বিজনেস আইডিয়া! কাপড়ের ব্যবসা (প্রাথমিক ধারনা) সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ

কাপড়ের ব্যবসার সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ সমূহ

কাপড়ের ব্যবসা

অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এবং শিক্ষা আমাদের ৫ টি মৌলিক চাহিদা। এই চাহিদাগুলো দিয়ে আপনি যখন কাজ করবেন, তখন সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারন এগুলোর চাহিদা কখনোই কমে যায় না। দিন দিন বাড়তে থাকে।

যেমন কাপড় এক সময় লজ্জা নিবারণের উপায় হলেও বর্তমানে এটি ফ্যাশন। বাজারে এর চাহিদা প্রচুর। কিন্তু এর অর্থ এই নয় আমরা সকলে এখন কাপড়ের ব্যবসা শুরু করবো। আপনি সেই ব্যবসাই করবেন যে ব্যবসা আপনি পরিচালনা করতে সক্ষম একই সাথে সেই ব্যবসার প্রতি ভালো লাগা কাজ করতে হবে।

কাপড়ের ব্যবসা করে অনেক সফল ব্যক্তি যেমন আছেন, তেমনি কাপড়ের ব্যবসা করে লোকসান করেছেন এমন অনেক ব্যক্তিও আছেন। আপাতত দৃষ্টিতে অতি সহজ এই ব্যবসার অনেক চ্যালেঞ্জও কিন্তু রয়েছে। তবে এগুলোকে জয় করতে পারলে কাপড়ের ব্যবসা একটি অন্যতম লাভজনক ব্যবসা ক্ষেত্র।

কাপড়ের ব্যবসা কি কি প্রয়োজন

যে কোন ব্যবসা করতে চাইলে আপনাকে আগে ভাবতে হবে, যে পণ্য বা সেবা নিয়ে আমি ব্যবসা করতে চাচ্ছি তার চাহিদা কেমন।

চাহিদা অনুসারে আপনার ব্যবসার বেশ কিছু প্রয়োজন আসবে। যেমন চাল, ডাল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের যত বেশি চাহিদা আছে, ঠিক সেই পরিমান মিষ্টির চাহিদা কি বাজারে আছে? নিশ্চয় মিষ্টির চাহিদা কম।

আপনি সারা মাসে ৫০ কেজি চাল কিনবেন, কিন্তু ৫০ কেজি মিষ্টি সারা মাসে কিনবেন না। চাহিদা এক নয়, কিন্তু উভয় ব্যবসা করেই লাভবান হওয়া সম্ভব। কারন চাহিদার ভিন্নতার সাথে সাথে ব্যবসার পদ্ধতি, সুবিধা এবং অসুবিধাও ভিন্ন।

১। পণ্য সম্পর্কে জানা

যে ব্যবসাই আপনি করেন না কেন, আপনাকে অবশ্যই পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে, তার চাহিদা নিরূপন করতে হবে।

কাপড়ের ব্যবসার বিভিন্ন ধরন আছে, যেমন- গজ কাপড়, ব্লক-বাটিক, এমব্রয়ডারি, বুটিক হাউজ, শাড়ি, গার্মেন্টসের তৈরীকৃত পোশাক সহ আরো অনেক ভিন্নতা আছে। আপনাকে জানতে হবে আপনি কোন একটি বা কোন কোন ধরনের পোশাক নিয়ে কাজ করবেন।

২। মূলধন

মূলধন ব্যবসার প্রান। কোন ব্যবসার কত মূলধন প্রয়োজন সেটি নির্দিষ্ট করে বলা যায় না।  বাংলায় একটি প্রচলিত কথা আছে, “যত গুড়, তত মিষ্টি’।

অর্থ্যাৎ, আপনি যত ইনপুট দিতে পারেবেন, তত বেশি আউটপুট পাবেন। আপনি যদি দেশীয় পোশাক নিয়ে কাজ করেন তবে আপনি অল্প মূলধন দিয়ে কাজ শুরু করতে পারবেন।

আর যদি বিদেশী পোশাক বা ডিজাইনার পোশাকের ব্যবসা করতে চান, তবে আপনার মূলধন বেশি প্রয়োজন পড়বে। আপনি কি ধরনের পোশাক নিয়ে ব্যবসা করতে চাইছেন সেটির উপর নির্ভর করবে আপনার ব্যবসার মূলধন।

ছোট আকারের একটি কাপড়ের দোকান যেমন গজ কাপড়, সুতির প্রিন্টের থ্রিপিস কিংবা ব্লক-বাটিক, বা সুতির শাড়ির ব্যবসার জন্য আপনি কমপক্ষে ২ লাখ টাকা দিয়ে শুরু করতে পারেন।

কারন আপনার পণ্য যদি অল্প থাকে তবে ক্রেতার পছন্দ করার বেশি সুযোগ থাকে না। চাহিদা বুঝে আস্তে আস্তে মূলধন বাড়াতে পারেন।

৩। পণ্য কোথায় পাবেন

আপনি নিজে যেহেতু পণ্য তৈরী করছেন না সুতরাং আপনাকে পাইকারি বাজার থেকে কাপড় সংগ্রহ করতে হবে। সারা বাংলাদেশে অনেক গুলি পাইকেরি মার্কেট আছে, যেমন নরসিংদী, নারায়নগঞ্জ, ঢাকা, ইসলামপুর, দোহার ইত্যাদি।

আমাদের দেশে এসব পোশাক বিপুল পরিমানে চাহিদা রয়েছে। কোন পণ্য, কোথায় ভাল পাওয়া যায় সে বিষয়ে আপনাকে জানতে হবে।

প্রথম প্রথম চেষ্টা করবেন নিজে পণ্য সংগ্রহ করার। এতে ঝুঁকি বেশ অনেকটাই কমে যায় এবং পরিচিতি হয়ে গেলে আপনি পরবর্তীতে অর্ডার করেও পণ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।

৪। সম্ভাব্য ক্রেতা এবং ক্রেতার চাহিদা সম্পর্কে জানুন

আপনি যেখানে ব্যবসা করবেন এবং আপনার সম্ভব্য ক্রেতা কেমন সে বিষয়ে জানুন। গ্রামাঞ্চলের যে ধরনের পোশাকের চাহিদা, শহরের মানুষের চাহিদা ভিন্ন।

আপনি কাদের জন্য কাজ করছেন, তাদের চাহিদা ও রুচি কেমন, সে বিষয়ে জানার চেষ্টা করুন। এটি আপনার ব্যবসাকে সফল করতে সাহায্য করবে।

৫। ফ্যাশন সচেতন হতে হবে এবং ট্রেন্ড ফলো করতে হবে

যেকোন ব্যবসার জন্য আপনাকে আপডেট থাকতে হবে। তবে পোশাক শিল্পের সাথে কাজ করতে চাইলে এই বিষয়ে আপনাকে আরো বেশি মনোযোগী হয়ে উঠতে হবে। পোশাকের নিত্য নতুন চাহিদা তৈরী হয়।

যেমন শুধু রঙের কথায়ই যদি বলি, কখনো কখনো বাজারে উজ্জ্বল রঙের চাহিদা থাকে, কখনো কখনো হালকা রঙের পোশাক বেশি চলে। আপনাকে এই সব বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। আপনাকে বর্তমান ফ্যাশন সম্পর্কে জানতে হবে এবং সেই অনুসারে পণ্য বাজারে নিয়ে আসতে হবে।

৬। সাপ্লাই এবং ডিমান্ড এর প্রতি সচেতন হোন

উৎসবের সময়গুলো বাজারে সবকিছু চাহিদা বেড়ে যায়। পোশাক শাখায় চাহিদা তখন তুঙ্গে। আর তাই এসময়ের জন্য আপনাকে আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। আপনি যদি প্রস্তুত না থাকেন তবে এই সময়ে আপনি বাজারে টিকে থাকতে পারবেন না এবং আপনার নিয়মিত ক্রেতাদেরও হারিয়ে ফেলবেন।

যেমন পহেলা বৈশাখ এবং পহেলা ফাল্গুন আমাদের দেশে বেশ উৎসব মুখর ভাবে পালিত হয়। এই সময়ে রঙিন কাপড় বিশেষ করে উজ্জ্বল লাল এবং হলুদ রঙের চাহিদা বেড়ে যায় অনেক।

একজন বিক্রেতা হিসাবে আপনাকে সবসময় ক্রেতার চাহিদার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। গরম বা শীতের সময়ে পোশাকের চাহিদা বদলে যায় সেই বিষয়েটিও মাথায় রাখতে হবে।

আরোও পড়ুনঃ কাপড়ের দোকানের নামকরন ও ২৫টি নামের তালিকা

কাপড়ের ব্যবসা সুবিধাসমূহ

১। চাহিদা প্রচুর

আগে যদি মানুষের বাইরের পোশাক ২ বা ৩ টি থাকতো, এখন যেকোন মানুষের বাইরের ব্যবহারের জন্য কমপক্ষে ১০টি পোশাক রয়েছে। বাংলাদেশে ১৮ কোটি জনগনের বসবাস।

এই ১৮ কোটি জনগণই কাপড়ের সম্ভাব্য ক্রেতা। আবার প্রতিটি মানুষের যদি কমপক্ষে ২ টি করে জামার প্রয়োজন হয় তবে চাহিদা ৩৬ কোটি। একটু ভেবে দেখুন আপনার সম্ভাব্য ক্রেতা এবং পণ্যেও চাহিদা কত বেশি।

আমরা এখানে কম করেই হিসাব করছি। আপনি এবং আমি উভয়ই জানি চাহিদা আরো অনেক বেশি।

২। সারা বছর ব্যবসা করা যায়

কাপড়ের ব্যবসার অন্যতম সুবিধা হল, সারা বছর আপনি ব্যবসা করতে পারবেন। উৎসবের মৌসুমে চাহিদা বেড়ে গেলেও সারা বছর পোশাকের চাহিদা বাজারে আছে। নিত্য নতুন ফ্যাশনের পোশাক ক্রেতাদের সারা বছরই আকৃষ্ট করে।

৩। অপেক্ষাকৃত কম মূলধন

কাপড়ের ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনার খুব বেশি মূলধনের প্রয়োজন নেই। আপনি অল্প কিছু টাকা দিয়ে শুরু করতে পারেন। প্রথমেই খুব বেশি বড় বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই।

৪। অফলাইন এবং অনলাইন উভয় ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ

কিছু বছর আগেও অনলাইন সেবা আমাদের দেশে নতুন ছিল, তবে এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বেশ কিছু নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেও ইতিবাচক ধারনাও আছে। কাপড়ের ব্যবসার সবচেয়ে বড় সুবিধা আপনি অনলাইন এবং অফলাইন উভয় ক্ষেত্রে ব্যবসা করতে পারবেন।

৫। খুব বেশি কর্মীর প্রয়োজন হয় না

আপনি যদি নিজে সক্রিয় ভাবে ব্যবসায় অংশগ্রহন করেন, তবে ১ বা ২ জন কর্মী দিয়েই একটি বড় কাপড়ের দোকান পরিচালনা করা সম্ভব।

কাপড়ের ব্যবসার চ্যালেঞ্জ সমূহ

১। লোকেশন

কাপড়ের ব্যবসার জন্য লোকেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে এমন জায়গায় ব্যবসা করতে হবে যেখানে সহজে ক্রেতা আসতে পারে। আপনাকে খুঁজে পেতে ক্রেতার যেন কোন কষ্ট না হয়।

মার্কেটে দোকান নিলে কাপড়ের ব্যবসার জন্য বেশ ভাল। তবে যদি সে সুযোগ না থাকে তকে এমন মার্কেটের আশেপাশে বা জনসমাগম স্থানে দোকান নিতে পারেন।

২। দ্রুত ফ্যাশন বদলে যাওয়া

পোশাক শিল্পে পরিবর্তন আসে দ্রুত। কোন নতুন পোশাকের চাহিদা যেমন অনেক বেশি থাকে, তেমনি হঠাৎ করেই এক সময় এর চাহিদা কমে যায়। আর তাই পোশাক স্টকে তোলার সময় এই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।

আবার যখন যেমন ফ্যাশন চলছে তেমন পোশাক আপনার কাছে না থাকলে আপনি বাজারে টিকে থাকতে পারবেন না।

৩। প্রচুর প্রতিযোগিতা

কাপড়ের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আগে যেমন মানুষ প্রয়োজনের বেশি কাপড় কিনতো না, এখন নিত্যনতুন আধুনিক এবং ট্রেন্ড ফলো করা মানুষের নিয়মিত চাহিদা। সুতরাং পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এই ব্যবসার প্রতি মানুষের চাহিদা।

অনেকেই এই ব্যবসার করছেন, ফলে প্রতিযোগির সংখ্যাও প্রতিদিনই বাড়ছে। তবে আপনি যদি ব্যবসার নীতি ঠিক রাখেন, ভাল পণ্য নায্য মূল্যে এবং ভাল ব্যবহারের মাধ্যমে ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে পারেন, এবং ফ্যাশন সচেতন হন তবে প্রতিযোগিতার এই বাজারে ভাল করতে পারবেন।

৪। ক্রেতা ধরে রাখা

ক্রেতাই ব্যবসার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।। আপনাকে ক্রেতা ধরে রাখতে হবে। ভাল ব্যবহার, মান সম্মত পণ্য এবং নায্য দাম দিয়ে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে হবে এবং ধরে রাখতে হবে। একজন ক্রেতা আপনার যে মার্কেটিং করতে পারে, আপনি হাজার টাকা খরচ করেও তার সমমূল্য মার্কেটিং করতে পারবেন না।

৫। কাপড়ের ব্যবসার চ্যালেঞ্জ হিসাবে মূলধন

আপনি কম মূলধনে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করতে পারেন, তবে ব্যবসাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আপনাকে আরো বিনিয়োগ করতে হবে। মূলধন তখন একটি বড় সমস্য হয়ে দাঁড়ায়। এমন অবস্থা হওয়ার আগেই আপনাকে পরিকল্পনা করতে হবে।

আপনি ব্যবসার প্রথম থেকেই লাভের অংশের কিছু টাকা পরবর্তী বিনিয়োগের জন্য সঞ্চয় করতে পারেন। অদূর ভবিষ্যৎতে আপনাকে এই টাকা ব্যবসা বড় করতে সাহায্য করবে।

যেকোন ব্যবসার সুবিধা যেমন আছে, ঠিক তেমনি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। একজন সফল ব্যবসায়ী হয়ে উঠতে চাইলে আপনাকে পরিকল্পনা করতে হবে এবং সকল চ্যালেঞ্জ দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করতে হবে। চেষ্টা আর পরিশ্রম থাকলে কাপড়ের ব্যবসায় লাভবান হওয়া সম্ভব। ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল – Bangla Preneur YouTube Channel