সকল পেশায় অবশ্যই কাজে লাগবে এই একটি দক্ষতা

সকল পেশায় অবশ্যই কাজে লাগবে এই একটি দক্ষতা

একজন মানুষ তার ক্যারিয়ার যেই পেশায় বেছে নেয় না কেন, কিছু দক্ষতা সব সময় কাজে লাগে। এর মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতার নাম যোগাযোগ দক্ষতা। যোগাযোগে দক্ষ হলে সেই মানুষ ক্যারিয়ারে কোন ভাবেই পিছিয়ে থাকতে পারে না।

মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়া, ভালো একটা চাকরি করা, ব্যবসায় সফলতা অর্জন করা, সমাজে দশ জনের একজন হতে পারা সকল জায়গায় যোগাযোগে দক্ষ ব্যক্তি অন্য পাঁচ জনের থেকে এগিয়ে থাকে।

বর্তমান এই যুগে একজন মানুষকে দিয়ে জোড় করে ভালবাসা, সম্মান, বন্ধুত্ব আদায় করা যায় না। আপনার ব্যবহার, কথা বলার ধরন, ব্যক্তিত্বের মাধ্যমেই অন্যের মনে জায়গা করে নিতে হবে। কেউ যদি ভুল করে, আমরা সাথে সাথে বলি সে ভুল করেছে, তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলি, বা তাকে হেয় করার চেষ্টা করি।

এর মাধ্যমে যেই ব্যক্তি ভুল করেছে সে কখনোই নিজের ভুল সংশোধন করে নেয় না। যেমন, একটা অফিসে একজন বস যদি তার অধীনস্থ কর্মচারীকে বলে যে, আপনি এই কাজটাও পারেন না, কেন চাকরি করছেন, এটা তো খুব সামন্য একটা কাজ।

এই অবস্থায় ঐ কর্মচারী যত টুকু পারতো তাও ভুলে যাবে, নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে, কাজে মন দিতে পারবে না, দিন দিন হতাশ হয়ে যাবে। এই জায়গায় সেই বস যদি Sandwich Method ব্যবহার করে ঐ কর্মচারীর সাথে আচরণ করতো তাহলে এর ফলাফল ভাল আসত।

যোগাযোগ দক্ষতায় Sandwich Method খুবই ভালো কাজ লাগে। এটি এমন একটি Method বা পদ্ধতি যার মাধ্যমে একসাথে দুই কাজ হয়। যেমন, ঐ অফিসের বস এভাবে বলতে পারত, আপনি তো অনেক দিন ধরে দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন, তাহলে এখন কেন পারবেন না?

আপনার তো এই ধরনের কাজ করার অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান আছে, আপনি পারবেন। এর ফলে ঐ কর্মচারী সেই কাজটি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে করবে এবং নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করার চেষ্টা করবে।

এই যে, দুইটা ভালো কথার মধ্যে একটা নেগেটিভ কমেণ্ট করে অন্যকে অনুপ্রেরনা দেওয়া, একেই আমরা Sandwich Method বলতে পারি।

যোগাযোগ দক্ষতা উন্নত করনের জন্য আপনাকে You View অনুসরণ করতে হবে। You View এর মূল লক্ষ যখন আমরা কথা বলবো, বা কারো সাথে তথ্য আদান-প্রদান করব তখন নিজেদের থেকে আমাদের Audience দের বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

আমরা যা বলব, বা লিখবো তা Audience কিভাবে নিবে তার দিকে ফোকাস করতে হবে। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, Audience ছাড়া কোন communication বা যোগাযোগ হয় না।

communication বা যোগাযোগ নানা রকম হতে পারে, যেমন Verbal communication বা মৌখিক যোগাযোগ। এর জন্য আপনার সামনে Audience বা শ্রোতা থাকতে হবে, Audience এক জনও হতে পারে আবার ১০জনও হতে পারে। একজন সফল যোগাযোগকারী যখন কথা বলে তখন যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস নিয়েই কথা বলে।

একই সাথে যখন তার  Audience কথা বলে তখন মনোযোগ দিয়ে কথা শুনে। কথা বলার সময়, umm, so, অ্যা, yeah, like, হুম, ইত্যাদি শব্দগুলো কম ব্যবহার করতে হবে। এই শব্দগুলোর কারনে কথার গুরুত্ব আর থাকে না। ফলে Audience মনোযাগ হারিয়ে ফেলতে পারে ফল স্বরুপ সফল যোগাযোগ হতে পারে না। এর পরে আছে আমাদের Nonverbal communication.  

আরোও পড়ুন – নেতৃত্ব এবং যোগাযোগের দক্ষতা ৪টি অন্তর্দৃষ্টি

যা অন্যদের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য শরীরের ভাষা, অঙ্গভঙ্গি এবং মুখের অভিব্যক্তির ব্যবহার করাকে বোঝায়। অন্যের চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করার সময় অকথ্য যোগাযোগ সহায়ক ভূমিকা রাখে। এর পরে আছে আমাদের Written communication বা লিখিত যোগাযোগ ব্যবস্থা।

লিখিত ব্যবস্থায় দক্ষ মানেই এই না যে, আমাদেরকে অনেক কঠিন কঠিন, ভারি ভারি শব্দ ব্যবহার করতেই হবে। বরং যে কোণ লিখিত যোগাযোগে যত সহজ, ছোট এবং স্পষ্ট করা যায় ততই ভালো।

ধরুন, আমরা অনেক কঠিন কঠিন শব্দ দিয়ে একটা লিখিত যোগাযোগ করার চেষ্টা করলাম যা আমার Audience বুঝতে পারলো না তাহলে এই যোগাযোগের কোণ অর্থ থাকে না।

এর পরে আছে আমাদের ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশন। এই ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশন হল তথ্য জানানোর জন্য ফটোগ্রাফ, আর্ট, ড্রইং, চার্ট এবং গ্রাফ ব্যবহার করার কাজ।

আমরা যে ভাবেই যোগাযোগ করি না কেন, যোগাযোগে সফল হতে চাইলে আমাদের Audience দের নিয়ে ভাবতে হবে। বিশেষ করে, তাদের বয়স, Gender, অবস্থান, ব্যাকগ্রাউন্ড, সংস্কৃতি এবং আচার আচরন।

ধরে নিলাম, আমাদের মধ্যে কেউ খুব ভালো ইংরেজী জানে, এবং সব সময় সে এই ভাষায় যোগাযোগ করতে পছন্দ করে। এখন কোণ একটা কাজে তাকে গ্রামে যেতে হয় এবং সেখানে থেকে কাজ করতে হয় তাহলে সে যদি সেই গ্রামবাসীর সংস্কৃতি এবং আচার আচরন না বুঝতে পারে তাহলে সে কাজ করতে পারবে না।

এর মানে দাড়ায় আমাদের Audience বা শ্রোতা বা গ্রাহক বা আমাদের সহপাঠী কিংবা সহযোগী যেই হোক না কেন তাকে প্রথমে বুঝতে হবে সে কি চায় আমার কাছে বা আমি তার কাছে কি চাই।

যোগাযোগ  দক্ষতায় দক্ষ হলে চাইলে আমাদের কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রথমই যেই বিষয়টি আসে তা হলো, পরিপূর্ণ ম্যাসেজ বা বার্তা।

আমরা কি বলতে চাই সেই বিষয় অবশ্যই পরিপূর্ণতা থাকতে হবে। নিজের এবং Audience দের সময় ও মেধা গুরুত্ব দিয়ে পরিপূর্ণ ভাবে কথা বলতে হবে। দ্বিতীয় বিষয় হলো, সংক্ষিপ্ততা।

সময়ের মূল্য অনেক বেশি, যেই কথা দুই বাক্য শেষ করা যায়, সেই কথা আমরা যদি ১০ বাক্যে শেষ করি তাহলে সময়ের অপচয় হচ্ছে এবং Audience বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে।

যেমন অনেক সময় টিভি টকশোতে দেখা যায়, উপস্থাপন একটি প্রশ্ন করেছে আর অতিথি সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এর পিছনের গল্প শুরু করেছে, মূল বিষয়ে আসার আগেই উপস্থাপক জানিয়ে দেয় আপনার সময় শেষ। এর ফলে সেই অথীতি কি বলতে চাচ্ছিলো তা আর দর্শক বুজতে পারে না।

তৃতীয় যে বিষয় হচ্ছে তা হলো ভদ্রতা। যোগাযোগে দক্ষ হতে চাইলে আমাদেরকে বিনয়ী হতে হবে। কথায় বিনয়ী সুর থাকতে হবে।

কথা টোনে আক্রমণ সুর থাকা যাবে না। কথার মাধ্যমেই মানুষের মন জয় করা যায় আবার কথার মাধ্যমেই একটা যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। তাই আমাদেরকে সুনির্দিষ্টভাবে যোগাযোগ করতে হবে।

শেষকথা, communication আমাদের জীবনের একটা পার্ট এবং ব্যবসা বা চাকরি বা যে কোন ক্যারিয়ারে আমরা যত বেশি এই দক্ষতা নিজেদের মধ্যে ফুটিয়ে তুলতে পারব তত বেশি সফল হতে পারব, ইনশা-আল্লাহ।