শেয়ার বাজারে ট্রেডিং বনাম বিনিয়োগ

শেয়ার বাজারে ট্রেডিং বনাম বিনিয়োগ

ট্রেডিং বনাম বিনিয়োগ

ট্রেডিং বনাম বিনিয়োগ

শেয়ার বাজারে ট্রেডিং এবং বিনিয়োগ বা ইনভেস্টমেন্ট খুবই পরিচিত শব্দ। অনেকেই বলে আমি ট্রেড করতে পছন্দ করি, আবার অনেকে বলে আমি বিনিয়োগ করতে পছন্দ করি। যে যাই করে না কেন, একজন শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীর মূল উদ্দেশ্য থাকে লাভ করা।

এই লাভ ট্রেডিং করে করা যায় আবার বিনিয়োগ বা ইনভেস্টমেন্ট করেও করা যায়। যারা ট্রেডিং করে তারা সাধারনত কম সময়ের জন্য শেয়ার কিনে, অন্য দিকে যারা বিনিয়োগ করে তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য শেয়ার কিনে থাকে।

ট্রেডিং এবং বিনিয়োগ স্টক মার্কেটে মুনাফা চাওয়ার সাথে জড়িত, কিন্তু তারা সেই লক্ষ্যকে পূরণ করার জন্য বিভিন্ন উপায় অনুসরণ করে।

বাহিরের দেশের ট্রেডিং মানে হচ্ছে আপনি একটা শেয়ার এখন কিনলেন এবং এর পর যে কোন সময় সেল দিতে পারবেন।

অর্থাৎ, ১০টা ৩০ মিনিটে কিনে ১০টা ৩১ মিনিটে বিক্রি করা যায়, কিংবা এর পর যে কোণ সময় বিক্রি করা যায়। এটা হতে পারে এর পরের দিন কিংবা ২ দিন পর।

আর আমাদের দেশে আপনাকে একটা শেয়ার কেনার পর কমপক্ষে ১ দিন অপেক্ষা করতে হবে। যেমন রবিবার কিনে মঙ্গল বার বিক্রি করা যাবে।

সাধারনত যারা ট্রেডিং করে তারা বেশি ঝুঁকি নিয়ে থাকে এবং বছরে লাভের প্রত্যাশাও বেশি করে। তারা সপ্তাহে ৪/৫% প্রফিট বা এর কম বেশি টার্গেট করে ব্যবসা করে।

অন্যদিকে যারা বিনিয়োগ করে তারা লং-টাইমের জন্য শেয়ার কিনে অপেক্ষা করে। আমাদের মধ্যে হয়ত অনেকের লং-টাইম শুনলেই অনীহা চলে আসে।

তবে ঝুঁকি মেকাবেলায় দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগ দারুন কাজ করে। ধরুন, একজন মানুষ ১০ লাখ টাকা শেয়ার বাজারে ট্রেডিং এর মাধ্যমে এক বছরে ৩৫% লাভ করতে পেরেছে।

অন্য আরেকজন মানুষ বিনিয়োগের মাধ্যমে এক বছরের ৩৫% লাভ করতে পেরেছে।

এই এক্ষেত্রে উভয়ই বছর শেষে একই পরিমান লাভ করলেও বিনিয়োগকারীর তুলায় ট্রেডার বেশি চাপ অনুভব করেছে। কেননা তাকে বার বার একটি শেয়ার সেল দিয়ে অন্য একটি শেয়ার কিনতে হয়েছে।

অনেক সময় স্টপ লসও দিতে হয়েছে। আবার তাকে তার ব্রোকার হাউসের কমিশনও বেশি দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে ট্রেডারের তুলনায় বিনিয়োগকারি কিছুটা এগিয়ে আছে।

আবার এর অন্য দিক চিন্তা করলে, একজন ট্রেডার বেশি লাভ করতে পারে।

যেমন, একজন বিনিয়োগকারী ১০০ টাকা দিয়ে ১০ হাজার শেয়ার কিনে ১ বছরে ৩৫% লাভের আশায় বসে আছে। সেই শেয়ারটি ২ মাস পরে ১০% বেড়েছে, আরো ৩ মাস পরে ১০% বেড়েছে, এর ৩ মাস পরে আরো ১০% বেড়েছে।

মোট ৮ মাসে ৩০% বেড়েছে। নবম মাসে দাম না বেড়ে কমা শুরু করল, ১০ম মাসে ১০% কমে গেল, আর ১১তম মাসে আরো ১০% কমে গেল।

এই এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী ১ বছর সময় দিয়েও সে কাক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে পারলো না।

তার জায়গায়, একজন ট্রেডার হলে ১০% বাড়ার সাথে সাথে শেয়ার বিক্রি করে অন্য একটা শেয়ার কিনতো, যেখানে আবার ১০% লাভের প্রত্যাশা করত, আবার সেল দিয়ে যেই শেয়ার কিনবে সেখানে ৫% লস দিয়ে বের হয়ে গেল।

আবার অন্য শেয়ার দিয়ে ৮% প্রফিট করল। মূলত, যেই বিনিয়োগকারী ট্রেডিং করতে পছন্দ করে সে ছোট ছোট লক্ষ্য নিয়ে বার বার শেয়ার হাত বদল করে।

আর যিনি বিনিয়োগ পছন্দ করে তিনি বেশি সময় নিয়ে বেশি লাভের প্রত্যাশা করে।

একজন বিনিয়োগকারী সফল হবে নাকি একজন ট্রেডার সফল হবে তা মূলত নির্ভর করে কে কত ভালো শেয়ার, ভালো দামে কিনতে পারে তার উপর।

একজন বিনিয়োগকারী যদি অতিমূল্যায়িত শেয়ার কিনে তার বিনিয়োগের পরীক্ষা দিতে চায় তবে তার ফলাফল ভালো নাও আসতে পারে।

আবার একজন ট্রেডার যদি তার দক্ষতা প্রমান করার জন্য যদি অতিমূল্যায়িত শেয়ার কিনে তাহলেও তা কাজে নাও দিতে পারে।

আপনি ট্রেডার হন বা বিনিয়োগকারী আপনাকে অবশ্যই গ্রহন যোগ্য দামে শেয়ার কিনতে হবে।

আরোও পড়ুন – শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে সফল হওয়ার ৪৬টি উপায়

কেননা এই শেয়ারটি কেনা হচ্ছে বিক্রি করার উদ্দেশ্য। কেনার সময় জিতে কিনতে পারলে ভালো লাভ করা যেতে পারে।

যেমন, একজন সবজী বিক্রেতা যদি পাইকারের কাছ থেকে বেশি দামে সবজি কিনে নিয়ে আসে, তাহলে সেই সবজী বিক্রি করে অনেক সময় লসও হতে পারে।

আপনি যেই দামে শেয়ার কিনবেন তা হচ্ছে এর প্রাইজ আর যেই দামে শেয়ার বিক্রি করবেন তা হচ্ছে এর ভেল্যু। তাই আপনাকে একটা শেয়ার কেনার সময় জিতে কিনতে হবে। – কে এম চিশতি – ইউটিউব লিঙ্ক