বাংলাদেশের বিনিয়োগ মাধ্যম – বিনিয়োগ করব কোথায়
বাংলাদেশের বিনিয়োগ মাধ্যম – বিনিয়োগ করব কোথায়

বিনিয়োগ করব কোথায়
আয়কৃত সকল টাকা আমরা খরচ করি না। কিছু টাকা সঞ্চয় করি। মূলত আমরা সঞ্চয় করি বিপদের দিনের জন্য। তবে মনের কোণে সুপ্ত অনেক বাসনা থাকে সঞ্চয়ের এই টাকা নিয়ে।
অনেকেই সঞ্চয়ের টাকা পরবর্তীতে বিনিয়োগ করতে চান। জমাকৃত টাকা যক্ষের ধনের মতন আগলে না রেখে চাইলেই বিনিয়োগ করতে পারেন। আয়ের উৎস বাড়ানোরর এই চিন্তা নিঃসন্দেহে বুদ্ধিমানের কাজ।
চাকুরিজীবী বা ব্যবসায়ী যে কেউ আয়ের ২/৩ টি উৎস রাখতে পারলে জীবনে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আবার জমাকৃত টাকা যেমন আপনাকে শক্তিশালী করে তোলে, তেমনি বিনিয়োগ আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। আর তাই বিনিয়োগ চমৎকার একটি সিদ্ধান্ত।
বিনিয়োগ করতে চান কিন্তু কোথায় বিনিয়োগ করবেন। বাংলাদেশের বিনিয়োগের মাধ্যমগুলো নিয়ে আমরা আজ আলোচনা করবো।
১। শেয়ার বাজার
শেয়ার বাজার শুনলেই আমদের অনেকেরই ভ্রু কুঁচকে যায়, চোখের সামনে ভেসে উঠে জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া এক ক্লান্ত মানুষের চিত্র। আসলেই কি তাই?
আসলে অনেক ক্ষেত্রেই চিত্রটি ভিন্ন। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ নিঃসন্দেহে ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু আপনি যদি ঝুঁকি নিতে ভয় না পান তবে আয়ের একটি অসাধারণ উৎস হতে পারে শেয়ার বাজার।
তবে বিনিয়োগ করতে হবে জেনে বুঝে। অন্ধ অনুকরণ না করে, যাচাই বাছাই করে শেয়ার কিনতে হবে। কোন কাজেই জ্ঞানের কোন বিকল্প নেই।
আর তাই শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে চাইলে বিষয়টি নিয়ে জানার চেষ্টা করুন। বর্তমানে ইউটিউবে প্রচুর ভিডিও, গুগুলে অনেক লেখা পাবেন শেয়ার বাজার সংক্রান্ত।
বাড়ি বসে নিজের অবসর সময়ে আপনি শিখতে পারেন শেয়ার ব্যবসা। তবে কখনোই ধার করে শেয়ার বাজারে টাকা বিনিয়োগ করবেন না।
যে টাকার ওপর আগামী ১ বছর আপনি নির্ভরশীল নন, তেমন টাকাই বিনিয়োগ করুন। বাজার যাচাই করে তারপর বিনিয়োগ করুন শেয়ার বাজারে।
সময় এবং ধৈর্য্য নিয়ে শেয়ার বাজারে আসলে আপনি সফল হতে পারবেন।
২। ব্যাংক
ব্যাংক আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয় মাধ্যম। আমরা অনেকেই ব্যাংকে টাকা সঞ্চয় করি। ব্যাংকে বিভিন্ন ধরনের মেয়াদে ৪-৮ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়।
৩। সঞ্চয়পত্র
সরকারের আওতাধীন সঞ্চয়পত্রে প্রচুর মানুষ বিনিয়োগ করেন। সাধারণ মানুষের হাতে জমানো টাকা সরকারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে বিনিয়োগ করাই হল সঞ্চয়পত্রের মূল্য উদ্দেশ্য। বাংলাদেশে ৪ ধরনের সঞ্চয়পত্র আছে।
ক) ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র: মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ । ১৯৭৭ সালে চালু হওয়া এই সঞ্চয়পত্র বাংলাদেশের যে কোন নাগরিক কিনতে পারবে। ব্যক্তি নিজের নামে ৩০ লাখ টাকা এবং যৌথ নামে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারে।
খ) ৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র: ৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে মুনাফা দেওয়া হয় ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ। ১৯৯৮ সালে চালু হওয়া এই সঞ্চয়পত্র আপনি ১ লাখ, ২লাখ, ৫ রাখ ও ১০লাখ টাকা মূল্যমানে কিনতে পারবেন। একক নামে ৩০ লাখ এবং যৌথ নামে ৬০লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় পত্র কেনা যায়। এটি সকলে কিনতে পারে।
গ) পেনশনার সঞ্চয়পত্র: ২০০৪ সালে চালু হয় পেনশন সঞ্চয়পত্র। যার মুনাফা দেওয়া হয় ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ৫০ হাজার, ১ লাখ, ৫ লাখ এবং ১০ লাখ টাকার মূল্যমানে এই সঞ্চয়পত্র আপনি ক্রয় করতে পারবেন।
তিন মাস পর পর আপনি মুনাফা উত্তোলন করতে পারবেন। অবসারপ্রাপ্ত সরকারি অথবা অর্ধ সরকারী, স্বায়ত্তশাষিত, অর্ধ স্বায়ত্তশাষিত প্রতিষ্ঠনের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা এবং মৃত চাকুরিজীবীর স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানেরা এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবে।
অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি স্বশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও এই ক্যাটাগরির আওতাধীন।
ঘ) পারিবারিক সঞ্চয়পত্র: ৫ বছর ভিত্তিক এই সঞ্চয়পত্রে মুনাফা ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। ২০০৯ সালে চালু হওয়া এই সঞ্চয়পত্রটি বিক্রি হয় ১০ হাজার, ২০ হাজার, ৫০ হাজার, ১ লাখ, ২লাখ, ৫ লাখ ্এবং ১০ লাখ টাকা মূলে।
তবে শুধুমাত্র ১৮ বছর বা তদোর্ধ বয়সী নারী, শারীরিক প্রতিবন্ধী যে কোন নারী বা পুরুষ এবং ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী নারী পুরুষ এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারে।
একজনের নামে সর্ব্বোচ ৪৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যায়।
* ডাকঘর সঞ্চয় পত্র নামে বাংলাদেশে আরো একটি স্কিম আছে যা, শুধু মাত্র ডাকঘর থেকে লেনদেন করা হয়। সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। যে কেউ এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারে।
৪। প্রাইজ বন্ড
বাংলাদেশের অনেকেই প্রাইজ বন্ডের ওপর বিনিয়োগ করেন। ১৯৭৪ সালে প্রথম প্রাইজবন্ড ছাড়া হয়। বর্তমানে ১০০ টাকার প্রাইজ বন্ড চালু আছে। তবে প্রাইজ বন্ডের বিপরীতে কোন মুনাফা দেওয়া হয় না। মোট ১ হাজার ৯৭৮ টি পুরুস্কার আছে।
তিন মাস পর পর ড্র অনুষ্ঠানে প্রথম পুরুস্কার ৬ লাখ টাকা, দ্বিতীয় পুরুস্কার ৩ লাখ ২৫ হাজার এবং তৃতীয় পুরুস্কার ১ লাখ টাকা।
ঝুঁকিহীন এই শাখায় অনেকেই বিনিয়োগ করেন। পুরস্কারের টাকার ওপর ২০% কর দিতে হয়। আবেদনের ২ মাসের মধ্যে সাধারণত পে অর্ডারের মাধ্যমে বিজয়ীকে টাকা দেওয়া হয়। যে কোন ব্যাংক থেকে আপনি অতি সহজেই প্রাইজ বন্ড কিনতে পারেন।
৫। বন্ড
বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজিত নিলামের মাধ্যমে অনেকেই বন্ড কিনে থাকেন। বিনিয়োগের আরো একটি মাধ্যম হল বন্ড। সাধারণত ৭-১২ শতাংশ মুনাফা হাওয়া যায়। প্রত্যেকটি বন্ডের মূল্য ১ লাখ টাকা।
৬। বীমা
বীমা শুনলেই আমাদের মনে হয় ঝুঁকি কমানোর প্রক্রিয়া। তবে বীমা বিনিয়োগের একটি ভাল মাধ্যম। ঝুঁকি কমানোর সাথে সাথে মেয়াদান্তে মুনাফাও পাওয়া যায়। বাংলাদেশে অনেকগুলো বীমা কোম্পানী সুনামের সাথে কাজ করছে।
টাকা উপার্জন করতে সকলেরই কষ্ট হয়। আপনার মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কষ্টে অর্জিত টাকাকে বিনিয়োগ করবেন বুঝে শুনে।
কথায় বলে, ২ পা দিয়েই কখনো গভীরতা মাপতে যাবেন না। নিজের সব টাকা কখনোই একই খাতে বিনিয়োগ করবেন না।
ততটুকুই ঝুঁকি নিন যতটুকু আপনি পুষিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন । যাচাই বাছাই করে বিনিয়োগ করলে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। ইউটিউব চ্যানেল থেকে ঘুরে আসুন – Bangla Preneur