প্রথম যখন শেয়ার বাজারে, কি করবেন?

প্রথম যখন শেয়ার বাজারে! 

প্রথম যখন শেয়ার বাজারে

শেয়ার বাজার বা স্টক মার্কেট, নামটি শুনলেই অনেকেই প্রায় আঁতকে ওঠেন। মনে হয় যেন এক অতংকের নাম শেয়ার বাজার। অনেকেরই কাছে আবার অতি প্রিয় এই নামটি, কেন?

তার কারন এই শেয়ার বাজার এসে অনেকেই ধনী হয়ে উঠেছেন, সফল হয়ে উঠেছেন। পৃথিবী বিখ্যাত ধনী মানুষ, সবাই প্রায়ই শেয়ার ব্যবসার সাথে যুক্ত।

তবু কেন এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের মধ্যে এত আতংক, এত ভয়?

কারন আমরা নিজেরাই বিষয়টি ভাল ভাবে বুঝি না, জানার চেষ্টাও করি না। কে কবে কি বলেছেন, কত টাকা লস করেছেন তার গল্প শুনেই সেটাকে আঁকড়ে বসে থাকি। এবং ভাবি আমি বেশ অনেকটাই জানি।

সহজ পথে কে কবে ধনী হয়েছেন বলতে পারেন?

কিছু না করে, কে কিভাবে সফল হয়েছেন সেই উত্তর কি আছে আমাদের কাছে। আমরা আসলে জানি না, আর জানতেও চাই না। এমন যখন পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি তখন নতুন শেয়ার বাজারে প্রবেশ করা একজন বিনিয়োগকারী কিভাবে শুরু করবেন, কি করবেন? নিশ্চয় তার কাছে রীতিমতো গোলক ধাঁধা মনে হবে শেয়ার বাজার।

নতুন একজন বিনিয়োগকারী কি করবেন তখন?

শেয়ার বাজারে আসার প্রথম শর্ত আপনাকে বুঝতে হবে আপনি ব্যবসা করতে এসেছেন। আপনি একজন বিনিয়োগকারী, একজন ব্যবসায়ী।

বিনিয়োগ মানেই ঝুঁকিপূর্ন। যেকোন ব্যবসায় ঝুঁকি আছে, শেয়ার বাজারেও ঝুঁকি আছে। আপনি যখন আপনার কাছের মানুষদের জানাবেন যে, আপনি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী, তখন দেখবেন সবাই আপনার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীষন চিন্তিত বোধ করবেন এবং বলবেন আপনি বিরাট একটি ভুল সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন।

এরচেয়ে অন্য যেকোন ব্যবসা করা সহজ। আপনাকে এমন ভাবেই তারা বুঝাবেন যে, আপনি আপনার জীবনে সবচেয়ে বড় ভুলটি করতে যাচ্ছেন। অথচ অন্য ব্যবসায়ও আপনি অসফল হতে পারেন।

আপনি একটি রেস্টুরেন্ট বা ফটোকপির দোকন দিলেই যে সেটা চলবে, আপনার লাভ হবে এমন কোন নিশ্চয়তা কি আছে? যেকোন ব্যবসা করলেই মানুষ যে সফল হবেন, তার গ্যারিন্টি কি আছে? না নেই, কেউ আপনাকে এই নিশ্চয়তা দিতে পারবেন না। ঠিক তেমনি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগও ঝুঁকিপূর্ণ।

বিষয়টি এমন নয় যে, শুধু শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। যিনি বা যারা আপনাকে নিষেধ করছেন তাদের জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবেন যে শেয়ার বাজার সম্পর্কে তাদের জ্ঞান সীমিত।

অমুক ভাইয়ের শ্যালিকার দেবরের জামাই শেয়ার বাজারে লস করেছেন, সেই গল্প আপনি শুনবেন কিন্তু শেয়ার বাজার কি, কিভাবে এখানে কাজ হয়, বা সেই উল্ল্যেখিত ব্যক্তি কত টাকা এই শেয়ার বাজার থেকে লাভ করেছেন সে সব কথা তিনি নিজেও জানেন না, আপনাকেও জানাতে পারবেন না।

তাই আপনি যদি শেয়ার বাজারে নতুন হয়ে থাকেন কিংবা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে জেনে রাখুন অন্য সব ব্যবসার মতই শেয়ার বাজার ঝুঁকিপূর্ণ।

নতুনদের জন্য প্রথম বাঁধা দ্বিধা। এত মানুষের ব্যর্থতার গল্প শুনে ভয় লাগাটাই স্বাভাবিক। বিনিয়োগ করার পূর্বে আপনি শুধু ব্যর্থতার গল্পই শুনবেন।

এই দ্বিধা জয় করতে পারলে এবং বিনিয়োগ শুরু করলে আরো অনেক বিনিয়োগকারীর সংস্পর্শে আপনি আসবেন। তখন মূলত আপনি বুঝবেন আপনি শেয়ার বাজারে সফল হওয়া কঠিন কিছু নয়।

বারবার আপনার মনে হবে কেন এতদিন আপনি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেন নি। ফেলে আসা সময়টার জন্য আপনাকে আফসোস করতে হবে।

একদম নতুন যখন শেয়ার বাজারে আপনি তখন আপনি কি করবেন? চলুন জেনে আসি

১। বিনিয়োগের পরিমান

আপনি শেয়ার বাজারে নতুন, অর্থ্যাৎ আপনার শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের জন্য আর কোন দ্বিধা নেই এবং আপনি সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে গ্রহন করে ফেলেছেন। এখন প্রশ্ন হল আপনি কত টাকা বিনিয়োগ করবেন।

আপনি সেই টাকাই বিনিয়োগ করবেন যে টাকা আপনার কাছে এখন প্রয়োজন নেই, যার প্রতি আপনি নির্ভরশীল নন। অনেক অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী অনেক বড় ঝুঁকি নিতে পারেন কিন্তু মনে রাখবেন আপনি একদম নতুন।

আর তাই বেশি ঝুঁকি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। অভিজ্ঞতার কোন বিকল্প হয় না। যিনি দীর্ঘ সময় ধরে শেয়ার বাজারে আছেন তিনি শেয়ার বাজার সম্পর্কে নিঃসন্দেহে ভাল জ্ঞান রাখেন। আর তাই নতুন হিসাবে আপনাকে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে।

আপনি সেই টাকা শেয়ার বাজারে নিয়ে আসুন, যেন আপনাকে চট জলদি শেয়ার বিক্রি করতে না হয়। বরং আপনি যেন পর্যাপ্ত সময় পান। আর তাই বিনিয়োগের পরিমান সম্পর্কে ভাল করে ভেবে সিদ্ধান্ত নিন।

২। ব্রোকার হাউজ নির্বাচন

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের জন্য আপনাকে একটি ব্রোকার হাইজ খুঁজতে হবে যারা আপনার শেয়ার কেনা বেচায় সাহায্য করবে এবং তার বিনিময়ে কমিশন নিবে।

বাংলাদেশে অনেক ব্রোকার হাউজ আছে, কিছু ব্যাংকও ব্রোকার হাউজের কাজ করে।  তাই আপনরি পছন্দমতো একটি ব্রোকার হাউজ খুঁজে নিন।

যে কোন ব্রোকার হাউজেই আপনি বিও একাউন্ট খুলতে পারেন, তবে যারা সুদীর্ঘ সময় ধরে সুনামের সাথে কাজ করছেন এমন ব্রোকার হাউজ খুঁজে নেওয়া উত্তম।

অনেকে আবার পরিচিত, কিংবা বাসার কাছাকাছি বা যাতায়াতে সুবিধা হয় এমন ব্রোকার হাউজ নির্বাচন করে থাকেন। আপনি চাইলে সেটিও করতে পারেন।

৩। একাউন্ট খোলা

মাত্র ৫০০ টাকার বিনিময়ে আপনি শেয়ার বাজাওে একাউন্ট খুলতে পারেন। মাত্র ৫০০ টাকায় ব্যবসা করার সুযোগ সত্যিই কি খুব বেশি আছে?

আপনার এনআইডি কার্ড, ৪ কপি ছবি, নমিনির ২ কপি ছবি, এবং ব্যাংক একাউন্টের স্টেটমেন্ট কিংবা চেকবইয়ের ফটোকপি নিয়ে আপনি বিও একাউন্ট খুলতে পারবেন। সাধারণত আবেদন করার ২/৩ কর্মদিবসের মধ্যে আপনার একাউন্ট একটিভ হয়ে যাবে।

৪। মূলমন্ত্র

শেয়ার বাজরের মূল মন্ত্র হল শেয়ার কিনুন, অপেক্ষা করুন এবং বিক্রি করুন। হ্যাঁ, শেয়ার বাজারে আপনাকে এই ৩ টি কাজই করতে হবে। তবে কখন কোন শেয়ার কিনবেন, কখন বিক্রি করবেন এটাই আপনাকে জানতে হবে।

মূলত শেয়ার কেনার সময় আপনাকে লাভ করতে হবে। এবং কাংক্ষিত দাম আসলে বিক্রি করে দিতে হবে।

তবে কোন শেয়ার কিনবেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ। এত এত শেয়ারের মধ্যে কোন কোন শেয়ারটি আপনি কিনবেন, সেটি যাচাই বাছাই করে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

৫। জ্ঞানের কোন বিকল্প নেই

আপনি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে রাতারাতি ধনী হয়ে যাবেন এমন নয়। সব সময়ই মনে রাখবেন জ্ঞান এমন একটি জিনিস যা আপনাকে সবসময় সাহায্য করবে।

আর তাই অল্প বিনিয়োগ করলেও শেখার মনমানসিকতা রাখুন। গুগল, ইউটিউবে প্রচুর তথ্য পাবেন সেগুলো পড়ুন, দেখুন।

বিভিন্ন বিনিয়োগকারীর সাথে আলোচনা করুন। তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শেখার চেষ্টা করুন। আপনি যা শিখবেন সেটাই আপনার লাভ। তাই জানার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠুন। পড়ুন – শেয়ার বাজারে মানি ম্যানেজমেন্ট বা অর্থ ব্যবস্থপনা

৬। লোভ নয়

অতিরিক্ত লোভ করবেন না। শেয়ার বাজারে আপনি নতুন তাই কোম্পানি সম্পর্কে জানুন। দাম বাড়ছে দেখে সেই শেয়ার কিনবেন বা দাম আরো অনেক বাড়বে এই আশায় দিনের পর দিন লাভ পেয়েও বসে থাকবেন না।

একজন ব্যবসায়ী হিসাবে আপনাকে বিচক্ষন হতে হবে কিন্তু কখনোই লোভী নয়। আরোও পড়ুন – শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে বছরে কত শতাংশ লাভের প্রত্যাশা করা উচিত

৭। কনসালন্টেট নিয়োগ করুন

আপনি যদি অনেক টাকা একবারে বিনিয়োগ করতে চান এবং মনে করেন যে আপনি খুব বেশি সময় দিতে পারবেন না জানার জন্য বা এ্যানালাইসিস করতে পারবেন না, তবে আপনি পেইড কনসালটেন্সি নিতে পারেন।

বেশ কিছু আকর্ষনীয় পেইড কনসালটেন্সি আছে, যেখানে আপনি প্রায় ঝুঁকি বিহীন ভাবে ব্যবসা করতে পারবেন। তবে অনেক বড় অংকের টাকা হলেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া ভাল।

আপনি নিজে নিজেই ব্যবসা করতে পারেন, সেটি আরো ভাল হয়। কিন্তু আপনি যদি চান তবে অভিজ্ঞ কনসালন্টের পরামর্শ নিতে পারেন।

প্রথম বিনিয়োগকারী হিসাবে আপনাকে মনে রাখতে হবে রাতারাতি আপনি ধনী হয়ে যাবেন না। সিদ্ধান্ত নিতে হবে বুঝে শুনে, যাচাই বাছাই করে।

নতুন হিসাবে আপনার কঠিন মনে হলেও কিছুদিন নিয়মিত শেয়ার বাজারের সাথে সংযুক্ত থাকলে আপনি ধীরে ধীরে সব ভয় কাটিয়ে উঠতে পারবেন। অল্প সময়ে, তুলনামূলক কম পরিশ্রমে আপনিও বেশ ভাল প্রফিট করতে পারবেন এই শাখা থেকে।