ব্যাংকে চাকরি করতে চান? পেশা হিসাবে ব্যাংকিং কেমন

ব্যাংকে চাকরি করতে চান? পেশা হিসাবে ব্যাংকিং কেমন

ব্যাংকে চাকরি করতে চান

ব্যাংকে চাকরি 

বিশ্ব বাজারে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কাজের সুযোগ বাড়ছে। নতুন নতুন উদ্যোক্তরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছে, অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। পেশা হিসাবে ব্যাংকিং খাত খুবই পুরোনো একটি খাত হলেও বিশ্ববাজারে এর চাহিদা এখনো অনেক।

আমাদের দেশে ব্যাংকে চাকরি করা অনেক বেশি সম্মানীয় পেশা হিসাবেই দেখা হয়। সামাজিক মর্যাদা এবং অর্থনৈতিক সচ্ছলতার জন্য ব্যাংক নিঃসন্দেহে একটি লোভনীয় পেশা।

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হলো, বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকে মোট ২ শ্রেনিতে ভাগ করা হয়েছে,

১। তালিকাভুক্ত ব্যাংক,

২। অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক।

বাংলাদেশের মোট তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা হলো ৬১টি, যার মধ্যে ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক, বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক ৪৩টি, বিশেষায়িত ব্যাংক ৩টি এবং বিদেশী ব্যাংক ৯টি এবং অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা হলো ৫টি।

দিন দিন বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা বাড়ছে। বেসরকারি ব্যাংকের মূল কার্যালয়ের পাশাপাশি তাদের আরো বিভিন্ন আউটলেটের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

গ্রাহকসেবা সহজ করতে বুথসহ বিভিন্ন এলাকা ভিত্তিক ছোট ছোট কার্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছে ক্রমান্বয়ে। এজেন্ট ব্যাংকিং আরো অনেক নতুন কাজের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছে। সুতরাং পেশা হিসাবে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ এই শাখাটি।

ব্যাংকে চাকরি করতে যে শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন

সরকারী ব্যাংকে চাকুরি জন্য নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন যেকোন বিষয়ে স্নাতক। অর্থ্যাৎ “ব্যাকগ্রাউন্ড” ও এক্ষেত্রে জরুরী না।

বিজ্ঞান, ব্যবসায়িক বা কলা বিভাগের যেকোন বিষয়ে স্নাতক শেষ করলেই, আপনি সরকারী ব্যাংকের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে সাধারণত উল্লেখ থাকে, কোনো পর্যায়ে তৃতীয় শ্রেনী গ্রহণযোগ্য নয়।

কোন কোন পদের জন্য এমন নাও থাকতে পারে। সিজিপিএ অনুসারে স্কেলে ৩ বা এর বেশি হলে প্রথম শ্রেণি এবং ২.২৫ থেকে ৩ এর নিচ পর্যন্ত দ্বিতীয় শ্রেণি ধরা হয়।

বেসরকারী ব্যাংকের ক্ষেত্রেও যেকোন বিভাগের স্নাতক পাশ করলে যদি চাকরী বিজ্ঞপ্তিতে কোন নির্দিষ্ট বিষয় উল্লেখ না থাকে তবে আবেদন করা যায়।

বিশেষ বিশেষ পদের ক্ষেত্রে বেসরকারী ব্যাংকসমূহ স্নাতকোত্তরসহ কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে উপর স্নাতক পাশ চেয়ে থাকে। তবে সকল বিভাগের স্নাতক পাশ ছাত্র-ছাত্রীর জন্যই ব্যাংকিং একটি ভাল চমৎকার পেশা।

ব্যাংকের চাকুরির ক্ষেত্রে প্রথমে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করতে হয়। লিখিত পরীক্ষার পর উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়।

ব্যাংকে চাকুরির জন্য যে সকল অভিজ্ঞতা লাগে

সাধারনত ব্যাংকের উচ্চ পদের জন্য অভিজ্ঞতার উল্লেখ করা হয়ে থাকে। এখন অনেক বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে নতুনদের আবেদনের জন্য উৎসাহিত করা হয়ে থাকে। সুতরাং নতুনদের জন্য সম্ভাবনাময় একটি খাত হলো ব্যাংক।

অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা

ব্যাংকে চাকরির ক্ষেত্রে মূল বেতনের পাশাপাশি আরো বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা রয়েছে যেমন-

# বছরে ২টি উৎসব ভাতা

# লভ্যাংশ বোনাস (বছরে প্রায় ২/৩ টি)

# বিভিন্ন ধরনের ঋণ সুবিধা

বর্তমানে বেসরকারি ব্যাংকসমূহ নতুন প্রজন্মের সাথে কাজ করতে বেশ আগ্রহী। প্রতিনিয়ত চাহিদা বাড়ছে। এককথাও সত্যি যে, দিন দিন প্রতিযোগিতাও বাড়ছে।

সততা ব্যাংকিং পেশায় কাজ করার মূল যোগ্যতা। সততা ও পরিশ্রমের সাথে কাজ করলে আপনি খুব দ্রুত উন্নতি করতে পারবেন। অনেকেই ছোট পোস্টে আবেদন করতে চায় না। প্রথমেই বড় পোস্টে কাজ পাওয়াটা অনেক চ্যালেঞ্জিং।

সাধারণত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোকেদেরই সেক্ষেত্রে সুযোগ দেওয়া হয়। তাই ছোট ছোট পোস্টে কাজ করে কাজ শেখার এই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। পরিশ্রম করতে পারলে আপনি সহজেই উপরে উঠতে পারবেন।

অনেকের ধারণা থাকে তুলনামূলক ছোট পোস্টে কাজ করলে উপরে ওঠার সুযোগ কম। এটি ভুল কথা, বরং অভিজ্ঞতা অর্জন আপনার সামনে চলার পথকে আরো বেশি সহজ করে তুলবে।

সার্বিক ভাবে বিবেচনা করলে অনেক সম্ভাবনাময় একটি পেশা হলো ব্যাংকিং। অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা থেকে শুরু করে সামাজিক সম্মান সবই আপনি অর্জন করতে পারেন এই পেশার মধ্য দিয়ে।

স্মার্ট হওয়ার সাথে সাথে আপনাকে প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। কারণ হাতের মুঠোয় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রযুক্তির ওপর এই সেবার নির্ভরতা বাড়ছে দিন দিন। মেধাবী শিক্ষার্থীরা দিন দিন আকৃষ্ট হচ্ছে এই পেশার দিকে। পরিশ্রম আর চেষ্টা করলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে আপনিও উন্নতি করতে পারবেন অনন্য সম্ভাবনাময় এই খাতে।

চাহিদাময় এই ব্যাংকিং পেশায় আছে কাজ করার অনেক সুযোগ, অনেক পদ। একটি আধুনিক ব্যাংকে সাধারণত বিভিন্ন বিভাগ থাকে। সরাসরি টাকার সাথে সম্পৃক্ত অনেক কাজের পাশাপাশি আছে অনেক ডেস্ক জব।

গ্রাহক সেবার পাশাপাশি জনসংযোগও বর্তমানে ব্যাংকের একটি বিভাগ। সাধারণত প্রাথমিক স্তরে শিক্ষানবিশ বা, ট্রেইনিং অফিসার অথবা জুনিয়র অফিসার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এরপর পদোন্নতির মাধ্যমে এভিপি, ভিপি, এসভিপি থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হওয়ার সুযোগ আছে। মেধা, পরিশ্রম, দক্ষতা, সততা আর নিষ্ঠার সাথে কাজ করলে এই পেশায় ব্যাপক উন্নতি করা সম্ভব।

শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি ব্যাংকিং পেশায় ক্যারিয়ার গড়ার জন্য যে বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ন

১। সততা এবং নৈতিকতা

ব্যাংকিং পেশায় সফল ক্যারিয়ার গড়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই সততা এবং নৈতিকতার পরিচয় দিতে হবে। টাকা পয়সা লেনদেনের ক্ষেত্রে আপনার স্বচ্ছতা এক্ষেত্রে একান্ত কাম্য। প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুগত্য এবং সামাজিকতা আপনার সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথকে প্রশস্ত করবে।

২। প্রযুক্তিগত জ্ঞান

সম্ভাবনাময় এই খাতে আপনার প্রযুক্তি জ্ঞান, আপনাকে এগিয়ে রাখবে অনেকটা। প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার চাহিদা যেমন বাড়ছে, তেমনি এই বিষয়ে পারদর্শীদের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে।

৩। ইংরেজি ভাষার ওপর দক্ষতা

বর্তমানে সকল পেশার মতোই এ পেশাতেও ইংরেজির চাহিদা ব্যাপক। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা থেকেই এই বিষয়ে যাচাই করা হয়। সুতরাং চাকুরি পাওয়া এবং পরবর্তী উন্নতির জন্য ইংরেজি ভাষার ওপর দক্ষতা প্রয়োজন।

৪। স্মার্ট হওয়ার বিকল্প নেই

ব্যাংকিং পেশার জন্য আপনাকে স্মার্ট হতেই হবে। চটজলদি অন্যের কথা বুঝে তার সঠিক প্রতি উত্তর দিতে জানতে হবে। বিষয়টি জানা না থাকলে সেক্ষেত্রে জানার চেষ্টা করুন, তবে গ্রাহকে সেটা বুঝতে দিবেন না।

আরোও পড়ুন –

পাইলট হিসেবে ক্যারিয়ার

ক্যারিয়ার হিসেবে নার্সিং

পেশা হিসেবে ফিজিওথেরাপি কেমন

৫। ধৈর্য্য

আমরা সকলেই জানি, ধৈর্য্য ছাড়া জীবনে উন্নতি করা যায় না। সফলতার জন্য চাই ধের্য্য। আপনি যদি ব্যাংকিং পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই ধের্য্য ধারণ করতে হবে।

৬। গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করুন

ব্যাংকের সকল কাজই হলো গ্রাহক কেন্দ্রিক। তাই গ্রাহক সেবায় আন্তরিক হোন। প্রতিটি গ্রাহকই আপনার জন্য সমান এবং গুরুতপূর্ন, একথা ভুলে যাবেন না। সামাজিকতার বিষয়টিও লক্ষ্য রাখুন।

৭। পরিবর্তন মেনে নিন এবং আপডেট থাকার চেষ্টা করুন

পূর্বের ব্যাংকিং ব্যবস্থা আর বর্তমান ব্যবস্থা এখন আকাশ-পাতাল তফাত। প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেেেছ ব্যাপক।

তারাই টিকে আছেন, যারা পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তত হতে পেরেছেন।

ভবিৎষতের যেকোন ধরনের নতুন পরিবর্তনে সাথে সহজে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মানসিকতা রাখুন। ব্যাংকিং বিষয়ে নিজেকে আপডেট রাখার চেষ্টা করুন।

সাধারণত ব্যয় সংকোচনের জন্য ওই ধরনের কর্মী ছাঁটাই দেখা যায় না ব্যাংকিং সেক্টরে’। সুতরাং টালমাটাল চাকরির এই বর্তমান সময়ে ব্যাংক তুলনামূলক একটি নিরাপদ খাত। দিন দিন কাজের পরিসর বাড়ছে, কর্মীর প্রয়োজন বাড়ছে।

সবচেয়ে বেশি আনন্দের বিষয় হলো, ব্যাংকিং এই খাত তরুণ প্রজন্মের বিষয়ে অনেক আগ্রহী। অপার সম্ভাবনাময় এই খাতে রয়েছে সুন্দর কাজের পরিবেশ, বাজারগত ভাবে চাকরির নিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, সামাজিক মান মর্যাদা।

অন্য যেকোন পেশার চেয়ে ব্যাংকিং পেশায় সুযোগ সুবিধা তুলনামূলক বেশি। দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সুযোগও আছে।

তাই ক্যারিয়ার হিসাবে আপনিও বেছে নিতে পারেন ব্যাংকিং পেশাকে। পরিশ্রম আর মেধাকে কাজে লাগিয়ে আপনি পৌঁছে যেতে পারেন সফলতার শীর্ষে। ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল- Bangla Preneur