একসাথে দুইয়ের চাষঃ মাছ ও হাঁস

একসাথে দুইয়ের চাষঃ মাছ ও হাঁস চাষ 

একসাথে দুইয়ের চাষঃ মাছ ও হাঁস

হাঁস পালনে জন্য পানি দরকার। (পানি ছাড়াও হাঁস পালন করা যায়) আর তার জন্য দরকার ডোবা, নালা, পুকুর, দীঘি ইত্যাদি। আমাদের অনেকের চাষের জমি নাই। হয়তো আছে একটি ডোবা। এসব ডোবা সবসময় কচুরীপানায় ভরা থাকে। এতে হাজার হাজার মশা জন্মে। তাতে সকলেরই ক্ষতি হয়।

 

অথচ ইচ্ছে করলেই এসব ডোবায় আমরা হাঁস পালন করতে পারি। মাছ চাষ করতে পারি। আবার হাঁস ও মাছ একসাথে চাষ করা যায়। মাছ, হাঁস ও হাঁসের ডিম বিক্রি করলে আমাদের বাড়তি আয়ের সুযোগ হবে। সেই একই সাথে মাছ, হাঁস ও ডিম থেকে আমাদের আমিষের ঘাটতি পূরণ হবে।

 

হাঁস ও মাছ একসাথে চাষ করলে অনেক লাভ। খরচ অনেক কম। হাঁস ছোট মাছ, ঝিনুক, শামুক এসব খায়। আর ডোবার জমা হয় হাঁসের মল।

হাঁসের মল মাছের খাবার এর এক অংশ পুরন করতে পারেন। যা লাভবান হতে বেশী কাজে লাগে। তাই আমরা একসাথে হাঁস পালন ও মাছ চাষ করতে পারি। জেনে নিন – হাঁসের খামার ব্যবসা শুরু করার ১০টি কারন

 

আসুন আমরা একটি ছোট কেস স্টাডি করি। রসুলপুর একতা সমিতির সদস্য কদম আলী। তিনি একসাথে হাঁস ও মাছ চাষ করেছেন। এখন তার পরিবারের আয় বেড়েছে বহুগুন। আমারা কদম আলীর হাঁস ও মাছ চাষের কথা শুনব।

একসাথে দুইয়ের চাষ – মাছ ও হাঁস – কদম আলীর কথা

কদম আলীর চাষের কোন জমি নেই। বসত বাড়ির ভিটে টুকু ছাড়া আছে একটি ডোবা। একদিন সমিতির সভায় মৎস অফিসার কদম আলীকে একসাথে মাছ চাষ ও হাঁস পালনের কথা বললেন। এই কথা শুনে কদম আলী অবাক হন।

 

কদম আলীঃ বলেন কী? ডোবা ছাড়া আমার তো কোন জমি নেই। আমি কিভাবে মাছ ও হাঁস চাষ করব? অফিসার কদম আলীর ডোবায় একসাথে হাঁস ও মাছ চাষ করতে হবে সে কথা বোঝালেন।

 

অফিসারঃ একসাথে মাছ ও হাঁস পালন করতে হলে প্রথমেই কিছু কাজ করতে হয়।

 

কদম আলীঃ কী কাজ?

 

অফিসারঃ তিনটি কাজ করতে হবে- ১। কচুরীপানা পরিস্কার করতে হবে, ২। ডোবায় চুন দিতে হবে। তারপর অন্য জায়গা থেকে পানি এনে ডোবায় নতুন পানি দিতে হবে। ৩। চুন দেওয়ার ৭দিন পর মাছ ছাড়তে হবে।

 

কদম আলীঃ আর হাঁস পালন?

 

অফিসারঃ ডোবা ঠিক করার পর হাঁসের ঘর বানাতে হবে। আপনার ডোবার জমির পরিমান তিন শতাংশ হলে আপনি ২৫টি হাঁস পালন করতে পারেন। তবে হাঁসের ঘর ১০ ফুট লম্বা এবং ৭ ফুট চওড়া হতে হবে।

অবশ্যই পড়বেন – হাঁসের বাসস্থান কেমন হওয়া উচিত

আর তিন শতাংশ ডোবার জন্য তিন কেজি চুন দিতে হবে। হাঁসের ঘরে আলো বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা রাখতে হবে, জায়গা কম হলে হাঁস ঠিক মত বাড়বে না। ডিমও দেশি দেবে না। হাঁসের ঘর হবে ডোবার উপরে এতে সহজেই হাঁসের মল পানিতে পরবে যা মাছের ভাল খাবার। অফিসার কদম আলীকে কিছু কাগজ দিয়ে বললেন, এগুলো ভালভাবে পড়বেন।

 

কদম আলীঃ এতে কী লেখা আছে?

 

অফিসারঃ এতে হাঁস পালন এবং মাছ চাষের বিষয়ে অনেক কিছু লেখা আছে, বুঝতে অসুবিধা হলে আমাকে বলবেন আমি সাহায্য করব।

 

টাকা পাব কোথায়? অফিসারের দেয়া কাগজগুলো কদম আলী বাড়ি নিয়ে এলেন। তার বউ আমেনা বেগম কাগজগুলো দেখে এগিয়ে এলেন। কদম আলী আমেনাকে পেপারগুলো দিলেন এবং বিকালে দুইজন মিলে পড়লেন।

 

কাগজ গুলো আমেনার বেশ ভাল লেগেছে এবং দুই জন মিলে কিছু একটা করবে। পরের দিন তাদের সমিতিতে ঋণের জন্য আবেদন করে এবং প্রয়োজনীয় টাকা দিয়ে তাদের নতুন ব্যবসা শুরু করেন।

 

একদিন ডোবায় হাঁসের মল ফেলার সময় আমানে মনে মনে হাঁসতে লাগলেন, এমন সময় এলেন কদম আলী।

 

কদম আলীঃ কী ব্যাপার একা একা হাসছ যে?

 

আমেনাঃ ভাবছি কী মজার ব্যাপার! হাঁসের মল আবার মাছের খাবার!

 

কদম আলীঃ হ্যাঁ তাই। মাছকে বেশি একটা খাবার দিতে হয়না, কিন্তু হাঁস যাতে ডিম দেয় সে জন্য হাঁসকে সুষম খাবার দিতে হবে।

হাঁসের সুষম খাবার বানানোর নিয়মঃ

খাদ্য উপাদান পরিমান (গ্রাম)
গম ভাঙ্গা বা চালের খুদ ১০০০ গ্রাম
গমের ভুষি ১২৫ গ্রাম
চালের কুড়া ৬২৫ গ্রাম
শুটকি মাছের গুড়া ২৫০ গ্রাম
ঝিনুকের গুড়া ১৫০ গ্রাম
লবন ১০ গ্রাম
খৈল ৩০০ গ্রাম
সুষম খাদ্য ২৪৬০ গ্রাম

আনুমানিক আড়াই কেজি


প্রতিদিন দুইবার হাঁসকে এই খাবার দিতে হবে। খাবারের সাথে সামান্য পানি মিশিয়ে দিতে হবে। তাছাড়া আলাদা পাএে পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে। ঠিকমত সাহের যন্ত নিতে হবে। রোগ থেকে রক্ষা পেতে পশুচিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিতে হবে। একটি হাঁসকে বছরে কমপক্ষে একবার টিকা দিতে হবে।