বিনিয়োগে ভয় পাই! কিভাবে মোটিভেট থাকবো

বিনিয়োগে ভয় পাই! যেভাবে মোটিভেট থাকতে পারেন

বিনিয়োগে ভয় পাই

বিনিয়োগে ভয় না পেয়ে বিনিয়োগ কি তা জানতে হবে

বিনিয়োগ খুবই পরিচিত একটি শব্দ। বিনিয়োগ নিয়ে আছে নানা ধরনের কথা। পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি আছে ভারী ভারী। তবে দিন শেষে আমরা সবাই জানি ধনী এবং আড়ম্বর জীবনের জন্য বিনিয়োগের তেমন কোন বিকল্প নাই। আমরা যদি ধনী ব্যক্তিদের জীবন পর্যালোচনা করি তবে দেখতে পাবো, প্রায় সকলেরই সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তই, তাদের জীবন বদলে দিয়েছে। 

আর সেই সিদ্ধান্ত হল বিনিয়োগ সংক্রান্ত। ধরা বাঁধা আয়ে সচ্ছল জীবন যাপন সম্ভব হলেও, সম্ভব নয় ধনাঢ্য জীবন যাপন। আর তাই স্বপ্ন পূরনের জন্য আসতে হবে বিনিয়োগে। সময় নিয়ে এই শাখায় কাজ করতে পারলে সফলতা আসবে।

তবে মনে রাখতে হবে, সফলতার জন্য সর্টকাট কোন পদ্ধতি নাই। একমাত্র পরিশ্রম দিয়েই সেই সফলতা আপনাকে অর্জন করতে হবে। মোটিভেশন ধরে রাখাই এখানে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

বিনিয়োগের সংজ্ঞা

বিনিয়োগের আছে নানা সংজ্ঞা। তবে যদি সহজে বলি, ভবিষ্যৎতের লাভের জন্য বর্তমান সময়ে আপনার আত্মত্যাগই হলো বিনিয়োগ। সেটা টাকা, সময়, পরিশ্রম, মেধা বা অন্য কিছু হতে পারে। আপনাকে বর্তমানে কাজ করতে হবে, ফলাফল পাবেন অদূর ভবিষ্যৎতে। 

ধরুন একজন ব্যবসা শুরু করতে চাইছেন। মূলধনটি তিনি ব্যয় করছেন। এই মূলধন তিনি এখন খরচ না করে বিনিয়োগ করছেন, অর্থ্যাৎ তিনি তার বর্তসমান সময়ে আত্মত্যাগ করছেন ভবিষ্যতের লাভের আশায়। আবার পরিশ্রম করছেন, মেধা দিচ্ছে সবই কিন্তু বিনিয়োগ। আমরা শুধু টাকাকেই বিনিয়োগ হিসাবে ধরি।

কিন্তু শুধু টাকা দিয়ে মুনাফা করা সম্ভব নয়। ব্যবসা অনেকেই করে। কিন্তু সবাই কি সফল হয়? না, সবাই সফল হয় না। কেউ একটি দোকান থেকে ৫ বছরে ৫ টি দোকান করেন। আবার কেউ ৫ বছর একই দোকান নিয়েই পরে থাকেন। সু

তরাং ২ জনের মধ্যে পার্থক্য আছে। পরিশ্রম, মেধা, সবই কিন্তু বিনিয়োগের আওতাধীন। একজন মালিক ব্যবসার মুনাফা অর্জন করেন তার বিনিয়োগকৃত টাকা এবং পরিশ্রমের পরিপ্রেক্ষিতে। তাই বলা যায়, এই দুনিয়ায় কিছুই বিনামূল্যে পাওয়া যায় না। কিছু পেতে হলে আপনাকেও দিতে হবে, কখনো কখনো বেশি দিতে হবে।

কখন ও কোথায় বিনিয়োগ করবো

কখন ও কোথায় বিনিয়োগ করবো, সেটা নিয়ে আমাদের মনে থাকে নানাপ্রশ্ন। আমরা কি করবো বুঝতে পারি না। বিনিয়োগ যে কোন সময়ই করতে পারেন এবং আমাদের মতে আপনি খুব দ্রুত বিনিয়োগ শুরু করুন।

কারন এক দিন বা এক মাস আপনি আগে শুরু করলে আপনি সেই সময়টাই এগিয়ে থাকবেন। ছাত্র অবস্থায় থেকেই আমদের বিনিয়োগ করা উচিত।

পুঁজি অল্প এবং লাভ অল্প হলেও অভিজ্ঞতাটি পরবর্তী জীবনে মূল চালিকা শক্তি হবে। অনেকের আবার ভ্রান্ত ধারনা আছে, বিনিয়োগ মানেই লাখ লাখ টাকার খেলা। বিষয়টি একদমই ভুল। কিছু মানূষ আছে যারা অল্প করে চিন্তা করতে পারে না। তাদের সবসময় আকাশ কুসুম চিন্তা।

কোন একদিন করবো ভেবে বসে থাকা মানুষগুলোর কাছে সেই কোন একদিন আর আসে না। আপনার কোন একদিন লাখ লাখ টাকা হবে, তারপর ব্যবসা করবেন এমন না ভেবে বরং আপনার জমাকৃত ৩০,০০০ বা ৫০,০০০ টাকা দিয়েই আপনি শুরু করুন। দেখবেন দিন শেষে আপনিই সফল হবেন। কোন একটি দিনের কথা না ভেবে, সেই কোন একটি দিন আপনি নিজেই তৈরী করুন।

বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনেক মাধ্যম আছে। বড় ব্যবসার তো আছেই, চাইলে ছোট কোন ব্যবসা করতে পারেন যেমন, মুদি দোকান, হোলসেল, রিসেইলিং, চায়ের দোকান। আবার বেশি টাকা হলে ব্যাংক, বীমা, সঞ্চয়পত্র বা বন্ডে টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন।

আপনার টাকা বেশি বা কম যাই হোক, আপনি চাইলে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে পারেন। মাত্র ৫০০ টাকা দিয়ে নিজের ব্যবসা শুরু করার এমন ভাল উপায় বোধহয় খুব বেশি নেই। তবে মনে রাখবেন শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ।

মূলত বিনিয়োগের সাথে ঝুঁকি থাকবেই। সুতরাং বিনিয়োগ করতে হবে জেনে বুঝে, বিচার বিবেচনা করে। টাকা দিলেই শুধু হবে না। কোথায়, কিভাবে, কত টাকা এবং কেন টাকা বিনিয়োগ করছেন সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।

বিনিয়োগে ভয়! মোটিভেশন পাই না!

বিনিয়োগ নিয়ে আমদের সবার অনেক প্রশ্ন আছে, আছে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারনা। যেকোন বিনিয়োগই ঝুঁকিপূর্ণ একথা সত্যি, তবে ঝুঁকি নেই এমন কিছু কি আছে?

আপনি চাকুরি করলে যে কোন সময় আপনার চাকরি চলে যেতে পারে। আবার কোন দূর্ঘটনায় আপনি কাজ করার জন্য উপযুক্ততা হারিয়ে ফেলতে পারেন।

আজ এই কাজ করতে করতে আমি এখনই মৃত্যুবরন করতে পারি। ঝুঁকিহীন জীবন হয় না। অনেকেই বিনিয়োগ করতে চায় কিন্তু ভয় পায়। মোটভেশন পায় না অনেকেই। মোটিভেশন যে কোন কাজের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে কেউ আপনাকে মোটিভেট করার চেয়ে আপনার নিজেরই নিজেকে মোটিভেট করা উচিত। এটি বেশি কাজে দিবে।

বিনিয়োগে মোটিভেশন ধরে রাখার উপায় কি

১। বিনিয়োগের জন্য বাজেট করুন

এক্ষেত্রে আবার বলে রাখি, বিনিয়োগ মানেই লাখ লাখ টাকা না। আপনি চাইলে অল্প টাকা দিয়েই বিনিয়োগে আসাত পারেন। তবে অবশ্যই বিবেচনা করে টাকা বিনিয়োগ করবেন।

বিনিয়োগের জন্য এমন ভাবে বাজেট করুন যেন আপনার ব্যক্তিগত জীবনে এখনই এর প্রভাব না পড়ে। অর্থ্যাৎ সব টাকা বা অনেক বেশি পরিমান টাকা একবারে বিনিয়োগ করবেন না।

আর আপনার বাজেটের ওপরই নির্ভর করবে আপনি কোথায়, কিভাবে বিনিয়োগ করবেন। সুতরাং বাজেট গুরুত্বপূর্ণ।

সেই টাকায় বিনিয়োগে নিয়ে আসুন, যে টাকা আগামী ১ বা দেড় বছর আপনার লাগবে না। তাহলে সময় নিয়ে আপনি ভাল ফলাফল লাভ করতে পারবেন, ঝুঁকিও কমে যাবে।।

২। পরিকল্পনা করুন

বিনিয়োগে আসার পূর্বে ভালো ভাবে পরিকল্পনা করুন। আপনি কি কি করবেন, সেটা ছবির মতই পরিস্কার রাখুন নিজের কাছে।

প্লান A, B, C অবশ্যই রাখবেন এবং সেই সাথে পরবর্তী পদক্ষেপ কি কি হবে সেটিও ভেবে রাখুন। ভাল পরিকল্পনা আপনার কাজের সফলতা নিশ্চিত করে।

কিভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন সেটার পরিকল্পনা আপনার এগিয়ে যাওয়ার পথকে সহজ করবে।

৩। আপনাকে সফলরুপে কল্পনা করুন 

বিনিয়োগের জন্য আপনি বর্তমানের কিছু ত্যাগ স্বীকার করছেন একথা সত্য। যেমন ধরুন, আপনার বন্ধু একটি দামী মোটর সাইকেল চালাচ্ছে এটা দেখতে দেখতে আপনারও নিশ্চয় ইচ্ছে হয় এমন গাড়ি কেনার।

কিন্তু আপনি সেই সখ পূরণ না করে, টাকাটা বিনিয়োগ করলেন। আপনি যে আত্মত্যাগ করলেন, তার জন্য খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। এমন সময় নিজেকে মোটিভেট রাখা কঠিন।

আর বিনিয়োগের সাথে সাথেই ফলাফল আসতে শুরু করবে এমন নয়। এমন সময় চিন্তা করুন, আজকের এই কষ্ট আপনাকে ভবিষ্যৎতে কতটা সুখ দিবে। যে বাড়ির স্বপ্ন আপনি দেখেন বা যে সচ্ছলতা আপনি চান তার ছবি মনে মনে দেখুন এবং বিশ্বাস রাখুন আপনি পারবেন। মোটিভেশন নিজে থেকেই কাজ করবে।

৪। ভালো করে ভেবে সিদ্ধান্ত নিবেন

আমরা অনেকেই আবেগে সিদ্ধান্ত নেই। যেমন ব্যবসা করলেই টাকা । সুতরাং যে কোন ব্যবসা করলেই সফল হওয়া যাবে।  বিষয়টি এমন না। তাহলে কেউ আর গরিব থাকতো না। কোন ব্যবসা আপনি করবেন সেটি আপনাকেই ঠিক করতে হবে।

আমার বন্ধু রেস্টুরেন্টের ব্যবসা করে সফল হয়েছেন বলে আপনাকেও রেস্টুরেন্টের ব্যবসাই করতে হবে এমন না। অন্ধ অনুকরণ কখনোই ভালো না।

আপনি যে বিষয় নিয়ে জানেন, বোঝেন এবং আগ্রহ বোধ করেন সেই বিষয়েই কাজ করুন। এতে বিরক্ত আসবে না, মোটিভেট থাকতে সাহায্য করবে। বিশেষ করে আপনার ভালো লাগায় গুরুত্ব দিতে হবে। পড়ুন – সফলতার সাথে বিনিয়োগের জন্য এই ৮টি বিষয় মনে রাখতে হবে

৫। ব্যর্থতা সফলতারই একটি ধাপ

আপনি প্রথমেই সফল হবেন বা বারবারই সফল হবেন এমন চিন্তা করবেন না। বরং ভাবুন ব্যর্থতা থেকে কি শিখলেন। জীবনে ব্যর্থতাকে একটি অংশ মনে করুন। সফলতার গল্পের সাথে ব্যর্থতাও জড়িয়ে থাকে, এটাই নিয়ম। আর তাই ব্যর্থতাকে নিয়ে ভয় পাবেন না।

৫। কাজকে ভালবাসুন

আপনি যে কাজ করছেন তাকে যদি ভালবাসতে নাই পারেন, তবে সফল হবেন কিভাবে? একটু ব্যর্থতাই আপনাকে অনেকটা হতাশ করে ফেলবে।

আপনি ক্রমান্বয়ে আরো পিছিয়ে পড়বেন। একসময় হাল ছেড়ে দিয়ে বলবেন, সম্ভব নয়। কিন্তু আপনি যদি কাজকে ভালবাসেন তবে আপনি কখনোই আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন না। কিভাবে আরো ভাল করা যায সেটি নিয়েই চিন্তা করবেন।

৬। নিজের সিদ্ধান্তের ওপর আস্থা রাখুন

আপনি কি করছেন, কেন করছেন সেটা আপনি জানেন। পরামর্শ করুন কিন্তু সিদ্ধান্ত নিজে নিন। কখনোই নিজের কাজ নিয়ে লজ্জাবোধ করবেন না। কে কি বলল, খারাপ বলল নাকি ভালো, সেটি নিয়ে ভাববেন না।

আপনার সফলতার অংশীদার সবাই হতে চাইবে, ব্যর্থতার দায় কেউ নিবে না। আর তাই নিজের ওপর আস্থা রাখুন ।

বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, আবার বিনিয়োগে লাভও তুলনামূলক বেশি। ভাল করে জেনে বুঝে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি কমানো যায়। আপনি কতটা সফল হবেন সেটি নির্ভর করছে, আপনি কতটুকু পরিশ্রম করছেন তার উপর। জানার কোন বিকল্প নেই।

যেটি নিয়েই কাজ করছেন বা করবেন, তা নিয়েই জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বিনিয়োগে আসুন. জীবনে সফলতা আনুন। ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল – Bangla Preneur YouTube Channel