শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে সফল হওয়ার ৪৬টি উপায়

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে সফল হওয়ার ৪৬টি উপায়

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে সফল হওয়ার ৪৬টি উপায়

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে সফল হওয়ার ৪৬টি উপায়

শেয়ার বাজার নামক মহাসমুদ্রে দু’চারটি উপায় অবলম্বন করে সফল হওয়া সত্যি চ্যালেঞ্জের। আপনার যত বেশি উপায় জানা থাকবে তত বেশি সফলতার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবেন।

তবে এই বিশ্বের কোন উপায়ই আপনাকে শতভাগ রিস্ক বা ঝুঁকি মুক্ত থাকার গ্যারিন্টি দিতে পারবে না। এই আর্টিকেলটি পড়ার পরে শেয়ার বাজার সফল হওয়ার গোপন সূত্র জেনে যাবেন না তা কিন্তু নয়, তবে কিছু চিন্তার খোরাক পাবেন তা আপনাকে সফল হতে সাহায্য করবে। 

স্টক মার্কেট বা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে সফল হওয়ার ৪৬টি উপায়

#১। শেয়ার বাজার সম্পর্কে ভুল ধারনা থাকলে বদলাতে হবে। যেমন প্রচলিত কিছু ভুল ধারনা, শেয়ার বাজার জুয়া খেলার মত, শেয়ার বাজারে শুধু  লস আর লস, শেয়ার বাজার অনেক বেশি কঠিন, শেয়ার বাজারে টাকা দুইগুন তিনগুন বানাতে সময় লাগে না, ভাগ্য ভালো হতে হবে ইত্যাদি। এর রকম ভুল ধারনা থেকে প্রথমেই বের হয়ে আসতে হবে।

#২। বেসিক ধারনা অর্জন করতে হবে। আপনি যদি একবারে সব কিছু জেনে এবং বুঝে তারপর শেয়ার বাজারে আসতে চান তবে কখনোই বিনিয়োগ শুরু করতে পারবেন না। কেননা, কিছু কিছু বিষয় বিনিয়োগ না করা পর্যন্ত কখনোই বুঝতে পারা যায় না। তাই ভালো ভাবে বেসিক জ্ঞান অর্জন করে শেয়ার বাজারে আসত হবে।

#৩। জানার আগ্রহ থাকতে হবে। জ্ঞান মানুষকে বড় করে এবং জ্ঞান নিতে না চাওয়া ধ্বংস করে। আপনাকে পুঁজি বাজার সম্পর্কে জানার আগ্রহ সফল হতে সাহায্য করবে।

#৪। ভালো ব্রকার হাউস নির্বাচন করা। যারা দীর্ঘ দিন ধরে এই ব্যবসার সাথে জড়িত, মানানসই কমিশন রেট, এবং ভালো আইটি সেবা দিতে পারে তাদের কাছেই বিও একাউন্ট খোলা উচিত।

#৫। বিনিয়োগের পরিমান বড় হলো, শুধুমাত্র শেয়ার ব্যবসার জন্য আলাদা ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা করা। এতে বছর শেষে, হিসাবের কোন গড়মিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।

#৬। কত টাকা বিনিয়োগ করবেন তা নির্ধারণ করা। এক কালীন টাকার সাথে মাসে মাসে বিনিয়োগ করতে পারলে পোর্টফোলিও পজিটিভ থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

#৭। বছরে কত শতাংশ লাভ আশা করবেন বলে আশা করছেন তার একটা পরিকল্পনা থাকা। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা অধিক লাভের আশা করলে ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ার নির্বাচন করতে হতে পারে।

#৮। অন্য বিনিয়োগকারীদের আগে সম্ভবনাময় শেয়ার খুঁজে বের করে বিনিয়োগে আসতে হবে।

#৯। প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির চেয়ে উঠতি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারলে অধিক লাভ আশা করা যেতে পারে।

#১০। যেই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করবেন তাদের ব্যবসা সম্পর্কে অবশ্যই জানতে হবে। তাদের পন্যের চাহিদা সম্পর্কে ধারনা রাখতে হবে।

#১১। কোম্পানির মালিকগন কেমন মানুষ, বা কারা এই কোম্পানির মালিক তা জানতে হবে। তাদের অন্য কোনো ব্যবসা আছে কিনা, যদি থেকে থাকে তাহলে সেইগুলোর বাজার পরিস্থিতি কেমন তাও জানতে হবে।

#১২। কোম্পানি কার টাকায় চলে, লোনের টাকায় না নিজের টাকায়, কত টাকা লোন আছে, লোন পরিশোধ করার সক্ষমতা আছে কিনা তা জানতে হবে।

#১২। কোম্পানির লাভ-লোকসান দেখতে হবে। এর থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ Cash Flow. যেসকল কোম্পানির ক্যাশ ফ্লো ক্রমাগত নেগেটিভ, সেসকল কোম্পানিতে বিনিয়োগে ঝুঁকি বেশি থাকে।

#১৪। ভুলে খারাপ শেয়ার বেশী দামে কিনে ফেললে, খুব তাড়াতাড়ি এভারেজ ডাউন না করে সময় দিতে হবে। আবার যখন দাম বাড়তে থাকে তখন কিনে এভারেজ করা যেতে পারে।

#১৫। কখনোই একটা কোম্পানিকে আবেগের কারনে ধরে রাখা যাবে না। কাক্ষিত ফলাফল পেলে সেই শেয়ার থেকে বের হয়ে যাওয়া উচিত।

#১৬। যেসকল কোম্পানিতে Sponsor Holding বেশি, অর্থাৎ, মালিক পক্ষের কাছে বেশি শেয়ার আছে, সাধারন চোখে সেই শেয়ার কম দামে কিনতে পারলে বেশি লাভবান হওয়া যেতে পারে।

#১৭। অন্যদের কাছে একটা কোম্পানি ভালো হওয়ার আগে আপনাকে সেই ভালো দিকগুলো খুজে বের করতে হবে।

#১৮। কোন একাটা কোঁম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা গৌরবের এবং সেই কারনে বিনিয়োগ করা থেকে দূরে থাকতে হবে।

#১৯। শেয়ার কেনাবেচার আগে Demand and Supply দেখে নিতে হবে। Demand and Supply সূত্র মতে, যে আইপিও যত বেশি Over Subscribed হবে সে শেয়ারের চাহিদা বেশি দিন থাকবে। যে দিন বোনাস বা রাইট শেয়ার ক্রেডিট হবে সেই দিন দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

#২০। যেই কোম্পানির শেয়ার সাধারন পাবলিকের কাছে কম থাকে সেই শেয়ারের দাম বেশি উঠানামা করে।

#২১। শেয়ার কেনার সময় ঠিক করতে হবে কত টাকায় সেই শেয়ারটি বিক্রি করবো এবং কোম্পানির কোন গুরুতর সমস্যা হলে স্টপ লস দিয়ে বের যাওয়া উত্তম।

#২২। যত টাকা বিনিয়োগ করবেন তা একসাথে না করে আস্তে আস্তে করলে ঝুঁকি কমে যাবে।

#২৩। একটা শেয়ার সেল করার দিনই নতুন শেয়ারে বিনিয়োগ না করে ২/১ দিন ক্যাশ টাকা বিও একাউন্টে ফেলে রাখুন, এতে ভালো সুযোগ পাওয়া যেতে পারে।

#২৪। কখনোই প্রতিযোগিতা করে শেয়ার কিনবেন না। ধরুন একটা শেয়ার ১৫০ টাকায় কিনতে চাচ্ছেন কিন্তু আজকে দাম বেড়ে হল ১৬০ টাকা। এই অবস্তায় প্রতিযোগিতা করে এই শেয়ার কিনলে লসের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে হ্যা, যদি কোম্পানির অনেক ভালো কোণ নিউজ থাকে তবে কেনা যেতে পারে।

#২৫। কখনোই নিজের টাকার দায়িত্ব ব্রকার হাউসের হাতে তুলে দিবেন না। অর্থাৎ, এটা বলা যাবে না যে, আপনারা যেটা ভালো মনে করেন সেই কোম্পানির শেয়ার কিনুন। নিজের টাকার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। এই অবস্থায় অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে তবে সিদ্ধান্ত নিজেকে নিতে হবে।

#২৬। সেকেন্ডারী বাজারে বিনিয়োগে সাথে সাথে আইপিওতে আবেদন করতে ভুলবেন না। কেননা আমাদের দেশে আইপিও মোটামুটি শতভাগ রিস্ক ফ্রী।

২৭#। আপনার কোন এক বন্ধু একটা শেয়ার কিনেছি তার দেখাদেখি আপনিও যদি কিনেন তাহলে সব সময় ভালো ফলাফল নাও আসতে পারে। এমন হতে পারে আপনার বন্ধু এভারেজ করার জন্য এখন কিছু শেয়ার কিনলো আর আপনি সেই শেয়ারে নতুন করে বিনিয়োগ শুরু করলেন। তাই অন্ধ অনুকরন করা যাবে না।

#২৮। শেয়ার থেকে লাভের টাকা যদি আবার বিনিয়োগ করতে চান তবে, কিছুদিন সময় নিয়ে মোটামুটি ঝুঁকি কম সেই শেয়ারে বিনিয়োগ করুন।

#২৯। কখনোই একটা শেয়ারে সকল টাকা বিনিয়োগ করা যেমন ঠিক না তেমনি অনেক শেয়ারে বিনিয়োগ করাও ঠিক না। টাকার পরিমান ৫০ লাখ বা এর বেশি হলে আমার চোখে ৬/৭টির বেশি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা ঠিক না।  

৩০# যে কোন কোম্পানির নিউজের এর জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটের নিউজের উপর আস্তা রাখুন। বিভিন্ন খবরের নিউজ আসলেও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে না আসা পর্যন্ত সেই নিউজ এর সত্যতা প্রকাশ পায় না।   

#৩১। একটা শেয়ার টানা ৪-৫ দিন দর বেড়েছে মানে এখন দাম কমবেই বা ৪-৫ দিন দাম কমেছে মানে এখন দাম বাড়বেই এই যুক্তিতে শেয়ার কিনলে লস হতে পারে।

#৩১। নিজের টাকা না থাকলে কখনোই ধার কিংবা লোন করে শেয়ার কেনা যাবে না। এমনকি মার্জিন লোণ থেকেও শতভাগ দূরে থাকতে হবে। মার্জিন লোনের যাতাকলে অনেক বড় বিনিয়োগকারীরাও হতাশ হতে পারে।

#৩২। যে শেয়ারে সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে, তার জন্য আফসোস করা বা তার পেছনে না ছুটাই ভালো। উক্ত শেয়ারের কারেকশন এর জন্য অপেক্ষা করুন, অথবা নতুন সুযোগের জন্য অপেক্ষা করুন। মনে রাখবেন আপনি অপেক্ষা করলে সুযোগ আপনার কাছেই আসবে।

#৩৩। শেয়ার বাজারে যারা বিনিয়োগ করে তারা সবাই মানুষ, এবং প্রতিটি মানুষের চিন্তা-ভাবনা কখনোই এক না। একজন বিনিয়োগকারী হিসাবে অন্য বিনিয়োগকারীদের সাইকোলজি বুঝতে পারলে ভালো ফলাফলা পাওয়া যেতে পারে।

#৩৪। টাকা আয়ের একমাএ পথ হিসাবে শেয়ার বাজারকে না নেওয়াই ভালো। প্রথম পেশা হিসাবে এখানে আসতে চাইলে যথেষ্ট টাকা এবং অভিজ্ঞতার বিকল্প থাকে না।

#৩৫। ভালো কোম্পানি এবং ভালো শেয়ারের মধ্যে পার্থক্য আছে। ভালো কোম্পানি মানেই যে ভালো শেয়ার তা ভাবা যাবে না, একই সাথে খারাপ কোম্পানি মানেই যে খারাপ শেয়ার তাও ভাবা যাবে না।

#৩৬। আপনার পরিবেশ আপনার চিন্তা চেতনাকে প্রবাহিত করে । তাই এমন কারো সাথে শেয়ার মার্কেট নিয়ে আলোচনা করবেন না যার মার্কেট নিয়ে কোন ধরনা নেই, কিংবা নেগেটিভ ধারনা প্রেষন  করে। এদেরকে এড়িয়ে চলুন।

#৩৭। ক্ষেত্র বিশেষ, কোন কোম্পানি যদি বেশ কিছু বছর লসে থাকে এবং দাম অনেক কম থাকে এবং আস্তে আস্তে লস কমে লাভের দিকে যাচ্ছে এই অবস্থায় বিনিয়োগ করতে পারলে ভালো ফলাফল আসতে পারে।

আরো পড়ুন-

#৩৮। যেই পন্যের চাহিদা খুব বেশি বাড়ে না বা কমেও না, সারা বছর একই রকম চাহিদা থাকে, সেই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে লসের সম্ভবনাও কম হতে পারে।

#৩৯। একজন সফল বিনিয়োগকারী হিসাবে আপনাকে supply and demand নিয়ে ধারনা রাখতে হবে। কি কি কারনে supply বাড়ে এবং কি কি কারনে Demand বাড়ে তার ধারনা থাকতে হবে।

#৪০। শেয়ার বাজারে প্রায় ২১টি সেক্টর এ ৩৫০টি অধিক কোম্পানি ও ফান্ড আছে। একজন সফল বিনিয়োগকারী কখনোই সকল সেক্টরে বিচরন করে না।

#৪১। মুনাফা অর্জনের জন্য বিনিয়োগের আকার বাড়ানোর মানসিকতা থাকতে হবে।

#৪২। কোনো কোম্পানির ভালো কোন ডেভিডেন্ট দিতে পারে, বা ভালো একটা লাভের আশা করছে, এর অবস্থায় ঐ আশাবাদ শেষ হবার আগেই শেয়ার বিক্রয় করলে লাভ পাওয়া যায়।

#৪৩। বিনিয়োগে ভুল হলে ভুল স্বীকার করে নিতে হবে, অভিমান বা জেদের কারনে ভুলকে আরো গুরুতর হতে দেওয়া যাবে না।

#৪৪। বাজারে আসা সম্ভবনাময় নতুন শেয়ারকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত, কেননা এই কোম্পানিতে ঝুঁকির উপাদান তুলনামূলক কম থাকে।

#৪৫। টাকা আপনার, লাভ আপনার, লসও আপনার। আপনি যত বেশি ঝুঁকি বা রিস্ক এড়াতে পারবেন তত বেশি লাভ করতে পারবেন। ইনশা-আল্লাহ। ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল – Bangla Preneur YouTube Channel