংস করি শুধুমাত্র ভবিষ্যৎতের কোন স্বপ্নপূরনের আশায় কিংবা কোন বিপদ আপদের ক্ষেত্রে ইর্মাজেন্সি টাকার প্রয়োজনে। কারো স্বপ্ন থাকে বাইক, গাড়ি কিংবা নিজের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

বাজেটের মধ্যে থাকতে হলে আপানাকে কল্পনা করতে হবে আপনি কি চাইছেন। কোন সুখের জন্য আপনি বর্তমান সুখকে পরিত্যাগ করছেন। এই কল্পনাই আপনাকে মোটিভেট রাখতে সাহায্য করবে।

৫। খরচের হিসাব রাখুন

অতিরিক্ত খরচ আমাদের আপনাকে  সবচেয়ে বড় শত্রু। চেষ্টা করবেন নিয়মিত খরচের হিসাব রাখতে। প্রতিদিনের খরচের হিসাবের তালিকা আপনাকে বাজেটে অনুসারে চলতে সাহায্য করবে।

৬। বাজেট এবং অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানুন

জ্ঞান আপনাকে সমৃদ্ধ করবে, আপনাকে উৎসাহিত করবেন। আমরা কিছু না জেনে বা অল্প কিছু জেনে যখন কোন কাজ করি তখন আমাদের যে ইচ্ছে শক্তি থাকে, তারচেয়ে হাজারগুণ বেশি ইচ্ছা শক্তি কাজ করে যখন আমরা কোন বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানি। আর তাই জানতে হবে। কখনো কখনো বাজেটের মধ্যে চলাটা খুবই কষ্টদায়ক।

আরা তাই এমন সময় আপনার জ্ঞান, আপনাকে মোটিভেট থাকতে সাহায্য করবে। চেষ্টা করবেন বাজেট এবং অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে পড়াশোনা করতে। নতুন নতুন কি কি  বিষয় যুক্ত হচ্ছে সেগুলো জানতে। যেমন এখন অনেক এ্যাপ আছে যার মাধ্যমে আপনি আপনার মাসিক খরচের হিসাব করেত পারেন খুব সহজেই।

সারা মাসের খরচের হিসাব করতে পারলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কোথায় আপনি অতিরিক্ত খরচ করছেন, কোথায় সঠিক পরিমান খরচ করছেন।

৭। নিজের জন্য বাজেট রাখুন

জীবনের জন্য বিনোদনও গুরুত্বপূর্ন। আপনি সবসময় কাজ করলে বিরক্ত চলে আসবে। আবার সব সময় সঞ্চয় করলে আপনার কিছুদিন পর হতাশ লাগবে। জীবনে সময়টাও গুরুত্বপূর্ন। ২৫ বছরে আপনার যা করতে ইচ্ছে করবে, ৫০ বছরে যেয়ে আপনার সেটি করতে ইচ্ছে করবে না।

আবার ইচ্ছে করলেও আপনার সেটি করার সামর্থও হয়তো থাকবে না। সুতরাং নিজের আনন্দ, বিনোদনের জন্যও বাজেট রাখুন। এতে আপনি মোটিভেশন ধরে রাখতে পারবেন দীর্ঘসময়।

আরো পড়ুন – জানি সঞ্চয় প্রয়োজনীয়, কিন্তু সঞ্চয় করতে পারি না – উপায়?

৮। বড় বা ছোট অর্জন সেলিব্রেট করুন

জীবনে উপবোগ করুন। নিজেই নিজেকে উৎসাহিত করুন। ছোট বা  বড় যেকোন অর্জনের জন্যই নিজেকে পুরুস্কৃত করুন।

আপনি যে পরিশ্রম করছেন তার জন্য যখন আপনি পুরস্কার পাবেন তখন আরো কিছু অর্জনের জন্য আপনার চেষ্টা বেড়ে যাবে।

নিজেকে কখনোই বঞ্চিত করবেন না। আপনি নিজেকে যতটা মোটিভেট করতে পারবেন, অন্য কেউ আপনাকে এত বেশি মোটিভেট করতে পারবেন না।

৯। বন্ধু নির্বাচনে সর্তক হোন

সেই মানুষদের সংস্পর্শে থাকার চেষ্ট করুন, যারা আপনাকে সম্মান করে, আপনার চিন্তা ভাবনাকে শ্রদ্ধা করে। এটি আপনাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। আপনি যদি মিতব্যয়ী হতে চান, এবং আপনার আশে পাশের মানুষগুলো যদি অতিরিক্ত খরচের প্রতি আগ্রহী তবে এটা আপনার বিপদজনক।

আপনি অনুপ্রেরনা ধরে রাখতে পারবেন না এবং স্রোতে ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই কার কার সাথে আপনি মেলামেশা করেন, তারা কি নিয়ে আলোচনা করছে সেই বিষয়ে চিন্তা করুন। আপনি কি শিখছেন তাদের থেকে সেটিও চিন্তা করার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

১০। থেমে যাবেন না

কখনোই থেমে যাবেন না। আজ যদি অতিরিক্ত কোন খরচ করেন, তবে তা ভেবে হাল ছেড়ে দিবেন না। বরং সেখান থেকে শিক্ষা নিন এবং সেই অতিরিক্ত খরচ কিভাবে পুষিয়ে নেওয়া যায়, সেই বিষয়ে ভাবুন। একদিন হয় নি বলে পরের দিনও হবে না, এমন কোন কথা নেই। আপনার কাজ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া, সফলতা তখন এমনিই ধরা দিবে।

জীবনের বাইরের কিছু নয়, বরং বাজেটকে জীবনের অংশ মনে করুন। ১ মাস বা ২ মাসের জন্য বাজেট নয়। আপনি ২০০০০ টাকা আয় করুন বা ৫০০০০ টাকা আয় করুন, আপনাকে মনে রাখতে হবে একমাত্র বাজেট করে চললেই আপনি সুন্দরভাবে সবকিছু পরিচালনা করতে পারবেন। নিজের উপর বিশ্বাস এবং চেষ্টাই আপনাকে সফলতা এনে দিবে।