সফলভাবে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ শুরু করার ৫টি ধাপ

সফলভাবে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে চাইলে জেনে নিন 

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ শুরু করার ৫টি ধাপ

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ শুরু করার ৫টি ধাপ

বাংলাদেশের যে কোন নাগরিক, যাদের বয়স ১৮ প্লাস, যে কেউ চাইলে একটি বিও একাউন্ট খুলে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে পারে।

বিও একাউন্ট খুলতে খরচ হবে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা এর পরে আপনার যত ইচ্ছা তত টাকার শেয়ার কিনতে পারবেন।

বিষয়টা এই রকম যে, কেউ যদি ৫০০ টাকার শেয়ার কিনতে চায় তাও যেমন সম্ভব ঠিক তেমনি ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগও করতে পারবে।

শেয়ার শব্দের সাথে বাজার শব্দটি যুক্ত থাকায় স্বাভাবিকভাবেই বুঝতে পারা যাচ্ছে যে এখানে কিছু একটা কেনা বেচা হয়।

আমাদের দেশে শেয়ার বাজার বা পুঁজিবাজার একই অর্থে ব্যবহার করা হয়।

শেয়ার ও স্টক এই দুইটা শব্দ কিছুটা ভিন্ন হলেও একই অর্থে আমাদের দেশে ব্যবহার করা হয়।

একটি শেয়ার একটি কোম্পানির মুলধনের ক্ষুদ্রতম অংশ। মোট মূলধনের টাকাকে ১০ টাকা দিয়ে ভাগ করলে সেই সংখ্যা পাওয়া যায় তা কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা।

ধরুন, একটি কোম্পানির মোট মূলধন ৪০ কোটি টাকা। এখন এই মূলধনকে ১০ টাকা দিয়ে ভাগ করলে মোট শেয়ার সংখ্যা হবে ৪ কোটি।

আসুন জেনে নেই কিভাবে ৫টি ধাপ অনুসরণ করে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ শুরু করা যায় 

#১। শেয়ার বাজার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা

আপনি যদি ব্যাংক, বীমা, পোস্ট অফিস, সঞ্চয়পএ বা যে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ বিনিয়োগ করতে চান তবে আপনার কাজ হবে তাদের শর্ত শুনে টাকা তাদের হাতে দেওয়া।

আপনার টাকা তারা মাটি চাপা দিয়ে রাখুন, কিংবা টাকা দিয়ে প্লেন বানিয়ে আকাশে উড়িয়ে দিক তা আপনার দেখার বিষয় না।

আপনি মেয়াদ শেষে হলে টাকা ফেরত পাচ্ছেন এইটাই বিষয়। ব্যাস একটুকু!

আর আপনি যদি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে চান তবে আপনার প্রথম কাজ হবে শেয়ার বাজার কি, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ কেন অন্য সকল বিনিয়োগের থেকে সেরা, শেয়ার বাজার কিভাবে কাজ করে, কীভাবে শেয়ার বাজার থেকে লাভ হয়, কেন লস হতে পারে, এই সকল বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা।

এখন একটি প্রশ্ন আসতেই পারে যে, তাহলে কেন আমি ব্যাংক, বীমা, বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ না করে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করব? 

এর উত্তর অনেক আছে, তবে সব থেকে সরল উত্তরটি হলো- শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ একটি ব্যবসা, যেখানে অন্য বিনিয়োগের থেকে বেশী মুনাফা আশা করা যায় এবং নিজের দক্ষতা কাজে লাগানো যায়।

নিজের টাকা বিনিয়োগ করে ঝুঁকি বিশ্লেষনের মাধ্যমে আর্থিক স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা যায়। তাই শেয়ার বাজারে আসার আগে যতটুকু সম্ভব স্পষ্ট ধারনা নিতে হবে।

তবে মনে রাখতে সরাসরি বিনিয়োগে না নামা পর্যন্ত অনেক ধারনা শুধুমাএ ধারনাই থেকে যাবে। কেননা তাত্তিক জ্ঞান যদি সরাসরি প্রয়োগ করতে না পারেন তাহলে সেই জ্ঞানের মূল্য থাকে না।

#২। ব্রোকার হাউস নির্বাচন করা

আমরা সবাই ব্যাংকের সাথে পরিচিত। ব্যাংক যেমন টাকা পয়সা লেনদেন করে ঠিক তেমনি ব্রকার হাউস শেয়ার লেনদেন করে। ব্রোকার হাউস  সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন ১৯৯৪ এর ধারা ১০ এর অধীনে পুঁজিবাজার থেকে সিকিউরিটিস অর্থাৎ শেয়ার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, বন্ড ক্রয় বিক্রয় করা সহ যাবতীয় কাজকর্ম করার জন্য একটি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান।

একজন সাধারন বিনিয়োগকারী হিসাবে প্রায় ৩০০ এর অধিক ব্রকার হাউস থেকে নিজের জন্য সেরা ব্রকার হাউস বেছে নেওয়া কঠিন। এই অবস্থায় কিছু দিক লক্ষ্য রেখে ভালো ব্রকার হাউস নির্বাচন করা উচিত।

যেমন ব্রকার হাউসটির সুনাম কেমন, কত দিন ধরে ব্যবসা করছে, হাউসের মালিকগন কেমন, কি কি সেবা দিয়ে থাকে, বিশেষ করে বর্তমানে অনলাইন সেবায় তারা কতটুকু এগিয়ে, তাদের কমিশন রেট কেমন ইত্যাদি।

ব্রকার হাউস এবং গ্রাহকের বিনিয়োগ আকার ভেদে কমিশন রেট এক এক রকম হয়।

সাধারনত ৩০ পয়সা থেকে শুরু হয়ে ৬০/৬৫ পয়সা হয়ে থাকে। এই কমিশন’ই মূলত ব্রকার হাউসের প্রধান ইনকাম।

ধরুন, আপনি যদি ১০০০ টাকার শেয়ার কিনেন এবং আপনার ব্রকার হাউসের কমিশন যদি হয় ৪০ পয়সা তাহলে আপনাকে কমিশন দিতে হবে ৪ টাকা। এই টাকা আপনার একাউন্ট থেকে শেয়ার কেনার পরে কেটে নেওয়া হবে।        

এখানে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, আপনার নির্দেশনা ছাড়া কোন ব্রকার হাউস আপনার হয়ে শেয়ার লেনদেন করবে না। কোন রকম অনিয়ম হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ সেই ব্রকার হাউসের বিরুদ্ধে সাথে সাথে পদক্ষেপ নেয়।

#৩। বিও একাউন্ট খোলা

Beneficiary Owners Account কে সংক্ষেপে বিও একাউন্ট বলা হয়। বিও একাউন্ট খুলতে চাইলে আপনার বয়স কম পক্ষে ১৮ হতে হবে।

এছাড়া যা লাগে তা হলো, আপনার এনআইডি অথবা পাসপোর্ট এর কপি/আপনার সদ্য তোলা ৩ কপি ছবি, আপনার ব্যাংকের চেকের কপি, নমিনির এনআইডি অথবা পাসপোর্ট এর কপি এবং সদ্য তোলা ১ কপি ছবি।

এই সকল কাগজগুলো নিয়ে আপনার পছন্দের ব্রকার হাউসে গেলে তারা বিও একাউন্ট খুলে দিবে। একাউন্ট খুলতে সাধারনত ২/৩ দিন সময় নিয়ে থাকে।

একাউন্ট খোলা শেষ হলে সিডিবিএল থেকে আপনার মোবাইলে কনফারমেশন ম্যাসেজ আসবে। এছাড়া যখনই আপনি কোন শেয়ার বেচা/কেনা করবেন ঐ দিন সিডিবিএল থেকে মোবাইলে ম্যাসেজ আসবে। 

#৪। বিও একাউন্টে টাকা জমা দেওয়া

আপনার বিও একাউন্ট খোলা শেষ হলে এবার টাকা জমা দিতে হবে। একটি বিও একাউন্টে নানা উপায়ে টাকা জমা দেওয়া যায়। যেমন সরাসরি ব্রোকার হাউসে দিয়ে টাকা জমা দিতে পারবেন।

এছাড়া ব্রোকার হাউসের ব্যাংক একাউন্টে টাকা জমা দেওয়া যায়। এমনকি মোবাইল ব্যাংকইং এই মাধ্যমে টাকা জমা দিতে পারবেন।

আপনি টাকা জমা দিবেন আপনার ব্রোকার হাউসে আপনার বিও একাউন্টে এবং টাকা তুলবেন আপনার ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে।

বিও একাউন্ট থেকে টাকা তুলতে চাইলে, অনলাইনে ব্রোকার হাউসের ওয়েবসাইটে, ফোনে কিংবা সরাসরি ব্রোকার হাউসে গিয়ে টাকার আবেদন করতে পারবেন।

সাধারনত ২ দিনের মধ্যে আপনার টাকা আপনার ব্যাংক একাউন্টে চলে আসবে।

তাহলে এটি পরিস্কার যে, টাকা জমা দিবেন ব্রোকার হাউসে এবং টাকা তুলবেন আপনার ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে। এছাড়া ক্যাশ বোনাসের টাকাও আপনার ব্যাংক একাউন্টে আসবে।

#৫। শেয়ার ব্যবসার নিজস্ব পলিসি সৃষ্টি করা

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারনত সবার ঝুঁকি একই রকম থাকে না। আপনার বয়স, অবস্থান, ইনকাম সহ নানা বিষয়ের উপর ঝুঁকি নির্ভর করে।

শেয়ার বাজারে আপনি কত টাকা, কত দিনের জন্য বিনিয়োগ করতে চান তার একটি পরিকল্পনা থাকতে হবে।

এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কেননা পরিকল্পনা ছাড়া জীবন একটি বিশাল সমুদ্রে ছোট নৌকা চালানোর মত। তাই শেয়ার বাজারে আসার সাথে সাথে আপনার নিজস্ব একটি পলিসি সৃষ্টি করা সাফল্যের ইঙ্গিত দেয়। – কে এম চিশতি – ইউটিউব লিঙ্ক