সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ক্যারিয়ার
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ক্যারিয়ার
আধুনিক বিশ্ব প্রযুক্তিনির্ভর। মুদির দোকানের ক্যালকুলেটর থেকে শুরু করে মঙ্গল গ্রহে আবর্তনকারী স্যাটেলাইট সবখানেই রয়েছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। প্রযুক্তির ব্যাবহার, নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হল কম্পিউটার।
নিখুঁত কার্যক্ষমতা, বিশাল তথ্য ধারন ক্ষমতা, দ্রুতগতি, সময় সাশ্রয়ের জন্য শিক্ষা, যোগাযোগ, গবেষণা, কলকারখানা, তথ্য ও বিনোদন সবকিছুই কম্পিউটারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পরছে।
যেসকল প্রোগ্রাম দ্বারা কম্পিউটার বা অন্যান্য উন্নত ডিভাইস পরিচালিত হয় তাকে বলা হয় সফটওয়্যার। যারা সফটওয়্যার উদ্ভাবন ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করেন তারা হলেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।
ক্যারিয়ার হিসেবে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর খুঁটিনাটি নিয়ে আজকের আয়োজন।
কেন ক্যারিয়ার গড়তে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার পড়বেন?
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বর্তমান সময়ের অন্যতম চাহিদার সাবজেক্ট। আপনার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া উচিত- কারণঃ
- অত্যন্ত ক্রিয়েটিভ একটা বিষয়। সৃষ্টিশীলতা যাদেরকে টানে, একইসাথে উজ্জ্বল এক ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন থাকে তাদের জন্য সফটওয়্যার ইঞ্জনিয়ারিং বিশেষ উপযোগী।
- সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজের ক্ষেত্র অনেক প্রশস্ত।
- চাকরির বাজারে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা অনেক।
- অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের স্যালারি রেঞ্জ অনেক বেশি।
- দলগত বা একা উভয়ভাবেই কাজ করার সুযোগ।
- প্রতিনিয়ত নিজের দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ কি?
- বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার ডিজাইন করা।
- ডেভলপারদের কোডিং এর জন্য বিভিন্ন ডায়াগ্রাম এবং মডেল সরবরাহ করা।
- প্রয়োজনীয় আপডেট এবং এডিটের মাধ্যমে একটা সিস্টেম বা অ্যাপ্লিকেশনকে কার্যকর রাখা।
- অন্য ইঞ্জিনিয়ার অথবা ডেভলপারদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করা।
- বিভিন্ন অনলাইন গেম বা আপ্লিকেশনের মেইনটেনেন্সের কাজ করা।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা
প্রযুক্তির বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বের সকল দেশই এখন তথ্য ও প্রকৌশলী খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশের সরকারি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ আছে।
এই বিষয়ে পড়ার জন্য একজনকে অবশ্যই এসএসসি এবং এইচএসসি তে বিজ্ঞান ব্যাকগ্রাউণ্ড থাকা চাই। গনিত, ইংরেজি এবং পদার্থবিজ্ঞানে ভালো থাকা অত্যাবশ্যক।
এসএসসির পর কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ডিপ্লোমা করেও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারনত ৪ বছর মেয়াদি বিএসসি ইন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু থাকে।
সরকারি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুযোগ পেতে হলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এসএসসি ও এইচএসসির রেজাল্টের ভিত্তিতে ভর্তি করা হয়।
পড়াশোনায় খরচ
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে সরকারিভাবে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা এবং বেসরকারিভাবে ৪ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকার মতো খরচ পড়তে পারে।
কাজের ক্ষেত্র
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের ক্ষেত্র অনেক প্রশস্ত।
- বিভিন্ন আইটি ফার্মে আইটি সলুশন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে
- বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য সফটওয়্যার ডিজাইনার হিসেবে
- অপারেটিং সিস্টেম, অ্যাপ্লিকেশন ও গেম ডেভলপার হিসেবে
- বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিস্টেম অপারেটর হিসেবে
- কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে গুগল, ফেসবুক, নাসার মতো জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরির সুযোগ
- ফ্রিলান্সার হিসেবে সফটওয়্যার তৈরি ও বিক্রয় করা যায়
- জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ
উচ্চশিক্ষা ও ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চশিক্ষা গ্রহনের ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার অপার সম্ভাবনা থাকে।
গ্রাজুয়েশন শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্কলারশিপ নিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করে আয় করা যায়।
আরোও পড়ুন-
- ক্যারিয়ার হিসেবে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কেমন হতে পারে
- পেশা হিসেবে ফিজিওথেরাপি কেমন
- সেনা সদস্য বা অফিসার হিসেবে কেমন হতে পারে ক্যারিয়ার?
স্যালারি
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা অন্যতম হাইলি পেইড প্রফেশনাল। তবে সেক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা, সৃষ্টিশীলতা ও দক্ষতার প্রশ্ন থাকে।
পাশ করার পর ফ্রেশার হিসেবে ১৫-৩০ হাজার টাকা বেতনে বিভিন্ন আইটি ফার্মে কাজ করা যায়।
অভিজ্ঞতা ও মেধার স্বাক্ষর রেখে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মাসে ৫০ হাজার থেকে ২ লক্ষ্য টাকা পর্যন্ত বেতন পেতে পারে। এটা আমাদের দেশের হিসেবে। দেশের বাইরে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মানেই সিক্স ডিজিটের স্যালারি।