বিভিন্ন জাতের কলা চাষ করার পদ্ধতি

বিভিন্ন জাতের কলা চাষ করার পদ্ধতি

কলা চাষ করার পদ্ধতি

কলা চাষ করার পদ্ধতি

কলা একটি অর্থকারী ফসল। আজকে আমরা জানব কলা চাষ করার পদ্ধতি, কেন কলা চাষ করবেন, কলার বিভিন্ন জাত পরিচিত, কলা চাষে করনীয় কি, কলা গাছের পরিচর্যা, কোন মাটিতে কলা ভাল হয়, কলা চাষে লাভ কেমন হয় ইত্যাদি। আসুন কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় চলে যাই।

কলা নিয়ে একটি বিখ্যাত খনার বচন আছে। বচনটি হলো- কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত। এই খনার বচনটি যদি আমরা একটু গভীর ভাবে চিন্তা করি তাহলে বুজতে পারব কলা কত গুরুত্বপূর্ণ অর্থকারী ফসল। সাধারন ফলের তুলনায় কলা সস্তা, সহজলভ্য, এবং বছরের সব সময়  পাওয়া যায়। আমাদের দেশে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে ১০ লাখ অধিক টন কলা উৎপন্ন হয়। দেশের সব অঞ্চলে কলার ফলন হয়। বাণিজ্যিকভাবে পার্বত্য চট্রগ্রাম, বগুড়া, ঢাকা, দিনাজপুর, পাবনা, যশোর ইত্যাদি জেলায় কলার চাষ করা হয়।

কলা চাষ করার আগে কলার উপকারিতা জেনে নিন

কলা পৃথিবীর মোটামুটি সব দেশেই পাওয়া যায়। কলার বিস্তারিত উপকারিতা এখানে উল্লেখ করছি না। এখানে খুবই সংক্ষেপে কলার উপকারিতা দেওয়া হলো।

কলা হতাশা কমায়, মুড ভালো করে, উচ্চ রক্তচাপ কমায়, তাৎক্ষনিক শক্তি  যোগাড় করে, বুক জ্বালাপোড়া কমায়, এমন কি কলায় মাইগ্রেনের ব্যথা উপশম করে। প্রতিদিন কলা খেলে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়া ঝুঁকি কমায়। কলা প্রাকৃতিক এন্টাসিডের মত কাজ করে। এছাড়া কলার আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে।

কলার বিভিন্ন জাত পরিচিত

বাংলাদেশে কমপক্ষে ৪০ টির অধিক কলার জাত রয়েছে। এর মধ্যে সবরি কলা, কবরি কলা, চাঁপা কলা, বীচিকলা, অমৃত সাগর, আনাজি কলা ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দেশী সবরি কলার চাহিদা অন্য কলার চেয়ে বেশী। বারিকলা ১,২,৩,৪ নামে চারটি উচ্চফলনশীল কলা উদ্ভাবন করা হেয়েছে। কলা চাষিদের কাছে বারিকলা ১ এর চাহিদা বেশী। এই জাঁতের কলা পাকার পর উজ্জল হলুদ রঙ এবং খেতে বেশ সুস্বাদু। বারিকলা ২ তরকারী খাওয়ার একটি অধিকফলনশীল জাত।

কলা চাষের জন্য উপযুক্ত মাটি- দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি কলা চাষের জন্য সব থেকে ভাল। যে স্থানে কলা চাষ হবে তা যেন উঁচু ও পর্যাপ্ত রোদযুক্ত হয় তা খেয়াল রাখতে হবে। তাছাড়া বৃষ্টির পানি না জমে থাকে তার ব্যবস্থাও রাখতে হবে।

কলার চারা রোপনের সময়

বানিজ্যিক ভাবে কলা চাষ করার জন্য বছরের তিনটি সময়ে আপনি কলার চারা রোপন করতে পারবেন। উপযুক্ত সময়-

  • আশ্বিন থেকে কার্তিক
  • মাঘ থেকে ফালগুণ
  • চৈত্র থেকে বৈশাক

এই তিন সময়ের মধ্যে আশ্বিন থেকে কার্তিক মাসে কলার চারা রোপন করাই উত্তম, কেননা এই সময়ে রোপনকৃত গাছে বেশী ফলন হয়।

কলা চাষের জন্য জমি প্রস্তুত

অপেক্ষাকৃত উচু জমি যেখানে সূর্যের আলো পড়ে এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে এমন জমি কলা চাষের জন্য উপযুক্ত।  প্রথমে নির্ধারিত জমি ভালো ও গভীর ভাবে চাষ করে নিতে হবে। উপরের মাটি ও নিচের মাটি ভালোভাবে মিশিয়ে চাষ করতে হবে।

কলার চারা রোপনের জন্য দুই মিটার দূরে দূরে ৬৫ সে.মি দৈঘ্য, ঠিক তেমনি ৬৫ সে.মি প্রস্থ ও ৬৫ সে.মি গভীর করে গর্ত করতে হবে। রোপনের সময় চারা গোড়ার কাটা অংশটি দক্ষিন দিকে রেখে রোপন করা উচিত, এতে কলার কাঁদিটি উত্তম দিকে বের হয়। পড়ুন – দুগ্ধ খামার স্থাপনের জন্য স্থান নির্বাচন

কলা চাষে সার প্রয়োগ ও পরিচর্যা

চারা রোপনের জন্য গর্ত করে রোপনের ঠিক ১৫ দিন আগে প্রতি গর্তে ১৫ কেজি গোবর, ৬০০ গ্রাম সরিষার খৈল, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার মিশিয়ে রাখতে হবে। রোপণ হয়ে যাওয়ার পর ৪৫ দিন পরে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ১০০ গ্রাম পটাশ এবং ১০০ গ্রাম টিএসপি সার কলা গাছের গোড়ার আশে পাশে ছিটিয়ে মাটি কুপিয়ে দিতে হবে।

চারা রোপনের সময় মাটি যদি বেশী শুকনা থাকে তাহলে পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে। তাছাড়া অনেক দিন বৃষ্টি না হলে ১৫ থেকে ২০ দিন পরে কলা গাছে সেচ দেওয়া উচিত। বাতাসে যেন কলা গাছ হেলে না যায় তার‍ জন্য বাঁশ দিয়ে গাছকে বেঁধে দিতে হবে। পানি যেন না জমতে পারে তার জন্য নালার ব্যবস্থা করতে হবে।

কলা গাছের রোগ বালাই ও প্রতিকার

কলা গাছের পাতা ঠিক রাখতে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলিলিটার ডায়াজিনন ৬০ ইসি মিশিয়ে ২ সপ্তাহ অন্তর স্প্রে করতে হবে। কলা গাছে অনেকগুলী রোগে হলেও তিনটি রোগ প্রধান। যেমন, সিগাটোকা, পানামা ও গুচ্ছ মাথা রোগ। পানাম রোগে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়। সিগাটোকা রোগে পাতার ওপর গাঢ় বাদামি দাগ হয়। এই রোগ দমনের জন্য ১০ লিটার পানিতে ৫.৫ মিলি হারে টিল্ট ২৫০ ইসি মিশিয়ে ২০ দিন পর পর পাতায় ছিটিয়ে দিতে হবে।

ফলন ও ফসল সংগ্রহ

লাগানোর ১২ থেকে ১৩ মাসের মধ্যে সব জাতের কলা পরিপক্ক হয়ে যায়। সঠিক ভাবে যন্ত নিতে পারলে হেক্টরপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টন কলার ফলন পাওয়া যায়। প