শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে বছরে কত শতাংশ লাভের প্রত্যাশা করা উচিত

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে বছরে কত শতাংশ লাভের প্রত্যাশা করা উচিত

আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বে যারা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে তাদের সবার লক্ষ্য থাকে লাভ করা। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে কম ঝামেলা এবং অধিক স্বচ্ছতা আছে।

মাত্র ৫০০ টাকা দিয়ে একটি বিও একাউন্ট খুলে বাংলাদেশের যে কোন নাগরিক বিনিয়োগ শুরু করতে পারে। পড়ুন- কিভাবে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ শুরু করবেন 

শেয়ার বাজার লাভ করার জায়গা, লোভ করার জায়গা না।

যখনই এই লাভ অতিরিক্ত লোভে পরিনত হয়ে যায় তখন’ই ভুল সিদ্ধান্তের কারনে ভুল দামে একটা শেয়ার কিনে বিনিয়োগকারী লসের সম্মুখীন হয়।

যে কোন বিনিয়োগে লাভের পরিকল্পনা করতেই হবে। তবে সেই লাভ যেন লোভে পরিনত না হয় সেই দিক চিন্তা করতে হবে।

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে বছরে কত শতাংশ লাভের প্রত্যাশা করা উচিত এই প্রশ্ন জানার আগে আমাদেরকে বর্তমান অবস্থা বুঝতে হবে। দেশের অর্থনীতি বুঝতে চেষ্টা করতে হবে।

ধরুন, মিস্টার আকবর ৫ লাখ টাকা ১ বছরের জন্য একটি ব্যাংকে FDR করে রেখেছে। এক বছর শেষে, তিনি পাবেন খুব সম্ভবত ৫ লাখ ২৫/২৬ হাজার টাকা। ব্যাংকের সকল চার্জ এবং সরকারকে ফী দিয়ে তার টিকবে ৫ লাখ ২০/২২ হাজার টাকা।

ঐ দিকে যদি আমরা মুদ্রাস্ফিতি হিসাব করি তাহলে তার লাভের বদলে ৫ লাখ টাকা ১ বছরে FDR করার পরে তার লাভের বদলে লস হবে প্রায় ৪/৫ হাজার টাকা।

এবার  মিস্টার আকবর শেয়ার বাজারে আসলো বিনিয়োগ করার উদ্দেশ্য, আসার পর নানা মানুষের সাথে পরিচয় হলো, ব্রকার হাউসে কিছু দিন গেল, ফেসবুক এ টাকা দুইগুন তিনগুন লাভের বিজ্ঞাপন দেখলো।

সব মিলিয়ে সেও ঠিক করলে ৫ লাখ টাকাকে ১ বছরের মধ্যে ১০ লাখ করতেই হবে। এর ফলে সে অতিমুল্যায়িত শেয়ার কেনার জন্য আগ্রহী হয়ে গেল।

কেননা, সে ভাবল যেই শেয়ারের দাম ১ বছর আগে ছিল ১৫/১৬ টাকা আর এখন সেই শেয়ারের দাম ১২০/১২৫ টাকা।

এখন যদি আমি কিনি তাহলে অল্প দিনের মধ্যেই আমিও টাকা দুইগুন করতে পারব।

যেই কথা সেই কাজ, অতিরিক্ত লোভে পরে সে বিনিয়োগ শুরু করল এবং দেখা গেল, লাভের বদলে বিশাল পরিমান টাকা লসে পরে গেল।

যাওয়ার সময় শেয়ার বাজার ভালো না, টাকা নাই হয়ে যায়, ইত্যাদি বলে চলে গেল।

একই সাথে তার আশে পাশের মানুষও এটি শুনে শেয়ার বাজারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলল।

একবার ভেবে দেখুন, যেই লোক ব্যাংকে ৫/৬% ইনটারেস্টে খুশী ছিল আর এখন সেই লোকই ১ বছরে ২/৩গুন টাকা আশা করছে।

তাহলে এই অবস্থায় আমাদের করণীয় কি? আমরা বছরে কত শতাংশ লাভের প্রত্যাশা করব?

এখানে একজন আদর্শ বিনিয়োগকারীর তার বর্তমান ইনকাম, সঞ্চয়, আর্থিক অবস্থা, এককালীন বিনিয়োগ, চলমান বিনিয়োগ, ঝুঁকি ব্যবস্থপনা ইত্যাদি হিসাব করেই বার্ষিক লাভের প্রত্যাশা করা উচিত। এটা হতে পারে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ।

আমি বিশ্বাস করি, সঠিক ভাবে একজন বিনিয়োগকারী যদি মানি ম্যানেজমেন্ট করতে পারে তাহলে এই পরিমান লাভ করা যেতে পারে। অনেক সময় এর বেশিও আসতে পারে, যদি বেশি আসে তা আপনার জন্য বোনাস। এই বেশি পাওয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

আমরা প্রায় বলি ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ার থেকে দূরে থাকতে হবে। তাহলে একটা প্রশ্ন আসতেই পারে ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ার কি?

আসলে ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ার সেই শেয়ারকেই বলে যা অতিমূল্যায়িত। কোম্পানির পারফরমেন্স থেকে যখন যেই শেয়ার বেশি দামে লেনদেন হয় সেটাই  অতিমূল্যায়িত।

অনেক সময় এই ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ার কিনলে অল্প সময়ে কিছু লাভ করা যায় তবে যখন দাম কমা শুরু করে তখন এতটাই কমে যায় যে, সেখানে থেকে ঘুরে দাড়াতে বেশ সময় লাগে।

ধরুন, এক ভদ্রলোক ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম যাবে। সে বাস স্টেশনে না গিয়ে মেইন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।

অল্প সময়ের মধ্যে একটা চলন্ত বাসে সে লাফ দিয়ে উঠার চেষ্টা করল। সেই বাসে সিট রয়েছে কিনা, সে যেখানে যেতে চায় সেই পর্যন্ত যাবে কিনা ইত্যাদি না জেনেই উঠে গেল।

এখন এখানে দুইটা জিনিষ ঘটতে পারে, যেমন বাস থেকে তাকে নামিয়ে দিতে পারে, বা যেই পর্যন্ত তিনি যেতে চায় সেই বাস সেই দিকে যাবে না, অথবা তার গন্তব্যের সাথে মিলে যেতে পারে। যদি মিলে না যায় তাহলে থাকে আবার অন্য বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

এর পরিবর্তে সে যদি বাস স্টেশনে গিয়ে নিজের পছন্দ মত বাসে, টিকিট কেটে যেত, তাহলে তাকে আর অনিশ্চিতায় পড়তে হত না। তাই শেয়ার কেনার আগে আমাদেরকে এই ঝুঁকি বুঝে শেয়ার পছন্দ করতে হবে।

২ টাকা লাভের জন্য ১০ টাকার ঝুঁকি নেওয়া যাবে না।

শেয়ার বাজারকে আমরা টাকা কামানোর মেশিনের সাথে তুলনা দিতে পারি, তবে এর আগে সেই মেশিন চালানো শিখতে হবে।

বছরে ৩০/৩৫% প্রফিট কোন ভাবেই কম টাকা হতে পারে না। এই প্রফিট টার্গেট করে বিনিয়োগ করলে ইনশা আল্লাহ আমরা ভালো করতে পারব। ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল – Bangla Preneur YouTube Channel