শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে এই ৫টি বাধা দূর করুন

বাংলাদেশ সাড়ে যোল কোটি বেশী মানুষের একটি দেশ যেখানে মাত্র ১% মানুষ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে। যেখানে আমেরিকায় প্রায় প্রতিটি পরিবারের একজন শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে করে।

ইন্ডিয়ার মোট জনসংখ্যার ২% এবং চায়নাতে মোট জনসংখ্যার ৭% মানুষ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে করে।

মোটামুটি অন্যদেশের তুলনায় বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে কম সংখ্যক মানুষ বিনিয়োগ করে।

তবে পজিটিভ দিক হচ্ছে বর্তমানে আগের তুলনায় অনেক বেশী মানুষ শেয়ার বাজারে আসছে যা সামনের দিনগুলোতে অবশ্যই একটি ভালো মার্কেটের সুযোগ করে দিবে।

আমাদের মধ্যে অনেকের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার ইচ্ছা থাকলেও নানা কারনে সেই ইচ্ছাকে বাস্তবরূপ দিতে পারি না।

আসুন শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের ৫টি বড় বাধা কি কি এবং কিভাবে দূর করা যেতে পারে তা জানার চেষ্টা করি।

#১। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে অতিরিক্ত ভয়

আমাদের দেশের শেয়ার বাজার সম্পর্কে ৯০% মানুষের ধারনা একই। এই ৯০% মানুষ মনে করে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করলেই লস হবে কিংবা মূলধন হারানো যাবে, তবে বিশ্বাস করুন বিষয়টা মোটেই এই রকম না।

অনেকে আবার শেয়ার বাজারকে জুয়া খেলার সাথে মিলিয়ে ফেলে। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ একটি ব্যবসা যেখানে অবশ্যই RISK বা ঝুঁকি আছে তবে এটি কখনই জুয়া খেলা না।

আমরা সবাই জানি জুয়া খেলা এই রকম কিছু যেখানে, ১০০ টাকা লাগালে হয় ২০০ টাকা বা তার বেশী টাকা পাওয়া যাবে নয়ত এক টাকাও পাওয়া যাবে না।

আর শেয়ার বাজারে কোম্পানির পারফরমেন্সের উপর শেয়ারের দাম উঠা নামা করে।

কোম্পানি ভালো করলে এবং আপনি যদি ঐ কোম্পানির আংশিক শেয়ারহোল্ডার হয়ে থাকেন তবে লাভ করবেন।

আবার কোম্পানি খারাপ করলে আপনি সাময়িক লসে থাকবেন। এইখানে লস মানে আপনার টাকা শূন্য হয়ে যাবে না, আপনি কোম্পানির আংশিক মালিকই থাকবেন এবং কোম্পানি ভালো করলে আপনি আবার লাভ করতে পারবেন।

তাই কোন কোম্পানিতে আপনি বিনিয়োগ করছেন তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কোম্পানির বিগত বছরগুলোর পারফরমেন্স কেমন ছিল, পরিচালক কারা, কোম্পানির সুনাম কেমন, ঐ কোম্পানি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সাইকোলজি কেমন, ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে কোম্পানি নির্বাচন করতে হবে।

এছাড়া আপনি যেই দামে কোনো একটি কোম্পানির শেয়ার কিনবেন সেই দাম ঐ কোম্পানি পাওয়ার যোগ্য কিনা না যাচাই করে নিতে হবে।

মূল কথা, আপনি কোন কোম্পানিতে টাকা ও ধৈর্য বিনিয়োগ করবেন তার উপর আপনার লাভ ক্ষতি অনেকটাই নির্ভর করবে।

#২। পর্যাপ্ত টাকা না থাকা

এই সমস্যা আমাদের ৯৫ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আপনার যদি টাকা নাই থাকে তবে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে পারবেন না।

শেয়ার বাজারে এমন টাকা বিনিয়োগ করতে হবে যা কমপক্ষে ১ বছরের মধ্যে লাগবে না। এই ক্ষেএে তাহলে করনীয় কি?

সমাধান একটাই টাকার ব্যবস্থা করতে হবে।

আপনাকে হয়ত আরেকটি পার্ট-টাইম চাকরি করতে হবে নয়ত আরেকটি ব্যবসা করতে হবে। আপনার নিত্যদিনের খরচ কমাতে হবে।

যদি আপনি সত্যিকার অর্থে আর্থিক স্বাধীনতার মুখ দেখতে চান তবে আপনার অন্য উৎস থেকে আয় সরিয়ে রেখে বিনিয়োগ করা যায় কিনা তা নিয়ে চিন্তা করতে হয়।

#৩। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে ঝুঁকি নিতে না চাওয়া

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এটি একটি ব্যবসাও বটেও। যে কোনো ব্যবসার ন্যায় এই ব্যবসাতেও ঝুঁকি রয়েছে।

তবে আপনি যদি চান তাহলে কিছুটা ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।

যেমন ধরুন দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করতে হবে, Z ক্যাটাগরির দুর্বল শেয়ার কেনা যাবে না, একই ক্যাটাগরির শেয়ারে সব টাকা বিনিয়োগ করা যাবে না, ইত্যাদি।

সর্বোপরি, শেয়ার বাজারে ঝুঁকি নিতেই হবে তবে তা আপনার আর্থিক অবস্থার উপর ভিত্তি করেই নিতে হবে।

#৪। অত্যন্ত কঠিন

অনেকেই শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকে অত্যন্ত কঠিন বলে আখ্যায়িত করে থাকেন।

মূলত নির্দিষ্ট জীবনধারায় অভ্যস্ত হয়ে গেলে নতুন যে কোনো কিছুই কঠিন বলে মনে হয়। শেয়ার বাজার প্রকৃত অর্থে খুব বেশী একটা কঠিন না।

আপনার মধ্যে যদি জানার আগ্রহ থাকে তবে অল্পদিনের মধ্যেই শেয়ার বাজার সম্পর্কে ধারনা পাবেন। তবে কোনো অবস্থাতেই না বুঝে শুনে বিনিয়োগ করবেন না।

#৫। গড়িমসি করা

আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ আছি যারা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের ক্ষেএে বেশ গড়িমসি করি।

এই আজকে বিও অ্যাকাউন্ট খুলব, না থাক কালকে খুলব, পরে দেখা যায় যে আর অ্যাকাউন্ট-ই খোলা হয় না।

এই ক্ষেএে একটি বিষয় আমাদের মনে রাখা উচিত, যদি কোন উৎস থেকে ভালো কিছুর আহবান করা হয় এবং সেই বিষয় আপনার জানা না থাকে তারপরও “হ্যাঁ” বলা উচিত।

কেননা “হ্যাঁ” বলার পরে আপনি চাইলে বিষয়টি শিখতে পারবেন আর যদি শুরুতেই “না” বলে দেন তবে তা এখানেই বিদায়! – লিখেছেনঃ কে এম চিশতি সিয়াম – ইউটিউব লিঙ্ক